জেলা প্রতিনিধি
০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:১৬ এএম
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের নয়টি লোহার দানবাক্স ৩ মাস ২০ দিন পর আবারও খোলা হয়েছে। দানবাক্স থেকে এবার পাওয়া গেছে ২৩ বস্তা টাকা।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ৮টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে দানবাক্স কমিটির আহ্বায়ক ও কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজের তত্ত্বাবধানে বাক্সগুলো খোলা হয়। অন্যান্ন সময় আটটি থাকলেও এবার আরেকটি বাড়ানো হয়েছে। ফলে নয়টি দান সিন্দুক থেকে এবার পাওয়া গেলো ২৩ বস্তা টাকা।
এর আগে চলতি বছরের ১৯ আগস্ট দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ৩ মাস ১৩ দিনে ওই দানবাক্সগুলোতে জমা পড়েছিল রেকর্ড পরিমান টাকা। তখন দিনভর গণনা শেষে এতে টাকার পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫। এ ছাড়া আরও জমা পড়েছিল বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা।
আজ সকাল ৮টার দিকে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছে। দানবাক্সগুলো খুলে ২৩টি বস্তায় ভরে টাকাগুলো মসজিদের দোতলায় নেওয়া হয় গণনার জন্য। এখন গণনার কাজ চলছে। এবারও দান সিন্দুকের টাকা গণনার সময় অনেক চিঠি-পত্র পাওয়া গেছে। সেসব চিঠিতে দানকারীরা নিজেদের মনের বাসনার কথা লিখে জানিয়েছেন।
সিন্দুক খোলার সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাসেল শেখ।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ, ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলামসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষকেরা গণনাকাজ তত্ত্বাবধান করছেন। টাকা গণনায় মসজিদ মাদরাসার ১৩৮ জন ছাত্র, রূপালী ব্যাংকের ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মসজিদ মাদরাসার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দুই শতাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মসজিদটির দানবাক্সগুলোতে টাকাপয়সা ছাড়াও স্বর্ণালংকার, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। কথিত আছে, খাস নিয়তে এ মসজিদে দান করলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করেন।
জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, দানের টাকা মসজিদের উন্নয়ন কাজসহ আর্ত মানবতার সেবায় ব্যায় করা হয়। এছাড়াও ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন আন্তর্জাতিক মানের ইসলামি কম্প্লেক্স স্থাপনের প্রস্তুতি চলছে।
সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট তিনতলা বিশাল পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা। জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে হারুয়া এলাকায় অবস্থিত পাগলা মসজিদটি প্রথমে ১০ শতক জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে এর আয়তন আরও বাড়ানো হয়েছে। মসজিটি এখন প্রায় চার একর জায়গাজুড়ে রয়েছে।
কথিত আছে, প্রায় ৫০০ বছর আগে বাংলার বারোভূঁইয়া বা প্রতাপশালী ১২ জন জমিদারের অন্যতম ঈশা খাঁর আমলে ‘দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিলকদর পাগলা’ নামের একজন ব্যক্তি নদীর তীরে বসে নামাজ পড়তেন। পরবর্তী সময়ে ওই স্থানটিতে মসজিদটি নির্মিত হয়। সেই থেকে মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা জানান, ব্যাংকে জমা রাখা টাকার মুনাফা থেকে দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ও অসহায় মানুষদের সহায়তাসহ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, টাকা গণনার কাজ চলছে। গণনা শেষে সব টাকা পূর্ণ নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যাংকে জমা দেওয়া হবে।
টিবি