রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘ব্ল্যাক বক্স’ কী এবং কেন?

এভিয়েশন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০২:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

‘ব্ল্যাক বক্স’ কী এবং কেন?
প্রতিটি বিমানেই একটি ব্ল্যাক বক্স থাকে। সাধারণত বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে ফ্লাইট বক্স সবার আগে খোঁজা হয়। এটা মূলত ফ্লাইট রেকর্ডার। ইলেকট্রনিক রেকর্ডিং ডিভাইস। যার মধ্যে বিমানের সমস্ত তথ্য সংরক্ষিত থাকে। বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে ব্ল্যাক বক্স ব্যবহৃত হয়। এভিয়েশন বা বিমান নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এটিকে ব্ল্যাক বক্স না বলে ফ্লাইট রেকর্ডার নামে চেনেন।

যেভাবে এলো


বিজ্ঞাপন


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ ধরনের যন্ত্র তৈরির উদ্যোগ প্রথম নেয়া হয়। তবে সত্যিকারের কাজ শুরু হয় ১৯৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে। অস্ট্রেলীয় সরকারের অ্যারোনটিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে গবেষণা বিজ্ঞানী ডেভিড ওয়ারেন এটি আবিষ্কার করেন। ১৯৬২ সালের ২৩শে মার্চ প্রথম অস্ট্রেলিয়ার একটি বিমানে পরীক্ষামূলক ভাবে এটির ব্যবহার করা হয়।

black box pictureকী দিয়ে তৈরি?

ব্ল্যাক বক্স কালো কোন বস্তু নয়। বরং এর রং অনেকটা কমলা ধরনের। এটি অত্যন্ত শক্ত ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয়। কয়েকটি লেয়ার দিয়ে এটি এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে প্রচণ্ড উত্তাপ, ভাঙচুর, পানি বা প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও এটি টিকে থাকতে পারে। এটি ১০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও অক্ষত থাকতে পারে। স্টেইনলেস স্টীল বা টাইটেনিয়ামের খোলস দিয়ে বাক্সের আবরণ তৈরি করা হয়। টিকে থাকার অনেকগুলো পরীক্ষায় পাস করার পরেই এগুলোকে বিমানে সংযোজন করা হয়।

তথ্য সংরক্ষণের পদ্ধতি


বিজ্ঞাপন


এটি দুইটি অংশের সমন্বয়ে একটি ভয়েস রেকর্ডার মাত্র। বিমান চলাচলের সময় সব ধরনের তথ্য এটি সংরক্ষণ করে রাখে। এর মধ্যে দুই ধরনের তথ্য সংরক্ষিত থাকে। একটি হলো, ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার (এফডিআর)। অপরটি হলো ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর)।

black box picture

ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার (এফডিআর)

এই যন্ত্রটি প্রতি সেকেন্ডে কয়েক ডজন প্যারামিটার রেকর্ডের মাধ্যমে একটি ফ্লাইটের সাম্প্রতিক ইতিহাস সংরক্ষণ করে। এটি বিমানের ওড়া, ওঠানামা, বিমানের মধ্যের তাপমাত্রা, পরিবেশ, চাপ বা তাপের পরিবর্তন, সময়, শব্দ ইত্যাদি নানা বিষয় নিজের সিস্টেমের মধ্যে রেকর্ড করে রাখে।

ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর)

এটিতে ককপিটের ভেতর পাইলটদের নিজেদের মধ্যের কথাবার্তা, পাইলটদের সাথে বিমানের অন্য ক্রুদের কথা, ককপিট এর সাথে এয়ার কন্ট্রোল ট্রাফিক বা বিভিন্ন বিমান বন্দরের সাথে রেডিও যোগাযোগের কথা রেকর্ড হতে থাকে।

দুইটি রেকর্ডার একত্রে ফ্লাইট ইতিহাস সম্পর্কে নিখুঁত তথ্য দেয়, যা পরবর্তী তদন্তের কাজে লাগে। এফডিআর এবং সিভিআর একত্রে একক যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

black box picture

যেভাবে কাজ করে

আধুনিক ব্ল্যাক বক্সগুলোয় ২৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বিমানের ফ্লাইট ডাটা ধারণ করে রাখতে পারে। এর ভেতর অনেকগুলো মেমরি চিপ পাশাপাশি সাজানো থাকে। এখানে তথ্য সরবরাহ করার জন্য বিমানের বিভিন্ন জায়গায় অনেক সেন্সর লাগানো থাকে। এসব সেন্সর অনবরত বিমানের গতি, তাপমাত্রা, সময়, ভেতর-বাইরের চাপ, উচ্চতা ইত্যাদি বিমানের সামনের দিকে থাকা ফ্লাইট ডাটা অ্যাকুইজিশন ইউনিট নামের একটি অংশে পাঠাতে থাকে। সেখান থেকে সেসব তথ্য চলে যায় ব্ল্যাক বক্সের রেকর্ডারে। পাইলট, কো পাইলট, ক্রুদের বসার কাছাকাছি জায়গায় অনেকগুলো মাইক্রোফোন বসানো থাকে। তাদের সকল কথাবার্তা, নড়াচড়া বা সুইচ চাপা ইত্যাদি সহ সকল তথ্য এসব মাইক্রোফোনে রেকর্ড হতে থাকে। সেগুলো এসোসিয়েটেড কন্ট্রোল ইউনিট নামের একটি ডিভাইসে পাঠায়। এরপর সেসব তথ্য ব্ল্যাক বক্সে গিয়ে জমা হয়।

তথ্য ধারণ ক্ষমতা

বিমান চলাচলের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্ল্যাক বক্স তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে। মূলত শেষের দিকের তথ্য এটিতে জমা থাকে। একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর আগের তথ্য মুছে যেতে থাকে আর নতুন তথ্য জমা হয়। ফলে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বশেষ তথ্য এটিতে পাওয়া যায়।

তথ্য উদ্ধারের পদ্ধতি

কোনো বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে এটি খুঁজে বের করাই হয়ে পড়ে উদ্ধারকারীদের প্রধান লক্ষ্য। কারণ, এটি পাওয়া গেলে সহজেই ওই দুর্ঘটনার কারণ বের করা সম্ভব হয়। বাক্সটি উজ্জ্বল কমলা রংয়ের হওয়ায় সেটি খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। সমুদ্রের তলদেশেও ৩০দিন পর্যন্ত এটি অক্ষত থাকতে পারে। ব্ল্যাক বক্সটি পাওয়ার পরেই বিমান দুর্ঘটনা তদন্তকারী, বিমান সংস্থা, এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি দল তৈরি করা হয়। সেই সাথে প্রযুক্তিবিদদের সমন্বয়ে তারা ব্ল্যাক বক্স থেকে তথ্য উদ্ধারের কাজটি শুরু করেন। বাক্সের অবস্থার উপর নির্ভর করে এটি থেকে কত তাড়াতাড়ি তথ্য পাওয়া যাবে। সেটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনেক সময় মাসের পর মাসও তথ্য উদ্ধারে সময় লেগে যায়। কারণ, বিশেষজ্ঞদের খেয়াল রাখতে হয়, যাতে তথ্য উদ্ধার করতে গিয়ে কিছু মুছে না যায় বা মেমরি চিপগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

black box pictureশক্তির উৎস

একেকটি ব্ল্যাক বক্সের পাওয়ার বা শক্তির যোগান দেয় দুইটি জেনারেটরের যেকোনো একটি। এসব উৎস থেকে এই বাক্সটি অব্যাহতভাবে শক্তির সরবরাহ পেয়ে থাকে।

ব্ল্যাক বক্স নামকরণের কারণ

এটির নামকরণের সঠিক কারণ জানা যায় না। অনেকে মনে করেন, আগে এটির রং কালো রঙের ছিল, তাই হয়তো তখন থেকে এর নাম ব্ল্যাক বক্স। আবার অনেকে বলেন, দুর্ঘটনা, মৃত্যু ইত্যাদির কারণে এটিকে ব্ল্যাক বক্স ডাকা হয়। অনেকের ধারণা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নতুন আবিষ্কৃত যেকোনো ধাতব প্রযুক্তিকে কালো রঙ দিয়ে ঢেকে রাখা হতো। এ কারণেও এটির নাম ব্ল্যাক বক্স হতে পারে। 

তথ্যসূত্র উইকিপিডিয়া

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর