জেলা প্রতিনিধি
০১ আগস্ট ২০২৪, ০১:২১ পিএম
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে মাদরাসা থেকে ছোট ভাইকে আনতে গিয়ে পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন চিকিৎসক বড় ভাই। তাদের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানায়। থাকতেন জেলা শহরের জেলখানা মোড় এলাকার একটি ভাড়া করা ফ্ল্যাটে।
নিহত চিকিৎসকের নাম সজীব সরকার (৩০)। ছেলেকে হারিয়ে মা ঝরনা বেগমের অবস্থা পাগলপ্রায়। অসুস্থতা, আহাজারি আর শোক-বিলাপে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। বলছিলেন, ‘ছোট ভাইকে বাড়িতে নিয়ে আসি—বলে সেদিন ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়েছিল। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকেও তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। এরপর তাকে আর ফোনে পাইনি। রাত ১টা পর্যন্ত ছেলের অপেক্ষায় বসে ছিলাম। পরে শুনি, গুলিতে ছেলে মারা গেছে। আমার ডাক্তার ছেলেকে তারা গুলি করে মারবে কেন?’
সজিব গুলিবিদ্ধ হয়েছেন রাজধানীর উত্তরায়। ১৮ জুলাই আজমপুর এলাকায় পৌঁছার পর অন্য যাত্রীর সঙ্গে তাকেও বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। অদূরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। সেখান থেকে তার ছোট ভাই আবদুল্লাহ সরকারের মাদরাসার দূরত্ব মাত্র পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ। হেঁটে হেঁটে মাদরাসাটির উদ্দেশে রওনা হলে গুলি লেগে ঘটনাস্থলে নিহত হন সজীব।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ছেলের মৃত্যুর ঘটনার বর্ণনায় গতকাল বুধবার এসব বলেন সজীবের বাবা হালিম সরকার। সজীবের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের মেঝেরকান্দি গ্রামে। তিনি বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর এলাকার কেয়ার হাসপাতালে রোগী দেখতেন।
গত ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৫টার কাছাকাছি সময়ে রাজধানীর উত্তরায় সজীবকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে বলে দাবি করেন হালিম সরকার। তিনি বলেন, ‘সজীব কোনো দল করত না, কোটা আন্দোলনেও যায়নি, তাকে এভাবে কেন হত্যা করা হলো?’
আরও পড়ুন—
ওই দিন (১৮ জুলাই) মোবাইলফোনে সজীবের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়ে পুরো পরিবার। খবরটি বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল, ঢাকায় ছুটে যান তার ছোট বোন সুমাইয়া সরকার। তিনি বলেন, ‘ওই রাতে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কল করে একজন বলেন, সজীব সরকার আপনার ভাই? তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। হাসপাতালে গিয়ে ভাইয়াকে আর খুঁজে পাই না। দীর্ঘ সময় পর সেখানকার লোকজন দুটি লাশ দেখিয়ে বলেন, এখানে আছে কি না দেখেন তো? দেখি ভাইয়ার গুলিবিদ্ধ লাশ। পরে রাতেই তার লাশ নিয়ে ছোট ভাই আব্দুল্লাহকে নিয়ে বাড়ি ফিরি।’
উত্তরার একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করত আবদুল্লাহ সরকার। আন্দোলনকে ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে তাকে সেখান থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে যান সজিব। তবে আবদুল্লাহ বাড়ি ফিরলেও সজিব আর ফিরতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে আফসোস করছিল আবদুল্লাহ। সে জানায়, ‘আমাকে আনতে গিয়েই ভাইয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন। অথচ সেই আমিই বোনের সঙ্গে রাতে ভাইয়ার লাশ বাড়ি নিয়ে এসেছি, তার জানাজা আমি পড়িয়েছি।’
প্রতিনিধি/একেবি