images

সারাদেশ

মৃত্যুকূপ থেকে ফিরে এসেছি, এমভি আব্দুল্লাহর প্রধান প্রকৌশলী

জেলা প্রতিনিধি

১৫ মে ২০২৪, ১০:২৮ পিএম

এমভি আব্দুল্লাহর প্রধান প্রকৌশলী নওগাঁর এএসএম সাইদুজ্জান বাড়ি পৌঁছেছেন।

বুধবার (১৫ মে) দুপুরে রাজশাহী বিমানবন্দরে সাইদুজ্জামান পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় তার পরিবারের সদস্যরা। এ সময় তিনি বলেন, মৃত্যুকূপ থেকে ফিরে এসেছি, সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। 

বিমানবন্দর থেকে নওগাঁ পৌরসভার আরজি-নওগাঁ এলাকার বাড়িতে পৌঁছালে সবার চোখে দেখা যায় আনন্দ অশ্রু। 

নওগাঁর স্থানীয় একটি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল কাইয়ুম এর ছেলে সাইদুজ্জামান। 

এদিন বিকেলে সাইদুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র কন্যা শিশুকে কোলে নিয়ে আদর করছেন। স্ত্রী মানহা তাহরিন শতধার চোখে মুখে হাসি। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন। শিশু সন্তানটিও যেন কোল থেকে নামছেই না। সব মিলে পরিবারে বইছে আনন্দের জোয়ার। চলছে নানা আয়োজন। তাকে দেখতে ভিড় করছেন আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী।

কেমন কেঁটেছিল দীর্ঘ ৬৩ দিন জানতে চাইলে সাইদুজ্জামান কাঁন্নাবিজরিত কণ্ঠে বলেন, মৃত্যুকূপ থেকে ফিরে এসেছি, কৃতজ্ঞতা সৃষ্টিকর্তাসহ সকলের প্রতি। কোন নিশ্চয়তা ছিল না, পরিবারের কাছে ফিরতো পারবো কিনা। জীবনের ওই কটা দিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এখন অনেক ভালো লাগছে। 
ভেবেছিলাম হয়তো আর কোনদিন কারো সাথে দেখা হবে না। আল্লাহর রহমতে বাবা মায়ের দোয়ায় সুস্থভাবে ফিরে এসেছি। আমাদের উদ্ধারে যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

তিনি বলেন, আমরা নির্বাধারিত রুট দিয়েই জাহাজ নিয়ে যাচ্ছিলাম। সেভ জোনে ছিলাম, রেড জোনের মধ্যে আমরা ছিলাম না বা অতিক্রম করিনি। প্রথমে জলদস্যুদের ছোট বোট দেখে মনে হয়েছিল তারা হয়তো ফিসারিং বোড ব্যবহার করছে মাছ ধরার জন্য। পরে তো আমাদের ঘিরে ফেললো তারা। তারা সামান্য ধাক্কাধাক্কি করেছে আমাদের সাথে এর বেশি কিছু হয়নি। রোজার সময় খাবার ছিল জাহাজে পর্যাপ্ত, না থাকলেও খাবার নিয়ে তেমন সমস্যা হয়নি। তবে আমরা বেঁচে ফিরবো কিনা সেটা নিয়েই মানসিকভাবে চিন্তায় ছিলাম। জীবনে এমন কঠিন পরিস্থিতি আসবে তা কখনো ভাবতে পারিনি। দুর্বিষহ দিন কেটেছে। কখনও ভালো, আবার কখনও খারাপ। সব সময় আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে দিন পার করতে হয়েছে। এরকম দিন যেন কারো জীবনে না আসে। তাপরও সুস্থভাবে বাড়ি ফিরতে পেরেছি, অনেক ভালো লাগছে। প্রধানমন্ত্রী, জাহাজ কোম্পানি, মিডিয়াসহ সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।

আবারও কাজে ফিরবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা একটি চ্যালেঞ্জিং জব। আমি এটা কনটিনিউ করতে চাই। আমার সাথে জাহাজে সেসব সহকর্মী ছিল তারাও মনোবল হারায়নি। যেহেতু একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এতদিন গেছে। তাই ৬মাস ছুটিতে থাকবো। পরিবারকে সময় দিবো। নিজের মত করে কাটাবো তার পর কাজে যোগদান করবো।

আরও পড়ুন

ভেবেছিলাম তোমাদের মুখ আর দেখা হবে না

সাইদুজ্জামানের মা কোহিনূর বেগম বলেন, আমার কলিজার টুকরো সন্তান আমাদের কাছে ফিরে এসেছে। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। ছেলেকে কাছে পেয়ে কি যে ভালো লাগছে তা বোঝাতে পারবো না। নামাজ পরেছি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছি। ছেলের পছন্দের বিভিন্ন খাবার রান্না করছি। আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীরা আসছে সবাই খুবই খুশি। সরকার, জাহাজ কোম্পানিসহ সবাইকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।

সাইদুজ্জামানের স্ত্রী মানহা তাহরিন শতধা বলেন, স্বামীকে ফিরে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। এতগুলোদিন আমাদের জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সুস্থভাবে বাড়িতে আসায় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, জাহাজ কোম্পানিসহ দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

e&PP

উল্লেখ্য, মোজাম্বিক থেকে ৫৬ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার জলদস্যুরা ২৩ বাংলাদেশি নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করেছিল। গত ১৪ এপ্রিল ভোরে জাহাজটি জলদস্যুমুক্ত হয়। এ সময় ৬৫ জন জলদস্যু জাহাজটি থেকে বোটে নেমে যায়। এরপর গত ২২ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে জাহাজটি দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে ভিড়েছিল। কয়লা খালাস শেষে ২৭ এপ্রিল স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নতুন ট্রিপের পণ্য লোড করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাকার বন্দরে যায় জাহাজটি। সেখান থেকে চুনাপাথর নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ। সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তির ঠিক এক মাস পর বাংলাদেশে পৌঁছায় এস আর শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’।

প্রতিনিধি/একেবি