images

সারাদেশ

বগুড়ায় আ.লীগ কার্যালয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা

জেলা প্রতিনিধি

২৫ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাংচুর, হামলা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা, সদ্য পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া ছাত্রলীগ নেতা, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, দু’টি বেসরকারি পলিটেকনিকের অধ্যক্ষ, পরিচালকসহ অনেককেই। এর মধ্যে ৬৮ বছর বয়সী এক নারী কাউন্সিলরকেও আসামি করা হয়েছে। 

গত সোমবার (২২ জুলাই) রাতে জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক খালেকুজ্জামান রাজা বাদী হয়ে ৮৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও দেড়শ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।

আরও পড়ুন: বরিশালে বিএনপি-জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতাসহ গ্রেফতার ১৩

মামলায় ৬৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে বগুড়া পৌর আওয়ামী লীগের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও শহর যুবলীগের রহমান নগর আঞ্চলিক কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুল হক কাজলকে। তিনি শহরের বিআরটিসি শপিং কমপ্লেক্সের সভাপতি। ওই মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন আকরামকেও আসামি করা হয়েছে। অথচ তার নিজের ও শ্বশুর পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তার আপন ভাই বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
 
ওই মামলার আরেক আসামি আবু বক্কর সিদ্দিক বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সদস্য বলে জানিয়েছেন, ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারী। ওই মামলায় ১২ নম্বর আসামি জাকি তাজওয়ার সমুদ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক ছিলেন। তিনি বগুড়া শহরের সাতমাথায় জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গত ১৬ জুলাই রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে ১৪ মামলায় আসামি ৩৫০০

ওই মামলার আসামিদের মধ্যে আরও রয়েছেন জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাওন পাল। অথচ হামলার সময় জেলা ছাত্র ইউনিয়ন ও কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয়ও আক্রান্ত হয়। 

মামলায় বগুড়ার বিআইআইটি নামক বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ সাহাবুদ্দিন সৈকত ও আইআইটিবির পরিচালক সবুর শাহ লোটাসকেও আসামি করা হয়েছে। এছাড়া বগুড়া পৌরসভার নারী কাউন্সিলর ৬৮ বছর বয়সী শিরিন আক্তারকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।

দলীয় কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় আসামি হওয়াকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ নেতা কাজল বলেন, ‘ঘটনার সময় আমিসহ সাধারণ সম্পাদক এবং কমিটির অন্য সদস্যরা মার্কেট রক্ষা নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম।

দোকানপাটে হামলা এবং লুটপাট ঠেকাতে সবাই মিলে মার্কেটের ভেতরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভকারীদের মার্কেটে প্রবেশ বন্ধ করে দেই। অথচ আমি নিজে যে দলের সদস্য, সেই দলীয় কার্যালয় পোড়ানোর ঘটনায় আসামি হওয়া খুবই লজ্জাজনক মনে হচ্ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাকি তাজওয়ার সমুদ্র বগুড়া জিলা স্কুলের ২০১৯ সালের এসএসসি ব্যাচ এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজের ২০২১ সালের এইচএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা মাহতাব উদ্দিন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের গণিত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। 

জাকি তাজওয়ার ঘটনার সময় বগুড়ায় ছিলেন উল্লেখ করে সাংবাদিকদের জানান, ‘জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের কারণেই তাকে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় পোড়ানো মামলার আসামি করা হয়েছে, এমনটা হয়তো না-ও হতে পারে। কেউ হয়তো আওয়ামী লীগ নেতাদের ভুল বুঝিয়ে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সাতমাথা এলাকায় অনেক সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। সেসবের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা উচিত ছিল। ওই দিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে।’

ওই মামলার আসামি জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘অভিযোগটি খুবই হাস্যকর। কারণ, একই ভবনে আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং আমাদের কার্যালয় অবস্থিত। হামলা এবং অগ্নিসংযোগে শুধু আওয়ামী লীগ অফিসই না, ছাত্র ইউনিয়ন এবং কমিউনিস্ট পার্টির অফিসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মামলা দেখে তো মনে হচ্ছে, আমরা নিজেদের অফিসেই হামলা করেছি।’

ওই মামলায় বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার ছাড়াও বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ ৮৭ জনের নাম আছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, এজাহারনামীয় আসামি ছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় ১০০ থেকে ১৫০ আসামি দেশি অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়ে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। তারা কার্যালয়ের মালামাল লুট করেন। এছাড়া পাশের টাউন ক্লাব ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এবং সামনের অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেন।

মামলার বাদী জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক খালেকুজ্জামান রাজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘দলের উপ-দপ্তর সম্পাদক হিসেবে আমাকে বাদী করা হয়েছে। মামলায় আসামিদের বিষয়ে দলীয় সভায় সিদ্ধান্তক্রমে নাম দেওয়া হয়েছে।’

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগ থেকে লিখিত যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেটিই মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্তকালে যাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে না, তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে।’

প্রতিনিধি/ এমইউ