images

সারাদেশ

ঈদের দিনে ভারী বৃষ্টিতে ভাসল সিলেট

জেলা প্রতিনিধি

১৭ জুন ২০২৪, ০৫:৫৪ পিএম

ঈদের দিনেও ভারী বৃষ্টিতে ভাসল সিলেট। সোমবার ভোর থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয় সিলেট শহরে। এতে আবারও নগরের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ১৫ দিনের ব্যবধানে পঞ্চমবারের মতো নগর প্লাবিত হলো। এ ছাড়া ভারী বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিচু এলাকায়ও বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

এদিকে ভোর থেকেই বৃষ্টি চলায় ভোগান্তিতে পড়েন ঈদগাহ ও মসজিদগামী মুসল্লিরা। নগরের বাসিন্দারা বৃষ্টির দুর্ভোগ নিয়েই ঈদের নামাজ আদায় করেন। এ ছাড়া নগরের অনেক এলাকা প্লাবিত হওয়ায় কোরবানি দিতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেকে জলাবদ্ধতার কারণে কোরবানি দিতে পারছেন না।

এর আগে ২ জুন রাতে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরজুড়ে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন অধিকাংশ এলাকার পানি পরদিন নেমে যায়। তবে অন্তত ১২টি এলাকার পানি নামতে বেশ কিছুদিন সময় লেগেছিল। পরে ৮, ১০ ও ১৩ জুন আবারও ভারী বৃষ্টিতে সিলেট নগর প্লাবিত হয়।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া আজ সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটে ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নগরের উপশহর, তেরোরতন, সোনারপাড়া, লামাপাড়া, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা, কেওয়াপাড়া, তালতলা, জামতলা, সোবহানীঘাট, যতরপুর, মাছিমপুর, পাঠানটুলা, দরগামহল্লা, পায়রাসহ শতাধিক এলাকায় বৃষ্টির পানি জমেছে। অনেক এলাকার বাসা ও দোকানে পানি ঢুকে পড়েছে। কোথাও কোথাও ছিল হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি। অব্যাহত বৃষ্টির কারণে নগরের শাহি ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করতে মুসল্লিদের উপস্থিতিও অন্যান্য বছরের তুলনায় ছিল অনেক কম। প্রচুর মুসল্লি বৃষ্টির কারণে ঈদগাহ এড়িয়ে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

আরও পড়ুন

fd6

জলাবদ্ধতার শিকার এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, অন্যান্য সময়ে ঈদের নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিরা কোরবানির কার্যক্রম শুরু করলেও এবার পানিতে বাসাবাড়ির আঙিনা ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। কেউ কেউ পানি নেমে যাওয়ার অপেক্ষা করছেন। অনেকে আবার পানির মধ্যেই কিছুটা শুকনা স্থানে কোরবানি দিচ্ছেন। এতে পশুর রক্ত ও বর্জ্য গিয়ে জলাবদ্ধতার পানিতে মিশছে।

যোগাযোগ করলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ার কারণে বারবার নগর প্লাবিত হচ্ছে। ঈদের দিনও ভারী বৃষ্টিতে নগরের অনেক নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে অনেকে কোরবানিও দিতে পারছেন না। বৃষ্টি না কমায় পানিও নামছে না। তবে নগর যেন জলাবদ্ধ না হয়, সে জন্য আরও কী করা যায়, সেসব বিষয় নিয়ে ভাবা হচ্ছে।

এদিকে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে জেলার, বিশেষ করে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নিচু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এসব উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি অনেক রাস্তাঘাটও তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র চালুর পাশাপাশি বন্যাকবলিত মানুষদের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ শুরু করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের তথ্যানুযায়ী, জেলার প্রতিটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এ ছাড়া আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা, সারি ও কুশিয়ারা  নদ-নদীর তিনটি স্থানে (পয়েন্ট) পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার এবং সারির সারিঘাট পয়েন্টে শূন্য দশমিক ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

nddrrr

সিলেট নগরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা আউয়াল চৌধুরী আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে বলেন, হঠাৎ সৃষ্ট বন্যায় সিলেটবাসীর ঈদের আনন্দ পানিতে ভেসে গেল। নগরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে কেউই বাসাবাড়ি থেকে বেরোতে পারছে না।

নগরের অনেক বাসা তলিয়ে যাওয়ায় অনেকে কোরবানিও দিতে পারছেন না। মূলত বৃষ্টির বাগড়ায় ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেল।

প্রতিনিধি/একেবি