এভিয়েশন ডেস্ক
১৩ জুন ২০২৫, ১০:৫১ এএম
বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক বিমান আকাশে উড়ে বেড়ায়। প্রতিটি বিমানের উড্ডয়ন থেকে অবতরণ পর্যন্ত রয়েছে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রশ্ন হলো—আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় বিমান কীভাবে ভূমির সঙ্গে যোগাযোগ রাখে? এই প্রতিবেদনে জানবেন পাইলট, ককপিট, রেডিও সিগন্যাল, এটিসি (ATC), এইচএফ রেডিও এবং কল সাইন সংক্রান্ত বিস্ময়কর তথ্য।
বিমান এবং ভূমির মধ্যে যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো VHF (Very High Frequency) এবং HF (High Frequency) রেডিও।
VHF রেডিও সাধারণত 30–300 MHz ব্যান্ডে কাজ করে, যা 200–250 কিমি পর্যন্ত কার্যকর থাকে। বিমান যখন রানওয়ের কাছাকাছি থাকে, তখন এই রেডিওতেই মূলত যোগাযোগ হয়।
HF রেডিও ব্যবহার হয় লং ডিস্ট্যান্স বা মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলোতে, যেখানে VHF সিগনাল পৌঁছায় না। HF রেডিও আয়নোস্ফিয়ারের সাহায্যে পৃথিবীর অনেক দূর পর্যন্ত সিগনাল পাঠাতে পারে।

বিমানের সামনের অংশে থাকা ককপিট থেকেই সব ধরনের যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করেন পাইলট ও সহ-পাইলট (co-pilot)। প্যানেলে থাকা রেডিও কন্ট্রোল ইউনিটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি নির্বাচন করে পাইলটরা সংশ্লিষ্ট ATC (Air Traffic Control)-এর সঙ্গে কথা বলেন।
ATC-র নির্দেশ মেনে বিমান কখন কোথা দিয়ে যাবে, কোন উচ্চতায় থাকবে, কখন ঘুরবে বা অবতরণ করবে—সবকিছু ঠিক হয় এই রেডিও বার্তার মাধ্যমে।
ATC হলো প্রতিটি দেশের বা অঞ্চলের বিমান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, যারা গ্রাউন্ড থেকে প্রতিটি বিমানের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। পৃথিবীকে বিভিন্ন ‘FIR (Flight Information Region)’-এ ভাগ করা হয়েছে এবং প্রতিটি FIR-এর জন্য নির্দিষ্ট ATC দায়িত্বপ্রাপ্ত। বিমান যখন এক FIR থেকে আরেকটিতে প্রবেশ করে, তখন ATC পরিবর্তন হয়, এবং পাইলট নতুন ATC ফ্রিকোয়েন্সিতে টিউন করে যোগাযোগ করেন।

বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার সময় এটিসি তাকে কল সাইন (Call Sign) দিয়ে শনাক্ত করে।
উদাহরণস্বরূপ-
বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট BG 088 → কল সাইন: Bangladesh Eight Eight
Emirates এর EK 202 → কল সাইন: Emirates Two Zero Two
এই কল সাইন দিয়ে পাইলটরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে ATC-কে ডাকে, যেমন:
‘Dhaka Control, this is Bangladesh Eight Eight at FL350, requesting descent.’

যোগাযোগের পর্যায়: উড্ডয়ন থেকে অবতরণ পর্যন্ত
Clearance Delivery: উড্ডয়নের আগে অনুমতি নেওয়া হয়
Ground Control: ট্যাক্সির সময় ভূমির সঙ্গে যোগাযোগ
Tower Control: রানওয়ে ব্যবহারের সময়
Departure/Approach: আকাশে ওঠার/নামার সময়
En-route ATC (Center): দীর্ঘপথে উড়ন্ত অবস্থায়

আরও যেসব প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়:
ACARS (Aircraft Communications Addressing and Reporting System): স্বয়ংক্রিয় বার্তা প্রেরণ
ADS-B (Automatic Dependent Surveillance–Broadcast): বিমানের অবস্থান নিজে থেকেই সম্প্রচার করে
SATCOM (Satellite Communication): উপগ্রহের মাধ্যমে দুর্ভোগপূর্ণ বা সমুদ্র এলাকায় যোগাযোগ বজায় রাখা
আরও পড়ুন: রাডার যেভাবে কাজ করে
আকাশে বিমানের নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ বজায় রাখার পেছনে রয়েছে জটিল ও উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়। পাইলট, ককপিট, রেডিও সিগনাল এবং বিশ্বব্যাপী এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল নেটওয়ার্ক একসঙ্গে কাজ করে প্রতিটি বিমানকে গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছে দেয়। তাই যখন আমরা বিমানযাত্রায় থাকি, তখন এই ‘অদৃশ্য সংযোগ ব্যবস্থাই’ আমাদের আকাশপথের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা।
এজেড