বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

খরতাপে পুড়ছে জমিন, বৃষ্টির জন্য ফরিয়াদ

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

খরতাপে পুড়ছে জমিন, বৃষ্টির জন্য ফরিয়াদ

গত দশ দিন ধরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকা থেকে কুষ্টিয়া যশোর হয়ে সাতক্ষীরার সুন্দরবন পর্যন্ত তাপমাত্রা ৩৮-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়েছে। কোথাও বৃষ্টির দেখা নেই। বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় সরাসরি সূর্যতাপে হুলফুটানো গরম অনুভূত হচ্ছে। ফ্যানের নিচেও তীব্র গরম। কোথাও স্বস্তি নেই।

১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এরপর ১৯৮৯ সালের ২১ এপ্রিল বগুড়ায় তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল ৪৪ ডিগ্রি। গত তিন দিনে যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল ঢাকার তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।


বিজ্ঞাপন


আবহাওয়া বিভাগ বলছে, ২০ এপ্রিলের আগে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম। বরং তাপমাত্রা আরও বাড়বে। এমনকি তা অতীতের রেকর্ড অতিক্রম করতে পারে।

আরও পড়ুন: কেন বাড়ছে তাপমাত্রা? 

আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল তীব্র খরতাপপ্রবণ জেলাগুলোতে তাপমাত্রার সর্বোচ্চ পারদ উঠেছিল রাজশাহীতে ৪০.৬, বগুড়ায় ৩৮.৫, ঈশ্বরদীতে ৪০.৮, চুয়াডাঙ্গায় ৪১.৭, যশোরে ৪০.৮ এবং সাতক্ষীরায় ৪০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

hot2


বিজ্ঞাপন


আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি বদলে যাওয়ায় এখন উঞ্চতম এপ্রিল মাসের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিসাব করা হয় ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার গরমের তীব্রতা ব্যাখ্যা করে আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা ঢাকা মেইলকে বলছিলেন, বাতাসে জলীয় বাষ্প কমে যাওয়া এবং সূর্যের নির্নিমেষ উত্তাপে অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন: রাজধানীতে বৃষ্টির দেখা মিলবে কবে?

এই আবহাওয়াবিদ বলেন, শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা থাকে ৯০/৯৫ শতাংশ। এরসাথে ঠান্ডা বাতাস শীতের অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়। গরমে ঠিক বিপরীত। শনিবার (১৫ এপ্রিল) সকালে ঢাকার বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৬০ শতাংশ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আর্দ্রতা কমে ২২ শতাংশে নামে। সূর্যকিরণে ক্রমেই পরিস্থিতি অহনীয় হয়ে ওঠে।

আফরোজা সুলতানা বলেন, বৃষ্টিপাত এবং বায়ুপ্রবাহ বৃদ্ধি না পেলে গরমের তীব্রতা কমবে না। এ অবস্থা আরও কয়েক দিন থাকতে পারে বলে জানান আগারগাঁও আবহাওয়া অফিসের এই বিজ্ঞানীরা।

এদিকে তীব্র খরতাপে মানুষতো বটেই গৃহপালিত পশুপাখি ও বন্যপ্রাণীরাও চরম কষ্টে। মাঠঘাট খালবিল শুকিয়ে গেছে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে হাজার হাজার টিউবওয়েল অকেজো হয়ে গেছে। পানির স্তর নেমে গেছে আড়াইশ ফুটের নিচে। টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। বৈদ্যুতিক পাম্প লাগিয়েও পানি উঠানো যাচ্ছে না বহু গভীর-অগভীর নলকূপে। মসজিদে আসার আগে বাড়ি থেকে ওজু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যশোর কুষ্টিয়ার গ্রামগুলোতে। চলতি ইরি বোরো মওসুমে ধানের উৎপাদন কম এবং তাতে চিটা হওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষিবিভাগ। বৃষ্টির জন্য ফরিয়াদ করছে দেশবাসী।

আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে বলেন, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির বেশি। সেখানে এবার গত কয়েক দিন ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এপ্রিল মাসকে আবহাওয়া বিভাগের হিসাবে উষ্ণতম মাস হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু চলতি মাসে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী।

22

সিনিয়র আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, তাপপ্রবাহ ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে মৃদু ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটিকে মাঝারি বলা হয়। এর বেশি হলে আবহাওয়া বিভাগ সেটিকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে থাকে। চলতি মাসের প্রথম তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হয়েছে এবং তা ক্রমেই বাড়ছে। মরুভূমির দেশ সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা এখন ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উত্তাপ মরুকরণের লক্ষণ বলে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় ৯ বছরের রেকর্ড তাপমাত্রা, স্থবির জনজীবন

আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ মাসেও দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ৮ মার্চ সীতাকুণ্ডতে সবশেষ বৃষ্টিপাতের পর দেশে আর বৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া বিভাগ সারাদেশের ৪৩টি স্টেশন থেকে এখন উচ্চ তাপমাত্রার খবরই পাচ্ছে।

তবে চলতি মাসে একাধিক কালবৈশাখী বজ্র ও শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস জানিয়ে আবহাওয়া বিভাগের বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেজন্য চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে। ২০ এপ্রিলের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছেন তারা।

এইচজে/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর