অটোমোবাইল ডেস্ক
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৮ এএম
বিশ্বজুড়ে সাধারণত তেলকেই সবচেয়ে দামী ভোগ্যপণ্য হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, কিছু দেশে চিত্রটি একেবারেই উল্টো। সেখানে গাড়ির ট্যাংকে ভরার জ্বালানির চেয়েও বোতলজাত পানির দাম বেশি। সরকারি ভর্তুকি, তেল উৎপাদন সক্ষমতা, মরুভূমিভিত্তিক পানিসংকট ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আজকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এমনই কয়েকটি দেশের চিত্র তুলে ধরা হলো।
লিবিয়া: কয়েক টাকায় তেল, পানির দাম কয়েক গুণ বেশি
উত্তর আফ্রিকার তেলসমৃদ্ধ দেশ লিবিয়ায় পেট্রোলের দাম বিশ্বের সবচেয়ে কমগুলোর একটি। বর্তমানে সেখানে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম প্রায় ০ দশমিক ০২৮ মার্কিন ডলার। সরকারি ভর্তুকির কারণে এই দাম দীর্ঘদিন ধরেই অপরিবর্তিত।
অন্যদিকে, দেশটির বাজারে বোতলজাত পানির দাম প্রতি লিটার গড়ে ০ দশমিক ১৮ থেকে ০ দশমিক ৫৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত। অর্থাৎ এক লিটার পানির দাম সেখানে পেট্রোলের দামের কয়েক গুণ বেশি। তেল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও নিরাপদ পানির সরবরাহ ও বিতরণ ব্যয় লিবিয়ায় পানিকে তুলনামূলকভাবে দামী করে তুলেছে।

ভেনেজুয়েলা: বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা তেলের দেশ
ভেনেজুয়েলায় পেট্রোল দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় বিনামূল্যের সমান দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে দেশটিতে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম আনুমানিক ০ দশমিক ০৩ থেকে ০ দশমিক ০৪ মার্কিন ডলার।
কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট ও সরবরাহ ব্যবস্থার দুরবস্থার কারণে বোতলজাত পানির দাম সেখানে অনেক বেশি। বাজারে ১ দশমিক ৫ লিটার পানির বোতলের দাম প্রায় ১ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ১ মার্কিন ডলার পর্যন্ত। হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতি লিটার পানির দাম পেট্রোলের তুলনায় বহু গুণ বেশি।
সৌদি আরব: মরুভূমির দেশে পানির মূল্য বাস্তবতা
সৌদি আরবে বর্তমানে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম প্রায় ০ দশমিক ৬২ মার্কিন ডলার। তেল উৎপাদনকারী দেশ হওয়ায় এখানেও জ্বালানির দাম তুলনামূলকভাবে কম।
তবে পানির ক্ষেত্রে চিত্র ভিন্ন। মরুভূমিপ্রধান এই দেশে পানির বড় অংশই আসে সমুদ্রের পানি পরিশোধন বা ডেসালিনেশন প্রক্রিয়া থেকে। ফলে বোতলজাত পানির দাম তুলনামূলক বেশি। অনেক সুপারমার্কেটে ১ দশমিক ৫ লিটার পানির বোতলের দাম লিটারপ্রতি ০ দশমিক ৭০ থেকে ১ দশমিক ২০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে, যা অনেক ক্ষেত্রে পেট্রোলের দামের চেয়েও বেশি।

কুয়েত: জ্বালানি সস্তা, পানি ব্যয়বহুল
কুয়েতে বর্তমানে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম প্রায় ০ দশমিক ৩৪ মার্কিন ডলার। সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও তেলসম্পদের কারণে দেশটিতে জ্বালানি তুলনামূলক সস্তা।
অন্যদিকে, আমদানি নির্ভর বোতলজাত পানির ক্ষেত্রে দাম অনেক সময় বেড়ে যায়। কিছু ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার পানির দাম ০ দশমিক ৩০ থেকে ১ মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছায়। ফলে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে পানির দাম পেট্রোলের সমান কিংবা বেশি হয়ে যায়।
আলজেরিয়া ও অ্যাঙ্গোলা: আফ্রিকার একই বাস্তবতা
আলজেরিয়ায় বর্তমানে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম আনুমানিক ০ দশমিক ৩৪ থেকে ০ দশমিক ৩৫ মার্কিন ডলার। সেখানে অনেক শহরে বোতলজাত পানির প্রতি লিটার দাম প্রায় একই বা কিছু ক্ষেত্রে বেশি।
একই রকম চিত্র দেখা যায় অ্যাঙ্গোলাতেও। দেশটিতে পেট্রোলের দাম প্রায় ০ দশমিক ৩২ মার্কিন ডলার প্রতি লিটার হলেও শহরভেদে বোতলজাত পানির দাম এর কাছাকাছি কিংবা বেশি হয়ে থাকে।
কেন এমন অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈপরীত্যের পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে। তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোতে সরকার দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানির উপর ভর্তুকি দিয়ে আসছে। ফলে পাম্পে পেট্রোলের দাম কৃত্রিমভাবে কম থাকে।

অন্যদিকে, মরুভূমিপ্রধান দেশগুলোতে পানির উৎপাদন ও পরিশোধন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আবার ভেনেজুয়েলার মতো দেশে অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও সরবরাহ সংকট পানির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্র্যান্ড, প্যাকেটের আকার ও শহরভেদে পানির দামে বড় পার্থক্যও দেখা যায়।
আরও পড়ুন: সকালে পেট্রোল ভরলে কি লাভ হয়? জানুন সত্যিটা
যেখানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে তেলকে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে দেখা হয়, সেখানে কিছু দেশে নিরাপদ পানিই হয়ে উঠেছে তুলনামূলক বেশি দামী। এই বাস্তবতা শুধু অর্থনৈতিক বৈপরীত্যই তুলে ধরে না, বরং পানিসম্পদের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ সংকটের দিকেও ইঙ্গিত দেয়।
তথ্যসূত্র:
GlobalPetrolPrices
Numbeo
Reuters
এজেড