images

সারাদেশ

শৈশবে সুস্থ, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবন্ধী ৪ ভাই-বোন

জেলা প্রতিনিধি

২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩২ এএম

শৈশবে ছুটে বেড়িয়েছেন গ্রামের পথে প্রান্তরে। অথচ এখন হাঁটার শক্তি নেই, পারেন না দাঁড়াতেও। কোথায় যেতে হলে কারো সাহায্য বা টোল টেনে করতে হচ্ছে চলাফেরা।

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নে হরিপুর গ্রামের একই পরিবারের শারিরিক প্রতিবন্ধী চার ভাই-বোন। চার ভাই-বোনের বয়স যখন ১০ থেকে ১২ বছর এরপর থেকেই হাত-পা ছোট, চিকন ও বেঁকে হয়ে পড়েন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাই তারা করতে পারে না স্বাভাবিক কাজকর্মও। এখন তাদের যেন কষ্টের শেষ নেই।

Pic-3

পরিবার সূত্রে জানা যায়, জন্মের পর থেকে সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন তারা। বর্তমান ৩৩ বছর বয়সী আব্দুল হাকিম, ৩১ বছর বয়সী আলমগীর, ৩০ বছর বয়সী সালমা ও ২৭ বছর বয়সী আব্দুর রহমান। কিন্তু চার ভাই বোনের জীবনে ছন্দপতন ঘরে ১০ থেকে ১২ বছর বয়সের পর থেকেই। বয়স বাড়লেও বাড়েনি তাদের আর উচ্চতা। আস্তে আস্তে তাদের হাত-পা ছোট, চিকন ও বেঁকে হয়ে পড়েন শারিরিক প্রতিবন্ধী। পরে অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখালেও কোনো লাভ হয়নি। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে দেখাতে পারেনি ভালো কোনো ডাক্তারও। ছেলে-মেয়েদের এমন পরিস্থিতি দেখে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন মা। এরপর চার ভাই-বোনকে দেখাশুনার জন্য তাদের বাবা আবারও বিয়ে করেন। বর্তমানে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে না পারায় তাদের দৈনন্দিন কাজে কাজে সহায়তা করেন সৎ মা মো. কমলা। নিজের সন্তান না হলেও প্রতিবন্ধী চার ভাই-বোনকে নিজের সন্তানের মতোই পরম আদরে দেখশুনা করছেন। এইভাবেই সংগ্রাম করে জীবন-জীবিকা চালিয়ে যাচ্ছে পরিবারটি। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারটির সহায়তায় সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান স্থানীয়রা।

Pic-4

প্রতিবন্ধী আব্দুর রহমান ও আলমগীর বলেন, আমাদের বয়স যখন ১০ বছর পর্যন্ত ছিল তখন আমরা সুস্থ স্বাভাবিক ছিলাম। বন্ধুদের সঙ্গে বল খেলতাম, আড্ডা দিতাম, হাটে-বাজারে যেতাম। অনেক স্মৃতি ছিল। এখন ছোটবেলার কথা মনে পড়লে কষ্ট হয়, অনেক সময় কান্নাও করি। ভবিষ্যতে আমাদের দেখবে কে। বাইরের কোনো মানুষজন আমাদের চার ভাই-বোনের চলাফেরা দেখলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারবে না।

তারা আরও বলেন, আমরা চার ভাই বোন অনেক কষ্ট আর সমস্যার মধ্য দিয়ে বেঁচে আছি। চলাফেরা করা যায় না, টুল টেনে না হলে হামকুর পেরে কোনোরকম চলাফেরা করতে হয়। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ভালো না হওয়ায় কোনো অসুখ হলে ঠিকমতো ওষুধও কিনে খেতে পারি না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে বা কোনো বিত্তবান মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়ালে একটু উপকার হতো।

Pic-2

তাদের প্রতিবন্ধী বোন সালমা বলেন, ১০ বছরের পর থেকে আমি আর স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারি না। টোল নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। আমার ভাইদের চেয়ে আমার কষ্ট আরও বেশি। সব সময় অসুখ-বিসুখ লেগে থাকে।

সৎ মা মোছা. কমলা বলেন, আমার বিয়ে হয়ে আসার পর থেকেই তাদেরকে টুল টেনে চলাফেরা করতে দেখছি। তাদের সব কাজ আমাকেই করে দিতে হয়। তাদের কথা চিন্তা করে নিজে কোনো সন্তান নেই নাই। নিজের সন্তানের মতই তাদেরকে সেবা যত্ন করে যাচ্ছি। আমার এই চার সন্তাদের পাশে কেউ দাঁড়ালে তাদের জন্য খুব ভালো হতো।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বার্হী অফিসারকে তাদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর নিতে বলেছি। এছাড়াও চিকিৎসার মাধ্যমে তাদেরকে ভালো করা গেলে তাদের চিকিৎসার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

প্রতিনিধি/টিবি