জেলা প্রতিনিধি
১২ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৩৫ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২৬ বছর বয়সী সাজু ইসলাম প্রথম বাবা হওয়ার খবর পেয়েছিলেন। খুশিতে তখন প্রথম সন্তানের নাম রেখে ছিলেন পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ আবু সাঈদের সঙ্গে মিলিয়ে। তখন হয়তো কেউ ধারণাও করেননি মাত্র ১৫দিন বয়সে বাবা হারা হতে হবে নতুন আবু সাঈদকে। যে শিশু বড় হয়ে জানবে তার বাবাও আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তারপর ছয়দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে মারা গেছেন।
সাজু ইসলামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের টোকরাভাষা মিরপাড়া গ্রামে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয়ের দিন ৫ আগস্ট আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে ময়মনসিংহে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোববার (১১ আগস্ট) দিবাগত রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় তার।
সোমবার (১২ আগস্ট) ময়মনসিংহ থেকে ছেলের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্স করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন তার বাবা আজহার আলী। বিকেল ৫টার দিকে গ্রামের বাড়িতে তার জানাজা নামায অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন—
সাজু ২০১৫ সালে টোকরাভাষা তহিবননেছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছিল। ৪ থেকে ৫ বছর ধরে গাজীপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সাজু। সেখানে একাই থাকতেন। পরিবার থাকতো গ্রামে। সাজুর বাবা আজহার আলী রিকশাচালক। চার ভাই-বোনের মধ্যে সাজু বড়। গত দেড় বছর আগে বিয়ে করেন সাজু। দাম্পত্য জীবনে তার ১৫ দিন বয়সী একটি ছেলে সন্তান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুরের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর তার ছেলে হলে নাম রাখা হয় আবু সাঈদ। সাজুর দুই বোন নাজমুন নাহার, নিলুফা আক্তার ও ছোট ভাই রাজু আহম্মেদ। এদের মধ্যে দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট ভাই লেখাপড়া করছে।
চাচাতো ভাই মাহবুব জানান, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সরকার পতনের দিন গাজীপুর মাওনা থেকে একটি মিছিল বের হয়েছিল। ছাত্রজনতা মিছিলটি নিয়ে গণভবনের দিকে রওনা হয়। ওই সময় ময়মনসিংহ থেকে সাতটি পিকআপ করে বিজিবি ও কিছু পুলিশ এসে গুলি করতে থাকে। ওই গুলি দুই দফা সাজুর পিঠে লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে প্রথমবার অপারেশন করা হয়। কিন্তু সফল না হওয়ায় দ্বিতীয়বার অপারেশনে গুলি বের করা হয়। ৫ আগস্ট থেকে সাজু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার দিবাগত রাতে সে মারা যায়। সাজুর মৃত্যুতে পরিবারে বইছে শোকের মাতম।
আরও পড়ুন—
গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সহ যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়ক আসাদুজ্জামান নুর আসাদ গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যু্বলীগের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিন পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়।
প্রতিনিধি/একেবি