২৫ জন তরুণ স্বেচ্ছাসেবীর ছবি ও অভিজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে নারী ও কৈশোর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, অধিকার নিয়ে ফটোভয়েস প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, মাসিক নিয়মিতকরণ, গর্ভপাত পরবর্তী সেবা, প্রজননে জবরদস্তি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা এবং নারী ও কিশোরীদের অধিকার ভঙ্গসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে ফিউদ্দিন শিল্পালয়ে এ প্রদর্শন অনুষ্ঠিত হয়। কানাডা সরকারের অর্থায়নে ও হেলথব্রিজ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আইপাস বাংলাদেশ এবং এর সহযোগী সংস্থাগুলোর বাস্তবায়িত ‘ইম্প্রুভিং এসআরএইচআর ইন ঢাকা’ প্রকল্পের পক্ষ থেকে ‘সাইলেন্ট ফ্রেমস লাউড ভয়েসেস: এক্সপ্লোরিং এসআরএইচআর থ্রু কমিউনিটি লেন্স’ শীর্ষক ফটোভয়েসটি প্রদর্শিত হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রদর্শনীটি সকাল ১০ টায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয় এবং বেলা ১২ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। ফটোভয়েস প্রদর্শনীসহ এই উদ্যোগের কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে আইপাস বাংলাদেশ এবং মাঠ পর্যায়ে উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করেছে সিরাক বাংলাদেশ।
আয়োজকরা বলছেন, গণঅংশগ্রহণমূলক গবেষণাকর্মের মাধ্যমে অভিনব এবং অংশগ্রহণমূলক ফটোভয়েস পদ্ধতি ব্যবহার করে শহরকেন্দ্রিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ক সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাগুলোকে তুলে আনাই ছিল এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। প্রদর্শনীতে প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা সিরাক বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ২৫ জন তরুণ স্বেচ্ছাসেবীর (প্রজনন স্বাস্থ্যবন্ধু) সংগৃহীত ২৬টি ছবির গল্পের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার নিম্ন আর্থ-সামাজিক এলাকায় বসবাসকারী নারী ও কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার (SRHR) বিষয়ক সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর আলোকপাত করা হয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের স্বতঃস্ফূর্ত সম্পৃক্ততা এবং আগ্রহ তুলে ধরা হয়েছে।
প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত ছবির গল্পগুলোতে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, মাসিক নিয়মিতকরণ, গর্ভপাত পরবর্তী সেবা, প্রজননে জবরদস্তি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা এবং নারী ও কিশোরীদের অধিকার ভঙ্গসহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এসব বিষয়ে আরও বৃহত্তর পর্যায়ের আলোচনা এবং কমিউনিটির ঐক্যবদ্ধতা ও সচেতনতা সৃষ্টি করাই এই ফটোভয়েস প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।
বিজ্ঞাপন
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্টের সাবেক পরিচালক ও অতিরিক্ত উপসচিব এএফএম আলাউদ্দিন খান। প্রদর্শনীর গ্যালারি ঘুরে এসে তিনি বলেন, ছবিগুলো নীরব। কিন্তু কিছু না বলেও এই ছবিগুলো আমাদের অনেক বার্তা দেয়। যা সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে পার্থক্যগুলোকে তুলে ধরে। ছবি ও গল্পগুলোর মাধ্যমে আমাদের সামাজিক অবস্থান, শিক্ষার অবস্থা ও অসঙ্গতিগুলো উঠে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তনগুলো অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু সঠিক শিক্ষা ও তথ্যের অভাবের কারণে তারা নানা ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় এবং ফাঁদে পড়ে। তারা বেশিরভাগ সময়েই থাকে কল্পনার জগতে। তাই আমাদের দেশের কিশোর-কিশোরীদের জন্য এই প্রদর্শনীর মতো উদ্যোগ নেওয়া দরকার। যা তাদের প্রয়োজন ও চিন্তাভাবনার বিষয়টিকে বিবেচনা করে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাইকমিশন অব কানাডা ইন বাংলাদেশের হেড অব কো-অপারেশন জো গুডিংস বলেন, এই প্রদর্শনীর ছবিগুলো দেখে যদি অনুভব করা যায়, তবেই প্রকৃত দৃশ্যপট বোঝা সম্ভব। এভাবে যদি সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করা যায়, তবে সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াটাও সহজ হবে।
ফটোভয়েস প্রদর্শনী এই উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এই প্রদর্শনীটি আমাদের ভাবতে বাধ্য করেছে যে, আমাদের আসলে কী পরিবর্তন আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আইপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. সাইদ রুবায়েত বলেন, আমরা আমাদের সমাজের বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্যই গবেষণা করি। ‘ফটোভয়েস ইনিশিয়েটিভ’ আজকাল প্রতিকূলতা এবং অজ্ঞতাকে মোকাবেলা করার জন্য একটি হাতিয়ারের মতো কাজ করে। আমরা এই প্রদর্শনীতে ‘ফটোভয়েস’ পদ্ধতিই ব্যবহার করেছি। যেখানে সরাসরি ভুক্তভোগী এবং তাদের ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে প্রকৃত গল্পগুলো আমরা শুনতে পেরেছি। আপনাদের উপস্থিতির মাধ্যমে আমাদের এই অনুষ্ঠানটিকে আরও অর্থবহ করে তোলার জন্য আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য (সার্ভিসেস) পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান সিদ্দিকী, অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (সিসিএসডিপি) ডা. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সিরাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত প্রমুখ।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে ইম্প্রুভিং এসআরএইচআর ইন ঢাকা (নিরাপদ প্রজনন স্বাস্থ্য) প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা বাপসা, সিরাক বাংলাদেশ, আরএইচস্টেপ-এর নির্বাহী পরিচালক, ওজিএসবি-এর প্রেসিডেন্ট, আইপাস বাংলাদেশ ও প্রকল্পের কর্মকর্তারা, স্বেচ্ছাসেবী ও কমিউনিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ইম্প্রুভিং এসআরএইচআর ইন ঢাকা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে আইপাস বাংলাদেশ নামক একটি আন্তর্জাতিক এনজিও। সিরাক বাংলাদেশ, ওজিএসবি, বাপসা এবং আরএইচস্টেপ মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আইপাসের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। প্রকল্পটি পরিবার পরিকল্পনাসহ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে মোট ১৫৭টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে সহায়তা দিয়ে আসছে। এছাড়া গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের নগর এলাকায় বসবাসকারী দরিদ্র ও অতি-দরিদ্র নারী ও কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার, বিশেষ করে পরিবার পরিকল্পনা, মাসিক নিয়মিতকরণ (এমআর) এবং গর্ভপাত-পরবর্তী সেবার সুরক্ষা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নগরবাসীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে যৌন ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা নিরসনে কাজ করছে।
প্রকল্পটির কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং এর অধিদফতরগুলো, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট এবং বিকেএমইএ সহযোগিতা প্রদান করছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পটি ২০২১ সালের অগাস্ট মাস থেকে এর কার্যক্রম শুরু করেছে, যা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান থাকবে।
এমএইচ/এমএইচটি