বুধবার, ১ মে, ২০২৪, ঢাকা

কয়েক লাখ শিশুর জন্ম সনদের অপেক্ষা ঘুচবে কবে?

বেলাল হোসেন রাজু
প্রকাশিত: ০৫ মার্চ ২০২৩, ০৮:২৬ পিএম

শেয়ার করুন:

কয়েক লাখ শিশুর জন্ম সনদের অপেক্ষা ঘুচবে কবে?

ডাস্টবিনে পাওয়া শিশু ময়না। আর রাতুলকে চায়ের দোকানে রেখে পালিয়ে গেছে মা। টিয়াকে পাওয়া গেছে ডাস্টবিনে। ময়না, রাতুল ও টিয়ার মতো ৩৫টি শিশুর আশ্রয় হয়েছে কল্যাণপুরের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার আশ্রমে। এই আশ্রমের সবগুলো শিশুই কুড়িয়ে পাওয়া। যাদের পাওয়া গেছে রাস্তায়, নদর্মা, ডাস্টবিন ও হাসপাতালে বারান্দায়।

এই শিশুদের মা-বাবার পরিচয় না থাকায় জন্ম সনদ করতে সংকটে পড়তে হয় আশ্রয় দেওয়া প্রতিষ্ঠান দেশের বৃহত্তম আশ্রম চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারকে। শুধু এই শিশুরাই নয়, তাদের মতো কয়েক লাখ শিশুর মা-বাবার পরিচয় না থাকায় তারা জন্ম সনদ থেকে বঞ্চিত। ফলে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকেও নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছে এই শিশুরা। 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: সহজ হচ্ছে জন্মনিবন্ধন, লাগবে না বাবা-মায়ের সনদ

অসহায়, ঘরহারা ও পরিবার বঞ্চিত বৃদ্ধ ও শিশুদের গত আট বছর ধরে আশ্রয় দিয়ে আসছে সমাজ কর্মী মিল্টন সমাদ্দার। অজ্ঞাত পরিচয় শিশুদের জন্ম সনদ করতে গিয়ে তিনি বেশ ভোগান্তিতে পড়েন। তিনি অভিযোগ করেন, আমার আশ্রমে বর্তমানে ৩৫টি শিশুর আশ্রয় হয়েছে। কিন্তু অনেক দৌড়ঝাঁপ করেও অনেক দিন শিশুদের জন্ম সনদ করতে পারিনি। সমাজ কল্যাণ এবং সিটি কপোরেশনে কয়েকবার গিয়েছি, কিন্তু বার বারই খালি হাতে ফিরে এসেছি। তারপর অজ্ঞাত পরিচয় এসব শিশুর জন্ম নিবন্ধনের জন্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে পর পর কয়েকবার চিঠি পাঠিয়েছি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে আমাদের আশ্রয়ে থাকা শিশুদের জন্ম সনদ করার অনুমতি পেয়েছি। কিন্তু কথা হলো, এমন শিশুর সংখ্যা তো কয়েক লাখ। তাদের কী হবে? এটার একটা স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।

child2

এনজিও কর্মীরা বলেন, অজ্ঞাত পরিচয় এই শিশুরা জন্ম সনদ বা পরিচয়পত্র না পাওয়ায় বিভিন্নভাবে সামাজিক ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পরিচয়পত্র না থাকায় এই শিশুরা স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না, চিকিৎসা নিতে পারছে না এবং প্রতিবন্ধী ভাতা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি বিভিন্নভাবে সামাজিক সীমাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে এই শিশুরা।


বিজ্ঞাপন


বেসরকারি সংগঠন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্স বাংলাদেশের (শি) পক্ষে আইনজীবী তাপস কান্তি বল গত বছর ১২ জুন পথশিশুদের জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ জুন হাইকোর্ট এক রুলে দেশের ১৬ লাখ পথশিশুকে জন্মনিবন্ধন সনদ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং পথশিশুদের জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চান।

এদিকে ‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন’ বলছে, শিশুর জন্মনিবন্ধনে মা-বাবার সনদ আর লাগবে না। তবে বিষয়টি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

এ ব্যাপারে মানবাধিকার কর্মী আসাদুজ্জামান শিবলু বলেন, জন্মের পর হাজার হাজার শিশুর স্বজনরাই রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে। কিন্তু এই শিশুরা তো এ দেশে জন্মগ্রহণ করেছে। জন্ম সনদ এবং সব ধরনের নাগরিক সুবিধা তাদের অধিকার। সরকার যেন এই শিশুদের জন্ম সনদের অধিকার খুব দ্রুত নিশ্চিত করে।

cc

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, পথশিশু ও পরিচয়হীন শিশুদের জন্মসনদ নিয়ে জটিলতা না কাটলে প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করব। 

সমাজকর্মী মিল্টন সমাদ্দার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই শিশুরা কি এ দেশের নাগরিক না? জন্ম সনদ তাদের অধিকার। এটি দ্রুত নিশ্চিত করা অনেক বেশি জরুরি।

এ ব্যাপারে কথা হয় সমাজ সেবা অধিদফতরের এক কর্মকর্তা সঙ্গে। তিনি নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘এই শিশুরা জন্ম সনদ না পাওয়া খুবই দুঃখজনক। আমরাও চাই পথশিশুসহ পরিচয়হীন শিশুরা জন্ম সনদ পাক। তাদের অধিকার নিশ্চিত করা অবশ্যই রাষ্ট্রের দায়িত্ব।’

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর