বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কখনই, কোনো পরিস্থিতিতেই ধর্ষণের শিকার নারী ও কন্যার সাথে ধর্ষকের বিয়েকে সমর্থন করে না এবং করবে না বলে জানিয়েছে নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি। মহিলা পরিষদের বরাত দিয়ে এ ধরনের মন্তব্য বিভ্রান্তিকর ও মর্যাদাহানীকর বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত লেখক ও গবেষক গওহার নঈম ওয়ারার ‘অভিমত-বিশ্লেষণ’ কলামে প্রকাশিত নিবন্ধে ‘দেশে ধর্ষকতোষণ চর্চা বন্ধ হোক’ শিরোনামে কলামের প্রতিবাদে এ কথা জানিয়ে মহিলা পরিষদ।
বিজ্ঞাপন
সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ৯ জানুয়ারি জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ‘অভিমত-বিশ্লেষণ’ কলামে লেখক ও গবেষক গওহার নঈম ওয়ারার ‘দেশে ধর্ষকতোষণ চর্চা বন্ধ হোক’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ২৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখের সংবাদ সম্মেলনের বরাত দিয়ে ‘দেশের প্রায় প্রাচীনতম নারী সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ধর্ষণের শিকার মেয়েশিশু ও নারীর সঙ্গে ধর্ষকের বিয়ে দেওয়ার আহহ্বান জানিয়েছে বলা হয়ে।
নিবন্ধে আরও বলেছে, দেরিতে হলেও নিতান্তই ‘সবজি মার্কা’ এই আহ্বানের জন্য তাদের সাধুবাদ জানাতে হয়’- যা অসত্য, সংগঠনের মর্যাদাহানিকর এবং সকলের জন্য বিভ্রান্তিকর। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কখনই, কোনো পরিস্থিতিতেই ধর্ষণের শিকার নারী ও কন্যার সাথে ধর্ষকের বিয়েকে সমর্থন করে না, করবেও না।
এতে আরও বলা হয়, মহিলা পরিষদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে গত ২৫ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তন সংবাদ সম্মেলন করে। এতে লিখিত বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ও দাবি করা হয়, ধর্ষণের ঘটনায় যেকোনো ধরণের সালিশি মীমাংসা এবং ধর্ষণকারীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মডারেটর ও সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম সাম্প্রতিককালে সংঘটিত ধর্ষকের সাথে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ে বন্ধের দাবি জানিয়েছে। আইনে এ ধরনের বিয়ে দিয়ে সমাধানের কথা বলা নেই। এতে নারীর আত্মমর্যাদার উপরে আঘাত আসে, তার নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হয়। নারীর মর্যাদা ও মানবাধিকার রক্ষায় ধর্ষকের সাথে বিয়ে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য, কাম্য নয়।
নিজের কার্যক্রম তুলে ধরে বরা হয়, করোনাকালে গত ৩ আগস্ট ২০২১ সালে সারাদেশে ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পরেও ধর্ষণ মামলায় বিয়ের শর্তে জামিনের ঘটনায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ উদ্বেগ ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মহিলা পরিষদ ধর্ষণের শিকার নারী ও কন্যার সাথে ধর্ষকের বিবাহ দেওয়া সংক্রান্ত আদালতের আদেশ প্রদানের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অ্যার্টনি জেনারেলকে স্মারকলিপি দেয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সংবিধান ও রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন সমুন্নত রাখার বিষয়ে কার্যক্রর ভূমিকা গ্রহণের জন্য আবেদন জানায়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে বেআইনি সালিশের মাধ্যমে ধর্ষকের সাথে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ের বিরোধিতা করে আসছে। এমনকি আদালত প্রাঙ্গনে ও জেলগেটেও সংঘটিত এই ধরনের ঘটনার মীমাংসার বিরোধিতা করছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মনে করে, ধর্ষককে অবশ্যই বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে দৃষ্টান্তমূলত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
এ ধরনের অসত্য, বিকৃত তথ্য নারীর প্রতি সমাজের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীকে উৎসাহিত করবে এবং এমন অসত্য, বিভ্রান্তিকর তথ্য সংগঠন এবং নারী আন্দোলন সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা দেবে। ধর্ষণের ঘটনার শিকার নারী ও কন্যার সাথে ধর্ষকের বিয়ে না দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সুস্পষ্ট অবস্থান রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এমএইচ/এইউ

