images

সারাদেশ

৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম বন্দরে সকল কার্যক্রম বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ মে ২০২৪, ১১:০৪ এএম

ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত উড়ছে। এছাড়া বন্দরের নিজস্ব অ্যালার্ট-৬ জারি করা হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের সকল ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। খালি করা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি। বড় জাহাজগুলোকে গভীর সমুদ্রে এবং ছোট জাহাজগুলোকে কর্ণফুলী নদির উজানে কালুরঘাটের দিকে নিরাপদে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।

ঘৃর্ণিঝড় মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এসব সংস্থার লোকজন সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা থেকে মানুষদের সরিয়ে নিতে কাজ করছেন। করছেন মাইকিং। পাহাড় থেকেও সরে যেতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় চট্টগ্রামে এক হাজার ৯২৫টি আশ্রয়কেন্দ প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৭৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও এক হাজার ১৪০টি বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া নয়টি মুজিব কেল্লা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের উদ্যোগে মোট ২৯৫টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০০টি, প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি, ৯টি আরবান ডিসপেনসারিতে ৯টি এবং জেনারেল হাসপাতালে ৫টিসহ মোট ২৯৫টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য প্রায় তিন লাখ ট্যাবলেট ও চার লাখ খাবার স্যালাইন মজুত রয়েছে।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় চট্টগ্রামে প্রস্তুত রয়েছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৮ হাজার ৮৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক। আছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এ ছাড়াও বিএনসিসি ও স্কাউটের স্বেচ্ছাসেবকগণকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে চট্টগ্রামে ব্যাপক বর্ষণ ও পূর্ণিমার কারণে তীব্র জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা থাকায় উপকূলবর্তী এলাকারসমূহ ও পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং এসিল্যান্ডদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সমন্বয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। যার নম্বর ০২৩৩৩৩৫৭৫৪৫।

চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে প্রায় ৯০ শতাংশ ফসল কাটা হয়েছে। এ সময় জেলা প্রশাসক মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু ও অন্যান্য প্রাণীর সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সকলকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পর চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অ্যালার্ট-৬ জারি করা হয়েছে। এর ফলে বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাস কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। জাহাজ থেকে পণ্য, কনটেইনার লোড-আনলোড বন্ধ হয়ে গেছে।

বিভিন্ন টার্মিনাল, ইয়ার্ড ও শেডে পণ্য ও কনটেইনার ডেলিভারি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। কিউজিসিসহ জেটির হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট নিরাপদে রাখতে প্যাকিং করে রাখা হচ্ছে। বন্দরের মেরিন, নিরাপত্তা, ট্রাফিক ও সচিব বিভাগের পৃথক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের অভ্যন্তরে গত রাত ৯টা পর্যন্ত স্বাভাবিক কার্যক্রম চলেছে। রাত ৯টায় ৬ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষণার পর চট্টগ্রাম বন্দরে এলার্ট-৩ ঘোষণা করা হয়। এতে পরবর্তী জোয়ারে জেটির সব জাহাজ বের করে দেওয়া হবে। বন্দরের কী গ্যান্ট্রি ক্রেন, পন্টুনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতির নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ছোটখাট ইকুইপমেন্টগুলোকে এক স্থানে জড়ো করে নিরাপদে রাখা হচ্ছে। তবে রোববার সকালে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পর বন্দরের নিজস্ব অ্যালার্ট-৬ জারি করা হয়েছে। এরপর বন্দরের সকল ধরণের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এদিকে, রোববার (২৬ মে) সকালে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক-১০) বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় রেমাল উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় (১৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।

এটি রোববার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ২৬ মে সন্ধ্যা/মধ্যরাত নাগাদ মোংলার নিকট দিয়ে সাগর আইল্যান্ড (পশ্চিমবঙ্গ) খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

প্রতিনিধি/টিবি