মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে এমভি আব্দুল্লাহর নাবিক নাজমুল হক হানিফ বলেন, ‘ভেবেছিলাম তোমাদের মুখ আর দেখা হবে না।’
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৭ দিন পর সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার চর-নুরনগর গ্রামের বাড়িতে ফিরে এ কথা বলেন নাজমুল। বুধবার (১৫) সকালে তিনি বাড়ি ফিরলে এলাকায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়।
বিজ্ঞাপন
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা এ নাবিক বলেন, ‘জিম্মি হওয়ার পর ভেবেছিলাম মা-বাবাসহ আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে আর দেখা হবে না। তখন নামাজ পড়তাম আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম - হে আল্লাহ তুমি আমাদের বাবা-মায়ের বুকে ফিরিয়ে দাও। এভাবেই মৃত্যুর শঙ্কায় কাটাতে হয়েছে ৩৩ দিন।
আরও পড়ুন: মায়ের বুকে ফিরলেন নাবিক রাজু, দিলেন ভয়ঙ্কর দিনগুলোর বর্ণনা
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল ভোরে মুক্তিপণের বিনিময়ে জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি মেলে জাহাজের ক্রু নাজমুলসহ ২৩ নাবিকের।
এ বিষয়ে নাবিক নাজমুল হক হানিফ বলেন, আল্লাহ আমাদের কথা শুনেছেন। তবে জলদস্যুরা জাহাজ ছেড়ে গেলে মৃত্যুর ভয় কাটলেও তৎক্ষণাৎ দেশে ফেরার কোনো উপায় ছিল না। তাই মুক্তির পর থেকেই শুরু হয় ফেরার অপেক্ষা। আজ মা-বাবা তাদের বুকের মানিককে ফিরে পেয়ে দারুণ খুশি। এখন তারা আল্লাহর দরবারে বারবার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (১৫) সকালে ওই নাবিকের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তিনি তার মা নার্গিস খাতুন ও বাবা আবু সামাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। তখন তার বাবা-মাও তাদের প্রিয় সন্তানের গালে চুমু খাচ্ছিলেন। ওই সময় উপস্থিত আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে ছিল বাঁধভাঙা আবেগ ও উচ্ছ্বাস। কিছুক্ষণ পরে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা নাবিক নাজমুলের বাড়িতে ভিড় করেন। এ সময় একটি উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
ছেলেকে ফিরে পেয়ে নাজমুলের বাবা আবু সামা বলেন, সুস্থভাবে আমার ছেলেসহ ২৩ নাবিককে দেশে ফিরিয়ে আনায় বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ছেলেকে বুকে নিয়ে মা নার্গিস খাতুন বলেন, দিন-রাত ছেলের চিন্তায় বিভোর হয়ে থেকেছি। প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছিল না। জলদস্যুদের হাতে নাজমুল জিম্মি হওয়ার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তার বাবা। আজ ছেলেকে ফিরে পেয়েছি, তাই আমাদের আনন্দের শেষ নেই। আজ আমি ঈদের দিনের মতো করে সবকিছু রান্না করব এবং ছেলেকে নিয়ে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করবো।
আরও পড়ুন: 'ছেলে ফিরে আসায় যেন প্রাণ ফিরে এসেছে'
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয় এমভি আবদুল্লাহ। প্রায় এক মাস পর গত ১৪ এপ্রিল ভোরে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হয় ২৩ নাবিক। এরপর জাহাজটি পৌঁছে দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে। সেখান থেকে মিনা সাকার নামের আরেকটি বন্দরে চুনা পাথরভর্তি করার পর চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। সবমিলিয়ে ৬৫ দিন পর মুক্ত নাবিকরা চট্টগ্রামে ফিরেন। এরপর তারা নিজ নিজ এলাকায় চলে যান।
প্রতিনিধি/ এমইউ