এভিয়েশন ডেস্ক
১৩ জুন ২০২৫, ০৯:৫৩ এএম
বিমান দুর্ঘটনার পর যখন গোটা বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে যায়, তখন তদন্তকারীরা নজর দেন একটি বিশেষ যন্ত্রের দিকে— ব্ল্যাক বক্স। এটি যেন বিমানের ‘স্মৃতির খাতা’, যার ভেতর লুকিয়ে থাকে ঘটনার প্রকৃত চিত্র। কিন্তু এই ব্ল্যাক বক্স কী? কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ব্ল্যাক বক্স হলো একটি উচ্চ প্রযুক্তির রেকর্ডিং যন্ত্র, যা মূলত দুটি অংশে বিভক্ত-
Cockpit Voice Recorder (CVR) – এটি পাইলটদের ককপিটে হওয়া সব কথোপকথন রেকর্ড করে।
Flight Data Recorder (FDR) – এটি বিমানের প্রযুক্তিগত তথ্য, যেমন—উচ্চতা, গতি, ইঞ্জিনের কার্যক্রম, দিকনির্দেশ, অটোপাইলটের অবস্থা ইত্যাদি রেকর্ড করে।
এই দুটি যন্ত্রই একত্রে ব্ল্যাক বক্স নামে পরিচিত।

আসলে ব্ল্যাক বক্সের রঙ কালো নয়, বরং এটি উজ্জ্বল কমলা বা লাল রঙের হয়ে থাকে, যাতে দুর্ঘটনাস্থলে সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। ‘ব্ল্যাক বক্স’ নামটি এসেছে একটি রূপক অর্থে— দুর্ঘটনার অন্ধকার রহস্য উন্মোচন করার ক্ষমতা আছে বলেই একে এমন বলা হয়।
বিমানে উড্ডয়নের শুরু থেকেই ব্ল্যাক বক্স কাজ শুরু করে। এটি প্রতি সেকেন্ডে শত শত তথ্য রেকর্ড করে এবং সর্বশেষ ২৫-৩০ ঘণ্টার ডেটা সংরক্ষণ করতে পারে। ব্ল্যাক বক্স সাধারণত বিমানের লেজের অংশে স্থাপন করা হয়, কারণ দুর্ঘটনার সময় এ অংশটি তুলনামূলকভাবে বেশি সুরক্ষিত থাকে।
যখন কোনো বিমান দুর্ঘটনা ঘটে, তখন ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয় এবং বিশেষ পরীক্ষাগারে নিয়ে গিয়ে এর ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়। ককপিটের রেকর্ডিং থেকে বোঝা যায় পাইলট কী বলছিলেন, কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন। অপরদিকে, প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় বিমানের কোন যন্ত্রাংশে সমস্যা হয়েছিল বা না হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ‘ব্ল্যাক বক্স’ কী এবং কেন?
এভাবেই ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হয়।

ব্ল্যাক বক্স অত্যন্ত মজবুত ধাতু দিয়ে তৈরি এবং এটি-
১১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে।
গভীর সমুদ্রের চাপে অক্ষত থাকতে পারে।
প্রায় ৩০ দিন পর্যন্ত একটি লোকেশন ট্রান্সমিটার দিয়ে সিগন্যাল পাঠাতে থাকে।
ব্ল্যাক বক্স নিছক একটি যন্ত্র নয়— এটি একটি মূক সাক্ষী, যা কথা বলে, তথ্য দেয়, এবং প্রমাণ হাজির করে। আধুনিক বিমানে এর উপস্থিতি শুধু নিরাপত্তার দিক থেকেই নয়, বরং ভবিষ্যতের দুর্ঘটনা রোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বলা চলে, আকাশপথের যেকোনো বিপর্যয়ের পরে সত্য উদঘাটনের চাবিকাঠি এই ব্ল্যাক বক্সই।
এজেড