images

সারাদেশ

পা দিয়ে লিখে এসএসসি পাস করল সিয়াম

জেলা প্রতিনিধি

১৩ মে ২০২৪, ০৮:০০ এএম

জন্ম থেকেই দুই হাত নেই সিয়ামের। পা দিয়েই সব কাজ করতে হয় তাকে। তার অদম্য ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করে সে সরকারি চাকরি করবে। তাই সে পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সফলভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছে।

সিয়াম অভাব, দারিদ্র্য ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে ইচ্ছা আর মনোবল নিয়েই এগুতে চায়। তার মনে নেই বিন্দুমাত্র কোনো হতাশার ছাপ। অদম্য এই মেধাবী শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পা দিয়ে লিখেই জিপিএ ৩.৮৩ পেয়েছে।

সে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। সব বিষয়ে সে সাফল্যের সঙ্গে ভালো নম্বর পেয়ে পাস করে। তার এ ফলের জন্য তার বাবা-মা ও শিক্ষকেরা খুব খুশি।

আরও পড়ুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মা-মেয়ের একসঙ্গে এসএসসি পাশ

বিদ্যালয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া গ্রামের দিনমজুর দম্পতি জিন্নাহ মিয়া ও জোসনা বেগমের ছেলে সিয়াম। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে সিয়াম ছোট। জন্ম থেকেই তার দুই হাত নেই। কিন্তু থেমে নেই তার পড়ালেখা ও খেলাধুলা। তবে পরিবারের অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে প্রাথমিকের মাঝ পথে বন্ধ হয়ে যায় তার পড়ালেখা। বিদ্যালয় থেকে বেতন মওকুফ করলে পুনরায় পড়ালেখা শুরু করে সিয়াম। ২০১৮ সালে ব্র্যাক শিশু নিকেতন স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে একই ইউনিয়নের চাপারকোনা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় সে। এর পর কৃতিত্বের সঙ্গে জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সিয়াম। সে এবার ডোয়াইল ইউনিয়নের চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পরীক্ষায় পাশ করে।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণের বিষয়ে জানতে চাইলে সিয়াম জানায়, জন্ম থেকেই আমার দুই হাত নেই। পা দিয়ে লিখতে লিখতে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। পা দিয়ে লিখেই প্রাথমিক ও জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। এবার এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।

আরও পড়ুন

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মাশুরা জিপিএ-৫ পেয়েছে

সিয়ামের মা জোসনা বেগম বলেন, লেখাপড়ার জন্য সিয়ামকে কখনও বলতে হয় না। নিজের ইচ্ছায় সব সময় পড়ালেখা করে। কিছু কিছু কাজ ছাড়া সব কাজ নিজেই করতে পারে। আল্লাহর রহমতে সে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে। লেখাপড়া করতে চায় ছেলে। তবে অভাবের সংসারে সামনের দিনগুলোতে ছেলেকে কীভাবে কলেজে পড়াশোনা করাব সেই চিন্তায় খুশিও ম্লান হয়ে গেছে তাদের। সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আলীমুর রাজি শিবলু বলেন, আর দশটা ছেলে মেয়েদের চেয়ে সব সময় পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করত সিয়াম। এবার পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। একাদশ শ্রেণিতে অত্র কলেজে যদি সে ভর্তি হয়, কলেজের সকল বেতন মওকুফ করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রতিনিধি/এসএস