images

অটোমোবাইল

ইলেকট্রিক গাড়ি কি আসলেই পরিবেশবান্ধব?

অটোমোবাইল ডেস্ক

২৫ জুন ২০২৪, ০৩:০২ পিএম

ইলেকট্রিক গাড়ি ও বাইককে বলা হয় পরিবেশবান্ধব বাহন। এসব গাড়ি যেহেতু ব্যাটারিতে চলে তাই এর কার্বন নির্গমন শূন্য। ফলে একে বলা হয় ‘ফিউচার কার’। পরিবেশ বাঁচানোর জন্য নাকি এই গাড়ির  ব্যাপক প্রয়োজন। এমনকি বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে যথেচ্ছ পরিমাণে। তবে পরিবেশকর্মীরা বিষয়টির সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে পারছেন না। তাদের মতে ইভির লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি চার্জিংয়ের জন্য যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে, তা আসছে জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়েই।

জিরো এমিশন! অর্থাৎ, কার্বন নির্গমন শূন্য। ব্যাটারিচালিত গাড়ি বা ইভির অন্যতম সুবিধা এটাই। তাই একে বলা হচ্ছে ‘ফিউচার কার’। পরিবেশ বাঁচাতে গেলে এটাই নাকি রাস্তা। তাই ইভির ব্যবহার বাড়ানোর পক্ষে পক্ষে যুক্তি রয়েছে। পরিবেশকর্মীরা কিন্তু এর সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে পারছেন না। কারণ ইভির লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি চার্জিংয়ের জন্য যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে, তা আসছে জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়েই।

e_car_3

ইউএসএ এবং ইউকে-র কয়েকটি গবেষণা বলছে, ইভি-র সব থেকে খারাপ দিক হলো এর ব্যাটারি। একটি ব্যাটারি তৈরিতে যে পরিমাণ কার্বন এমিশন হয়, একটি পেট্রোল-ডিজেল বা হাইব্রিড গাড়ি তৈরি করতে তা হয় অনেক কম।

গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বাজারে ইভির চাহিদা বাড়ছে হু হু করে। ইউএসএ-তে ইভি চালু হওয়ার পরে তা তেমন জনপ্রিয় হয়নি। কারণ চার্জিংয়ের সমস্যা, একবার চার্জিংয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে না পারাসহ একাধিক কারণে আমেরিকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ইভি থেকে মুখ ফিরিয়েই ছিলেন। কিন্তু, পরিবেশবান্ধব হওয়া সুবাদে বর্তমানে সে দেশে ইভির চাহিদা প্রচুর। ইউরোপের দেশগুলোতেও ইভির চাহিদা আকাশছোঁয়া।

e_car

ইভির ব্যাটারি পুরো চার্জ করতে গড়ে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে বিদ্যুৎ খরচ নেহাত কম নয়।

সাধারণত একটি ইভি ব্যাটারি ০ থেকে ১০০ শতাংশ চার্জ হতে ৩৫-৬০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। তাতে একটি গাড়ি ১৫০/৩০০ কিমি চলতে পারে। বর্তমানে দেশে যত সংখ্যক গাড়ি রয়েছে, তার অর্ধেক ইভি হয়ে গেলে বিদ্যুতের চাহিদাও হবে আকাশছোঁয়া।

আপাত দৃষ্টিতে তাতে লাভ হবে পরিবেশের। কার্বন নির্গমন প্রায় শূন্যই। কিন্তু এত গাড়ির জন্য বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ কোথা থেকে আসবে? ভারতের একজন পরিবেশকর্মী দাবি করেন, ‘এত গাড়ির জন্য যে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন, সেটা তৈরি করা হচ্ছে কয়লা পুড়িয়েই। তার জন্য তো পরিবেশ দূষণের হার বাড়ছে। তা হলে ইভি এসে পরিবেশের তেমন লাভ হলো কই? পরোক্ষে তো সেই পরিবেশেরই ক্ষতি হচ্ছে।’

ev

রয়েছে আরও একটি প্রশ্ন। এই গাড়ির লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির আয়ু শেষ হলে সেগুলো কোথায় ফেলা হবে? দেশে দেশে ইভি ব্যাটারির ‘স্ক্র্যাপ পলিসি’ নিয়ে আলোচনা এখনও খুবই কম। কিন্তু পরিবেশবিদদের চিন্তা, ভবিষ্যতে এই ব্যাটারি ওয়েস্টই অন্যতম মাথাব্যাথার কারণ হতে পারে। কারণ লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির কিছু অংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য হলেও তার কেমিক্যাল ওয়েস্ট অংশই বেশি। সেটা ঠিক ভাবে নষ্ট করা না-গেলে পরিবেশ দূষণ লাগাম ছাড়াবে।

আরও পড়ুন: সবচেয়ে ছোট ও কম দামের ইলেকট্রিক গাড়ি এটাই

‘ইউনাইটেড স্টেটস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ (ইপিএ)-এর গবেষণা বলছে, ইভি-র একটি ব্যাটারি তৈরি করতে যে পরিমাণ কার্বন নির্গমন হয়, একটি সাধারণ গাড়ি তৈরি করতে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হয় তার থেকে কম। ফলে এখনও পর্যন্ত ইভি পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব — এমন দাবি প্রশ্নাতীত নয়।

তা হলে ইভি কীভাবে হবে সবুজ গাড়ি? বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিকল্প শক্তি থেকে তৈরি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে চার্জিংয়ের ব্যবস্থা করা গেলে একে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব বলা যাবে। যে সমস্ত চার্জিং স্টেশন তৈরি হচ্ছে, সেখানে যদি সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার করা যায়, তা হলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।

এজেড