রাডার ‘রেডিও ডিটেকটিং অ্যান্ড রেঞ্জিং’ শব্দগুচ্ছের সংক্ষিপ্ত রূপ। নাম থেকেই রাডারের কাজের বিষয়ে কিছুটা আঁচ পাওয়া যায়। দূরবর্তী কোনো স্থানে কোনো বস্তুর উপস্থিতি আছে কিনা এবং থাকলে এর অবস্থান কোন দিকে, দূরত্ব কতটুকু- এসব বিষয় নির্ধারণ করাই হলো রাডারের কাজ। রাডার এ কাজটি করে রেডিও ওয়েভের মাধ্যমে।
রাডারের কর্মকৌশল বুঝতে হলে আমাদের একটু প্রতিধ্বনির বিষয়টি স্মরণে রাখতে হবে। প্রতিধ্বনির ক্ষেত্রে কী হয়? কোনো ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে আপনি চিৎকার করলে, আপনার তৈরি করা শব্দ তরঙ্গ দূরের কোনো বস্তু থেকে বাধা পেয়ে আবার আপনার কাছে ফিরে আসে। এর ফলে আপনি আবার নিজের তৈরি করা শব্দটি শুনতে পান।
বিজ্ঞাপন
এখন এই শব্দ তরঙ্গটি প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসতে যে পরিমাণ সময় নেয়, সে তথ্যের দ্বারা আপনার এবং শব্দকে বাধা দেয়া বস্তুর মধ্যকার দূরত্বের পরিমাপ সম্ভব। ডপলার ইফেক্টের মাধ্যমে বাধা দেয়া বস্তুর গতিও নির্ণয় করা যায়। রাডারের ক্ষেত্রে ঠিক এই কৌশলটিই ব্যবহার করা হয়। প্রতিফলিত তরঙ্গের মাধ্যমে বস্তুর দূরত্ব ও গতি নির্ণয় করা হয়।
রাডার কোনো একটি নির্দিষ্ট দিকে শক্তিশালী, উচ্চ কম্পাঙ্কের রেডিও ওয়েভ (বেতার তরঙ্গ) সঞ্চারিত করে। এরপর ঐ তরঙ্গগুলোর আওতায় কোনো বস্তু; যেমন, জাহাজ বা বিমান আসলে এ তরঙ্গগুলো বাধাপ্রাপ্ত হয়, প্রতিফলনের মাধ্যমে ফিরে আসে রাডারে। এর মাধ্যমে রাডার বস্তুর উপস্থিতি নিশ্চিত করে। শুধু উপস্থিতিই নয়, রাডার আগমনকারী বস্তুর দূরত্ব,গতিবেগ, কৌণিক দূরত্বও নির্ণয় করতে পারে।
আর রাডার যেহেতু রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে, তাই রাতের আঁধার হোক বা প্রতিকূল আবহাওয়া হোক, এতে রাডারের কোনো সমস্যা হয় না। যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়াও রাডারের ব্যবহার অনেক। আকাশযানকে পথের দিশা দেয়া, আবহাওয়ার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা, সমুদ্রে অন্য জাহাজ বা সমতল ভূমির অবস্থান বের করা ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয় এই প্রযুক্তিটি।
বিজ্ঞাপন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক আগ থেকেই রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে কোনো বস্তুকে চিহ্নিত করার বিষয়টি নিয়ে কাজ করে আসছিলেন বিজ্ঞানীরা। যেমন ১৯০৪ সালে জার্মানিতে আবিষ্কৃত হয়, টেলিমোবাইলোস্কোপ নামক একটি ডিভাইস যা জাহাজের সংঘর্ষ প্রতিরোধ করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এর রেঞ্জ ছিল প্রায় তিন হাজার মিটার।
১৯২৫-২৬ সালে আমেরিকান ও ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে পৃথিবীর আয়নোস্ফিয়ারের পরিমাপ করেন। এটিকে আদি রাডার বলা চলে।
১৯৩৪ সালের দিকে আমেরিকান নৌবাহিনীর গবেষকরা লক্ষ্য করেন, পটোম্যাক নদীতে প্রেরণ করা রেডিও ওয়েভগুলো জাহাজ দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এরপর তারা এ নিয়ে আরো গবেষণায় অগ্রসর হন।
আধুনিক রাডার প্রযুক্তির উন্নয়নে স্যার রবার্ট ওয়াটসন ওয়াটের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৩৫ সালে তিনি তার রেডিও ডিভাইস দিয়ে সফলভাবে একটি আকাশযানকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন।
এ উদ্ভাবনের পথ ধরেই ১৯৩৭ সালে ব্রিটেনে সর্বপ্রথম রাডার নেটওয়ার্ক চেইন হোম প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিই ছিল আধুনিক রাডারের চলার শুরু।
১৯৩৯ সাল নাগাদ, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া সহ আরো অনেকগুলো দেশের রাডার প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়।
তথ্যসূত্র: রোর মিডিয়া
এজেড