জেলা প্রতিনিধি
১৪ মে ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম
রোববার (১২ মে) সারাদেশে একযোগে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়। এতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা মেতে উঠে উল্লাসে। পরিবারের সদস্য বিতরণ করেন মিষ্টি। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের পরিবারে হাসি ফুটলেও হাসি ফোটেনি জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মুরাদ হোসেনের বাড়িতে। কারণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ফলাফল বাড়িতে আসলেও সে যে আর কোনদিনই বাড়িতে আসবে না।
গত ৪ এপ্রিল জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় প্রেমিক যুগল একযোগে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
৮ এপ্রিল সোমবার ভোররাতে প্রেমিক মুরাদ শেখ (১৮) জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ওই দিন রাতেই প্রেমিকা তাজমিন আক্তারও (১৬) বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তাদের মধ্যে নিহত প্রেমিক মুরাদ হোসেন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। সে জিপিএ ২.৮১ পেয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে এ খুশি কারও মুখেই হাসি ফোটাতে পারেনি।
নিহত মুরাদ হোসেন উপজেলার খাঁড়িতা গ্রামের দোলন শেখের ছেলে। সে পার্শ্ববর্তী বড়তারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবাবের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। অন্যদিকে নিহত প্রেমিকা তাজমিন আক্তার একই গ্রামের তোজাম খাঁর মেয়ে এবং বাঁকিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুরাদের সঙ্গে একই গ্রামের তাজমিন আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু দুই পরিবারের কেউই এ সম্পর্ক মেনে নেয়নি। একপর্যায়ে মুরাদকে তার পরিবার মালেশিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী ২১ এপ্রিলই তার ফ্লাইট ছিল। তাই ধারণা করা হচ্ছে, পরিবারকে চাপে ফেলতে তারা দু’জনেই পরিকল্পনা করে বিষপানের সিদ্ধান্ত নেয়।
আরও পড়ুন
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ৪ এপ্রিল তারা বিষপান করে। পরে তাদের উদ্ধার করে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে।
রোববার (৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে মুরাদকে ফের জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ওই রাতেই প্রেমিকা তাজমিন আক্তারও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকেও রাতেই বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আড়াইটায় প্রেমিকা তাজমিন আক্তারেরও মৃত্যু হয়।
বড়তারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু তাহের আকন্দ তার ফলাফলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বড়তারা ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় সদস্য জাকারিয়া হোসেন রুমি বলেন, তাদের মৃত্যু আমাদের সবাইকে শোকাহত করেছে। যা পুরো এলাকার সকলের হৃদয়ে দাগ কেটেছে। মুরাদ এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে। কিন্তু তার এ ফলাফল কাউকেই খুশি করতে পারেনি। বরং তার পরিবারে নতুন করে শোকের ছায়া নেমেছে।
প্রতিনিধি/এসএস