images

সারাদেশ

২ বিধবাকে লাখপতি বানালো সৈয়দ হারুন ফাউন্ডেশন

জেলা প্রতিনিধি

২১ জুন ২০২৪, ০৯:০৪ পিএম

নোয়াখালীর সেনবাগে বিভিন্ন সহযোগিতার পাশাপাশি এলাকায় ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণের সময় প্যাকেটে একটি করে টোকেন দেওয়া হয়। সেই টোকেনের একটি অংশ থাকে বিতরণকারীদের কাছে। সেসব অংশগুলো নিয়ে ঈদের পরের দিন ফাউন্ডেশনের সদস্য ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে লটারি অনুষ্ঠিত হয়। লটারির মাধ্যমে দু’জনকে বাছাই করে তাদের এক লাখ করে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়। 

এভাবে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কাজের মাধ্যমে সমাজের হতদরিদ্র অসহায় মানুষদের স্বাবলম্বী করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে সৈয়দ হারুন ফাউন্ডেশন। অন্যান্য সংগঠন থেকে ব্যতিক্রমধর্মী কার্যক্রমের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে নোয়াখালী সেনবাগ উপজেলার ৫ নম্বর অচর্জুনতলা ইউনিয়নের সৈয়দ হারুন ফাউন্ডেদশন।

আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় বন্যার্তদের জন্য যেসব বরাদ্দ মিলছে

ঈদের পরের দিন এমন কার্যক্রম পরিচালনা করে সংগঠনটি। সংগঠনের আহ্বায়ক মো. ইসহাকের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সদস্য সচিব রমজান আলী মাসুমের সঞ্চালনা এ সময় উপস্থিত ছিলেন - সৈয়দ হারুন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লায়ন সৈয়দ হারুন, ৫ নম্বর অর্জুনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন রিপন, ছিলোনিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার, টপ স্টার গ্রুপের পরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন মিন্টু, সৈয়দ হারুনের জামাতা ব্যাংকার স্মৃতি স্মরণ্য, বিশিষ্ট সমাজসেবক আবু ইউছুপ মজুমদার ও নিজাম উদ্দিন চৌধুরী। 

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন - সৈয়দ হারুনের সহধর্মিণী সৈয়দা শেলী, সৈয়দ হারুনের বড় মেয়ে সৈয়দা শারমিন আক্তার, ছোট মেয়ে সৈয়দা তনিমা তাসনিম, সংগঠনের ওয়ার্ড প্রতিনিধি সদস্যরা এবং লাখপতি প্রজেক্টের স্বপ্নদ্রষ্টা সৈয়দ হারুনের ছেলে সৈয়দ রাহাত।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক লায়ন সৈয়দ হারুন স্বপ্ন দেখতেন যে নিজের সফলতার পাশাপাশি এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করার। সে কারণে তিনি সমাজের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জন্য গড়ে তুলেছেন বিনামূল্যে শিক্ষা কার্যক্রম, বিশেষ দিন ও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে করে যাচ্ছেন নানান ধরনের সহযোগিতা। তারই অংশ হিসেবে তিনি গত কয়েক বছর আগে শুরু করেন লাখপতি প্রজেক্ট। এর মাধ্যমে তিনি প্রতি ঈদে একজন ব্যক্তিকে ১ লাখ টাকা দিয়ে তাকে স্বাবলম্বী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে আরও একজন করে বাড়িয়ে তা দু'জনে নিয়ে আসা হয়। এর আগে সেনবাগ উপজেলার অর্জুনাতলা ইউনিয়নের প্রথম লাখপতি নির্বাচিত হয় হতদরিদ্র রকি উল্লাহ, দ্বিতীয় লাখপতি হন আব্দুল হক স্বপন এবং তৃতীয় লাখপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন জোছনা বেগম।

সে কর্মসূচির আওতায় এবার সেনবাগ উপজেলার ৫ নম্বর অর্জুনতলা ইউনিয়নের ইদিলপুর গ্রামের বিধবা মনি বেগমকে চতুর্থ লাখপতি ও পঞ্চম লাখপতি হিসেবে ছিলোনিয়া গ্রামের বিধবা তাসলিমা বেগমকে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়। এই টাকা দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা হবে পরিবার দু’টিকে। আর তা তদারকির দায়িত্বে থাকবে সৈয়দ হারুন ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার পরে ভাগ্যবান সেই ব্যক্তিদের তাদের বাড়ি থেকে সৈয়দ হারুনের নিজস্ব গাড়িতে করে সসম্মানে সৈয়দ মঞ্জিলে নিয়ে আসা হয় এবং অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করা হয় তাদের।  

আরও পড়ুন: ‘বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হলে আশ্রয়কেন্দ্র ও খাদ্য সহায়তা বাড়ানো হবে’

যাদের ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ এমন মানুষেরা হঠাৎ লাখ টাকা পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। যা তারা কখনও কল্পনাও করতে পারেননি। এ সময় তারা সৈয়দ হারুন ফাউন্ডেশনের এমন কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। 

এ কার্যক্রমকে সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য প্রতি এক বছর পরপর ফাউন্ডেশনের কার্যকরী কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব নির্বাচিত করা হয়। একইসাথে বিগত সময়ের দায়িত্ব পালনকারীদেরও বিদায় জানানো হয় সম্মানের সঙ্গে। এবার সৈয়দ হারুন ফাউন্ডেশনের নতুন কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছেন মো. জাবের এবং সদস্য সচিব নির্বাচিত হয়েছেন কাউছার আহম্মেদ।

এছাড়াও লায়ন সৈয়দ হারুনের ব্যতিক্রমধর্মী চিন্তা-চেতনায় অনুকরণযোগ্য বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে 'ইচ্ছে পূরণ' নামে নতুন একটি সহায়তা প্রকল্প চালু করা হয়। এর অধীনে কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের স্বপ্নের বাজার করার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। যা নিয়মিত চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন সৈয়দ হারুন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মূলত সমাজের অসহায় হতদরিদ্র নিম্নবিত্ত মানুষদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করে চার পরিবারকে তাদের নিজেদের ইচ্ছেমতো বাজার করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এতে করে অসহায় পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা যে সব পণ্য ক্রয়ের কথা কোনো দিন ভাবেননি, সেসব খাদ্যপণ্য কিনে দেওয়া হয়েছে। বাজারের সবচেয়ে বড় মাছ, সবচেয়ে বড় মুরগি বা বাজারের সবচেয়ে বড় পছন্দের জিনিসটা কেনার সুযোগ করে দেওয়া-সহ তার ইচ্ছে পূরণ করা হয়। সৈয়দ হারুন ফাউন্ডেশন এই সুযোগ করে দেওয়ায় খুশিতে আত্মহারা এই হতদরিদ্র মানুষগুলো।

ব্যতিক্রমধর্মী এমন আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে সৈয়দ হারুন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন মো. সৈয়দ হারুন বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে সফলতা দিয়েছেন এবং যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ দিয়েছেন। আমি সব সময় চেষ্টা করতাম অসহায় মানুষের পাশে থাকতে। গতানুগতিক কাজের চেয়ে ব্যতিক্রম কাজ করতে আমি বেশি পছন্দ করতাম। সেই লক্ষ্যে একটি ফাউন্ডেশন করে তার মাধ্যমে এই কার্যক্রমগুলো করে যাচ্ছি। এভাবেই এক দিন সমাজটা বদলে যাবে বলে বিশ্বাস তার।

প্রতিনিধি/ এমইউ