জেলা প্রতিনিধি
০২ জুন ২০২৪, ০৭:৩৯ এএম
রাজবাড়ী জেলাজুড়ে এখন বিষধর সাপের আতঙ্ক। জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে সাপের বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে পদ্মা নদী তীরবর্তী গোয়ালন্দ উপজেলার চরাঞ্চলে।
এ এলাকায় বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়েছে। এ সাপের কামড়ে গত দেড় মাসে তিন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
সাপ ও মৃত্যু আতঙ্কে কৃষকরা জমি থেকে ফসল তুলতে ভয় পাচ্ছেন। মিলছে না ফসল কাটার শ্রমিক।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের চর মজলিশপুর, মহিদাপুর, দেবীপুর, দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চর করনেশনা, আংকের শেখের পাড়াসহ চরাঞ্চলে অনেক সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গত ৮ এপ্রিল চর মজলিশপুর এলাকায় জমি থেকে ভুট্টা তোলার সময় সাঈদুল শেখ নামের এক কৃষককে সাপে কামড় দেয়। প্রথমে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক সপ্তাহ পর তিনি মারা যান।
তার আগে ২৯ মার্চ চর দেবীপুর মাঠে ময়না বেগম নামের এক কৃষাণিকে সাপে কামড়ায়। চিকিৎসা নেওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পর নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান।
মজলিশপুর এলাকার মাতুব্বর আজিজুল মোল্লা জানান, গত সোমবার দুপুরে মাঠে কাজ করার সময় কৃষক শামীম শেখসহ কয়েকজন পদ্মা নদী থেকে একটি নৌকা টেনে তীরে তুলছিলেন। নৌকার নিচে থাকা রাসেল ভাইপার সাপ শামীমের পায়ে কামড় দেয়। লোকজন সাপটি মেরে তাকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরদিন বিকেলে শামীম মারা যান।
আরও পড়ুন
এরপর গত বুধবার ধান কাটার সময় কৃষকরা আরেকটি রাসেলস ভাইপার পিটিয়ে মারেন। এখন ভয়ে কেউ জমিতে নামতে ও চরে যেতে সাহস পাচ্ছেন না।
গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শেখ রাসেল মাহমুদ বলেন, পুরো চরাঞ্চলজুড়ে রাসেলস ভাইপার সাপের কারণে কৃষকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ জমিতে যেতে চাচ্ছে না এবং ধান, ভুট্টা কাটতে শ্রমিকও পাচ্ছে না। মাঝেমধ্যে কৃষকরা সাপ দেখে পিটিয়ে মেরে ফেলে মাটিতে পুঁতে ফেলছেন। প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, কৃষকরা মাঠে কাজ করতে গিয়ে রাসেলস ভাইপার সাপের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩ জন কৃষক মারা গেছেন। এখন ভয়ে কেউ জমিতে যেতে চাচ্ছে না।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফারসিম তারান্নুম হক বলেন, গত মার্চ মাসে ১ জন, এপ্রিলে ১ জন ও মে মাসে ২ জন সাপে কাটা রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। মাঝেমধ্যে সাপে কাটা রোগী হাসপাতালে আসছে। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে কেউ মারা যায়নি।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকনউজ্জামান বলেন, কৃষকদের ধান কাটার সময় আগে লাঠি দিয়ে ধানগাছ নড়াচড়া করে নিশ্চিত হয়ে সতর্কতার সঙ্গে ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে বিশেষ ধরনের জুতা পরে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
রাসেল ভাইপারের ছোবলে হাসপাতালে সাপুড়ে
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রাসেলস ভাইপারের মতো বিষধর সাপের উপদ্রবে আমরা চিন্তিত। উপজেলা পরিষদ থেকে প্রথম অবস্থায় চরাঞ্চলের ১০০ জন কৃষককে গামবুট জুতা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে শ্রমিকদের মধ্যেও বিতরণ করা হবে।
রাজবাড়ী জেলার সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহিম টিটন জানান, আমাদের সদর হাসপাতালসহ প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীদের জন্য অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন রয়েছে। সাপে কাটা রোগী বা পরিবারের কেউ আতঙ্কিত না হয়ে রোগীকে ওঝার কাছে না নিয়ে সরাসরি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসতে হবে। সাপে কাটার পর সময়মতো চিকিৎসা দিতে পারলে রোগী প্রাণে বেঁচে যাবে।
প্রতিনিধি/এসএস