মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
১২ মে ২০২৩, ০২:৫৯ পিএম
বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। বর্তমানে এটি দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় (১৩.১° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.০° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এই ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার (১২ মে) ভোর ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৯৫ কি.মি. দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কি.মি. দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৫৫ কি.মি. দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২০ কি.মি. দক্ষিণ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
আরও পড়ুন: কত কিলোমিটার বেগে আঘাত হানবে ‘মোখা’
এছাড়াও অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এর প্রভাবে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ২ (দুই) নম্বর (পুন.) ২ (দুই) নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হলা হয়েছে।
যেভাবে সৃষ্টি হলো ‘মোখা’
গত ২ মে (মঙ্গলবার) দেশে চলতি মাসে সাগরে দুইটি লঘুচাপ সৃষ্টির পূর্বাভাস দেয় আবহাওয়া অফিস। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা রয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি। পরবর্তীতে ৮ই মে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। তার পরে এটি আরও ঘনীভূত হতে থাকে। পরবর্তীতে এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। এরপর ৯ মে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। ওইদিন দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়। নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে পরবর্তীতে ১১ মে সকালে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। বাড়ানো হয় সতর্ক সংকেত। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়।
‘মোখা’ নামের উৎপত্তি
এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম নিয়ে প্রথম দিকে তৈরি হয়েছে বিভ্রাট। ইয়েমেন এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম করেছে। ইংরেজিতে নাম ‘Mocha’। এরপর থেকেই শুরু আলোচনা। এর বাংলা করলে কী দাঁড়ায়! মোচা নাকি মোখা? এই নিয়ে নানা আলোচনা চলতে থাকে। আসলে নামের অর্থের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এর রহস্য। ইয়েমেনের রাজধানী সানার একটি বন্দরের নাম ‘মোখা’ বা ‘মুখা’। গোটা বিশ্বে কফি রফতানির জন্য বিখ্যাত ইয়ামেন। কফিপ্রেমীদের কাছে ‘মোখা’ অত্যন্ত পরিচিত নাম। সেক্ষেত্রে এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘মোখা’। মূলত, WMO/ESCAP এর সুপারিশ মোতাবেক যেকোনও ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়। ১৩টি দেশের সুপারিশ মোতাবেক ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়। ‘প্যানেল অন ট্রপিকল সাইক্লোন’ নামের তালিকা থেকে নাম ঠিক করে। ১৬৯টি নামের প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রতিটি দেশই নামকরণের সুযোগ পায়। কোনও ব্যক্তি বা দেশ যাতে আঘাত না পায় এমনভাবেই নামকরণ করতে হয় ঘূর্ণিঝড়ের।
৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারনা করছে গবেষকরা। কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, যদি ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে তবে এর প্রভাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ২৫০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার, বরিশাল বিভাগ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোর উপর ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার আশংকা করছি। এছাড়াও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার; ঢাকা ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে ১০০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টির হওয়ার আশংকা করছি।
১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা
ওই গবেষক আরও জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটারের বাতাস বেয়ে যাওয়ার ও ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এই দ্বীপের সকল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকানের মালামাল দোকানে রাখলে সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী দ্বীপের উপর দিয়ে ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটারের বাতাস বেয়ে যাওয়ার ও ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিবেগের বাতাসের কারণে শরণার্থী শিবিরগুলোর ঘরের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি কক্সবাজার জেলার উপর ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে ব্যাপক বন্যা ও ভূমিধ্বসের প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘মোখা’র প্রভাবে সাগরে ২৮ ফুট উচ্চতার ঢেউ
প্রস্তুত মন্ত্রণালয়
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতির কথা জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। বুধবার (১০ মে) তিনি বলেন, আমরা সবদিক থেকেই প্রস্তুত আছি। প্রতিবারের মতো ইনশাল্লাহ এবারও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করতে পারব। সেনা, নৌ, কোস্টগার্ড প্রস্তুত আছে। এটা সুপার সাইক্লোন হবে, এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এটি ১৩ মে রাত থেকে ১৪ মে সকালের মধ্যে আঘাত হানতে পারে। বাংলাদেশের কক্সবাজারে এটি আঘাত হানতে পারে। বিশেষ করে সেন্টমার্টিনের নিচু এলাকায় আঘাত হানতে পারে। রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার একটা আশঙ্কা আছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের জন্য নগদ ২০ লাখ টাকা, চাল এবং শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি গভীর সমুদ্র থেকে সব নৌযানকে সরিয়ে আনা হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
উপকূলজুড়ে প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ থেকে ক্ষতি এড়াতে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে প্রস্তুত করা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। এরই মধ্যে কক্সবাজার জেলায় ৫৭৬ সাইক্লোন সেন্টার পরিষ্কার করা হচ্ছে। এছাড়াও জেলার ২০ লাখ নগদ টাকা, ১৫০ মেট্রিক টন চাল, তিন টন বিস্কুট, তিন টন শুকনো কেক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলার প্রতিটি উপজেলায় পাঁচ টন চাল পাঠানো হয়েছে। কক্সবাজার সদর, মহেশখালি, কুতুবদিয়া ও টেকনাফে দেড় লাখ নগদ টাকা পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ৪৯০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন মজুদ রয়েছে। আরও পাঁচ লাখ টাকা ও পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
এছাড়াও টেকনাফ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬৩টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া উপকূলের মানুষকে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। টেকনাফের ইউএনও মো. কামরুজ্জামন জানান, টেকনাফে মোখার তেমন প্রভাব পড়েনি এখনও। সেন্টমার্টিনসহ টেকনাফ উপজেলায় ৬৩টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিনের জন্য শুকনো খাবার, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণের পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে খুলনায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলার জন্য ৪০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়াও উপকূলের মানুষকে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র থেকে জানা গেছে, খুলনার ৪০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এরমধ্যে কয়রায় ১১৭টি, দাকোপ উপজেলায় ১১৮টি, পাইকগাছায় ৩২টি, বটিয়াঘাটায় ২৭টি, রূপসায় ৩৯টি, ফুলতলায় ১৩টি, দিঘলিয়ায় ১৬টি ও ডুমুরিয়ায় ২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে।
বাগেরহাটের ৪৪৬ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, সরকারের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে জরুরি সভা করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। দুর্যোগের সময় যাতে স্থানীয় লোকজন আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য জেলার ৪৪৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ত্রাণ হিসেবে ৫২২ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে এবং দশ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন থেকে সরিয়ে আনা হচ্ছে সব পর্যটক
নোয়াখালীতেও সরকারি কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৪৬৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও সিপিপির ৮ হাজার ৩৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক। এছাড়া নগদ ৯ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা, ৩৮২ মেট্রিক টন চাল ও ২৪৩ বান্ডিল ঢেউটিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্যোগ আঘাত হানার আগেই লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বরিশালে প্রস্তুত করা হয়েছে ৫৪১ আশ্রয়কেন্দ্র। জেলা প্রশাসন জানায়, মোখা মোকাবিলায় জেলায় ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ত্রাণ তহবিলে ৮৯৯ মেট্রিকটন চাল ও ৯ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে। সকল আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা হবে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ, মোমবাতি, ম্যাচ, খাবার স্যালাইন, প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা রাখা হবে।
আরও পড়ুন: ‘মোখা’ মোকাবিলায় পটুয়াখালীতে প্রস্তুত ৭০৩ সাইক্লোন শেল্টার
এদিকে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. শরিফুল ইসলাম জানান, মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭০৩টি আশ্রয় কেন্দ্র এবং ২৩টি মুজিব কেল্লা। মজুদ রাখা হয়েছে নগদ অর্থ ৮ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা, ৪০০ মেট্রিক টন চাল, ১৪৬ বান্ডিল ঢেউটিন এবং গৃহ মঞ্জুরি বাবদ অর্থ ৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এছাড়াও ওষুধ, খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও মজুদ রাখা হয়েছে। দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগউত্তর পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৮ হাজার ৭০০ স্বেচ্ছাসেবক।
এছাড়াও ভোলা বরগুনা পিরোজপুরসহ সকল উপকূলীয় অঞ্চলে প্রস্তুত রয়েছে হাজারো আশ্রয় কেন্দ্র। মজুদ রাখা হয়েছে শুকনা খাবার, ওষুধ, নগদ অর্থসহ সার্বিক প্রস্তুতি।
নৌবাহিনীর প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় কক্সবাজারের ইনানীতে দুই দিনব্যাপী জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তার প্রস্তুতিমূলক মহড়া অনুশীলন শুরু করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। নৌবাহিনী জানায়, মহড়ার অংশ হিসেবে ইনানীতে অবস্থিত নৌবাহিনী জেটি ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উপকূলীয় জেলে ও স্থানীয়দের দ্রুততম সময়ে উদ্ধার, প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের কার্যক্রম অনুশীলন করা হয়। পাশাপাশি সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় নিয়োজিত নৌবাহিনী যুদ্ধজাহাজসমূহে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সহায়তা সচল রাখার জন্য মহড়া পরিচালনা করা হয়। এছাড়া নৌবাহিনী নির্মিত ইনানী জেটি ও তৎসংলগ্ন স্থাপনার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষায়িত সোয়াডস কমান্ডের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এই মহড়ায় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ, নেভাল এভিয়েশনের হেলিকপ্টার, বিশেষায়িত হাইস্পিড বোট ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সোয়াডস সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ছুটি বাতিল
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। ঝড়টিকে কেন্দ্র করে ১৯ জেলার ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার জানান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন উপকূলীয় এলাকাগুলোর ১৯ জেলার ১৪৯টি ফায়ার স্টেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে সবাইকে সতর্ক ডিউটিতে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন।
এছাড়া উপকূলবর্তী দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতি ফায়ার স্টেশনে ৮ জনের সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম, ৫ জনের প্রাথমিক চিকিৎসক দল এবং ৬ জনের একটি করে ওয়াটার রেসকিউ টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব এলাকায় রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত ১০ হাজার ৬০৩ জন ভলান্টিয়ার। প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জামসহ অ্যাম্বুলেন্স, জেমিনি বোট, চেইন স, হ্যান্ড স, রোটারি রেসকিউ স, স্প্রেডার, মেগাফোন, র্যামজ্যাক বা এয়ার লিফটিং ব্যাগ, ফার্স্ট এইড বক্স ইত্যাদি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারণে আগামী শুক্র ও শনিবার খোলা থাকবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অফিস।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) এ সংক্রান্ত নোটিশ জারি করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানে প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় খোলা থাকবে। মন্ত্রণালয়ের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের যথাসময়ে অফিসে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
টিএই/এমএইচটি