শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ঢাকা

ফেসবুকে বৃক্ষপ্রেমীদের আড্ডাখানা

তাসলিমা পারভীন বুলাকী
প্রকাশিত: ০২ মার্চ ২০২২, ০৯:১১ এএম

শেয়ার করুন:

ফেসবুকে বৃক্ষপ্রেমীদের আড্ডাখানা

সকাল সকাল ফেসবুক খুলতেই খুশিতে মন ভরে উঠলো রুমানা মেহজাবিনের। কেউ একজন তাকে কিছু গাছ উপহার দিয়েছেন। ফেসবুকের নোটিফিকেশন, ম্যাসেঞ্জার ও মোবাইলের মেসেজ তাই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাইরে বের হওয়ার জন্য মুহূর্তেই তৈরি হলেন রুমানা। বাসার কাছের  কুরিয়ার সার্ভিস থেকে সংগ্রহ করে আনলেন গাছগুলো। বাসায় এসে গাছগুলোর ছবি তুলে ধন্যবাদ দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্টও দিলেন। 

বলা হচ্ছে নগরের ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ বৃক্ষপ্রেমীদের আড্ডাখানার কথা। গ্রুপটির  নাম ‘ইনডোর গ্রিনারি লাভারস।'


বিজ্ঞাপন


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশে যতগুলো বৃক্ষপ্রেমীদের গ্রুপ আছে তার মধ্যে সক্রিয় গ্রুপ এটি। এর সক্রিয় সদস্য সংখ্যা সাড়ে ১২ হাজারেরও বেশি।

এই গ্রুপের প্রথম এবং প্রধান বৈশিষ্ট হলো এখানে সকলে তাদের ইনডোর প্লান্টের ছবি পোস্ট করেন। গ্রুপের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন গাছ, চারা বা কাটিং বিনিময় করেন। কেউ কেউ ভালোবেসে নতুন বাগানিদের গাছ উপহারও দেন।

এছাড়া, গ্রুপে চলে বিভিন্ন কনটেস্ট। এতে বিজয়ীদের প্রত্যেককে গাছ উপহার দেন গ্রুপের অ্যাডমিন দিলরুবা খুরশিদ। গাছ নিয়ে ইট, পাথরের এই কনক্রিটের শহরে এক ঝাঁক মানুষের এতো মাতামাতি, এ নিয়ে বেশ আনন্দিত তিনি। 

উপহার পেয়ে রুমানা মেহজাবিন বলেন, ‘উপহার পেতে কার না ভালো লাগে, কিন্তু সেটি যদি হয় বই বা গাছ তাহলে তো কথাই নাই। মনতো আহ্লাদে আটখানা হবেই। আমার ছোট্ট বারান্দাটা সবুজে ভরে ফেলতে চাই। এজন্য বেশ কিছু গাছ কিনেছিলাম। কিন্তু কেন জানি, অনেক গাছ মরে গেল। এরপর আর তেমন গাছ কেনা হয়নি। স্বল্প মূল্যে বা উপহার হিসেবে গাছ পেতে এই গ্রুপে পোস্ট দিয়েছিলাম। তা দেখে যোগাযোগ করেন গ্রুপের এক সদস্য। নাম ঠিকানা নিয়ে সেদিনই তিনি গাছগুলো কুরিয়ারে পাঠিয়েছেন। পোস্ট দেওয়ার পরের দিনই এতোগুলো গাছ পেয়ে খুব ভালো লাগছে। এমন গ্রুপ থাকলে এখন সহজেই আমার বারান্দা সবুজে ভরে উঠবে।’

facebook group flower picture

গ্রুপ অ্যাডমিন দিলরুবা খুরশিদ বলেন, ‘আমি সবুজ ভালোবাসি। ফুল থেকেও সবুজ গাছ ও প্রকৃতি আমাকে বেশি টানে। আমার মনে হয়, রুক্ষ আবহাওয়ার এই জঞ্জালের শহরের ঘরের কোনে এক টুকরো সবুজ থাকলে ঘরটা আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। সেই ভাবনা থেকে আমার বাসায় বাগান করা। বলতে গেলে দিনের বেশির ভাগ সময় এই গাছের পেছনে ব্যয় করি। গাছ লাগানো, তাদের যত্ন করা, কাউকে গাছ উপহার দেওয়া আমার প্যাশন। মানুষ অর্থ সঞ্চয় করে ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্য। আর আমি আমার মায়ের দেওয়া সঞ্চিত অর্থ খরচ করি গাছের পেছনে। এতে আমি এক ধরনের সুখ পাই।’ 

দিলরুবা খুরশিদ আরও বলেন, ‘আমি দেখলাম মানুষ প্রচুর সময় নষ্ট করে। ছেলেরা আড্ডা দেয়। নারীরা গালগল্প করে সময় কাটায়। শিক্ষার্থীরা অলস সময়ে বিপথে চলে যায়। আমি চাইতাম, মানুষের অবসর সময়টা প্রাণশক্তিতে ভরে ওঠুক। ভালো কাজে সময়টা কাটুক। ঠিক এজন্যই গ্রুপটা খোলা। প্রথমে বেশ ভালো সাড়া পেলাম। দেখলাম গাছ নিয়ে মানুষের আগ্রহ অনেক। সেই থেকে গাছ নিয়ে গ্রুপ খোলা। এখানে সকলেই গাছকে ভালোবেসে ছবি পোস্ট করে। যাদের গাছ সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই, তারা খুব সহজেই গ্রুপের অন্য সদস্যদের কাছে ধারণা পান। এছাড়া গ্রুপে প্রায় সময়ই বিভিন্ন ধরনের কনটেস্ট চলে। সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে কনটেস্টে অংশগ্রহণ করেন। তাই আগ্রহ বাড়াতে কনটেস্টে বিজয়ীদের গাছ উপহার দেই।’  

facebook group flower picture 2

গ্রুপে কনটেস্ট বিজয়ীদের মধ্যে প্রথম হওয়া জেনিস আক্তার বলেন, ‘এই গ্রুপের কনটেস্টে অংশগ্রহণ করে খুব ভালো লেগেছে। গ্রুপের অ্যাডমিন ১০ জনকে পুরস্কার দিতে চেয়ে ২৬ জনকে পট ও মিডিয়াসহ গাছ পুরস্কার দিয়েছেন। আমাকে সিরামিকের পটসহ অ্যাগ্লোনিমা দিয়েছেন। অ্যাগ্লোনিমা খুব দামি ও আভিজাত্যের প্রতীক।  কিন্তু দামটা বড় নয়। গাছের সংগ্রহ বাড়াতে এটা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। এই যে গাছের পাশে থাকা, সবুজকে ভালোবাসা এটাই গ্রুপের লক্ষ্য।’
 

গাছের প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা কাজ করে শাওনের। বাসায় সুন্দর সুন্দর গাছ লাগানো তার নেশা। তাই ছোট্ট বাসাজুড়ে বিভিন্ন রকম গাছ লাগিয়েছে সে। তার বাসার বারান্দা, ড্রইংরুম, রান্নাঘর, ওয়াশরুমেও সবুজের দেখা মেলে। বাদ যায়নি ঘরের ছোট্ট কোনাও। 

গ্রুপটি সম্পর্কে ঢাকা মিরপুরের শাওন বলেন, ‘অবসর সময়ে আমি গাছের পরিচর্যা করি। ঘরের কোনে সবুজ গাছ মানেই চোখের শান্তি, মনের শান্তি। আমার গাছগুলোর ছবি তুলে গ্রুপে পোস্ট দিতে খুব ভালো লাগে। নিজের সংগ্রহে থাকা সুন্দর গাছের পোস্ট দিলে নিজেকে ধনী বলে মনে হয়।’

facebook group flower picture 3

গ্রুপের মডারেটর মো. উসামা ইবনে ইসলাম বলেন, ‘গাছের প্রতি ভালো লাগা থেকেই গ্রুপে সময় দেই। গাছের যত্ন সম্পর্কে গ্রুপে পরামর্শ দেই। আর দিলরুবা আপুর দেওয়া গিফটগুলো আমিই সবাইকে পৌঁছে দিয়ে থাকি। আমি চাই, এই শহরের প্রতি ঘরে অল্প হলেও সবুজের ছোঁয়া থাকুক। কারণ যান্ত্রিক জীবনে সজীবতা ফিরে আনতে সবুজের জুড়ি নাই।’ 

 

এজেড/টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর