আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, গত কয়েক দিন চুয়াডাঙ্গাতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। গ্রীষ্ম বা শীতে এখানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আমার শৈশব কেটেছে চুয়াডাঙ্গাতে।
২০০০ সালের পরের ঘটনা, মনে পড়ে বর্ষার সময় নিয়মিত বৃষ্টি হতো। এমনকি কয়েক দিন ধরে কখনো মুষলধারে আবার কখনোবা হালকা বৃষ্টিপাত হতো। বৃষ্টির পানিতে গ্রামের নদী-নালা, পুকুর কানায় কানায় ভোরে উঠত। গরমের তীব্রতা এতো ছিল না। কিন্তু সময়ের সাথে সব কিছু পরিবর্তন হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিই আবার পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রকারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটিয়ে চলছে। যেমন: খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, অতি বা অনা বৃষ্টি ইত্যাদি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ (গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স রিপোর্ট ২০১০)। ফলে প্রতি বছর বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, এই মাসে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ফলে দেশের কিছু অংশে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে।
বিজ্ঞাপন
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতীতের তুলনায় বর্তমানে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত ৫০ বছরে দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ০.৫% ( আবহাওয়া অধিদফতর)। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আর্দ্রতা বাড়িতে দিচ্ছে। ফলে তাপমাত্রায় তুলনায় বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। অধিক তাপমাত্রা জনজীবনে দুর্ভোগের বয়ে আনছে।
কেন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে?
পৃথিবীর সৃষ্টির পর থেকে তাপমাত্রা হ্রাস/বৃদ্ধি পেলেও ধারণা করা হয় শিল্পবিপ্লবের পর থেকে তাপমাত্রায় বৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নত দেশগুলো তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা রাখছে। কারণ, এসব দেশগুলোতে শিল্প কারখানা তৈরি হচ্ছে। ফলে নানা রকমের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সাথে জ্বালানি পোড়াচ্ছে। বনাঞ্চল উজাড় ও নদী দখল করা হচ্ছে। পরিবেশের কথা বিবেচনায় না রেখে অপরিকল্পিত নগরায়ন করা হচ্ছে।
২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫° সে. এর মধ্যে রাখার কথা বললেও উন্নত দেশগুলো কার্যকারী ভূমিকা রাখছে না। গবেষকরা ধারণা করছেন, তাপমাত্রা এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে কৃষিতে খাদ্য উৎপাদন ব্যহত তবে, তাপদাহ বৃদ্ধি ও অনেক অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে।
ফলে, এখনই পরিবেশ বান্ধব কর্মসূচি হাতে নিতে হবে, উন্নত ও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে দায়ী দেশগুলোকে কার্যকারী ভূমিকা পালন, ক্লাইমেট ফান্ডের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা করার মাধ্যমে সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে।
লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
এনএম