শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

গাড়ির বাতাসের চাপে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে আন্তর্জাতিক পুরস্কার

আসাদুজ্জামান লিমন
প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২২, ০৯:২৮ এএম

শেয়ার করুন:

গাড়ির বাতাসের চাপে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে আন্তর্জাতিক পুরস্কার

হাইওয়ে বা মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি চলে। এগুলো দ্রুতগতিতে গন্তব্যে ছুটি যায়। গতির কারণে হাইওয়ের দুই পাশে প্রচণ্ড বাতাসের চাপ সৃষ্টি করে। বায়ুর এই চাপ কাজে লাগিয়ে আইডিইবির রিসার্চ অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের ৩ ইনোভেটর টারবাইন উদ্ভাবন করেছেন। যা থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। এই উদ্ভাবন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। 

innovationথাইল্যান্ড শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস অব দ্যা ভোকেশনাল এডুকেশন কমিশনের উদ্যোগে গত ১৬-১৯ আগস্ট দেশটির থাইল্যান্ডের পাংগা প্রদেশে দ্যা সেভেন্থ ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন অন ভোকেশনাল স্টুডেন্টস ইনোভেশন প্রজেক্টের সপ্তম আসর অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতায় ছয়টি  দেশের শিক্ষার্থীরা দুইটি ক্যাটাগরিতে ৯৪টি রিসার্চ প্রকল্প নিয়ে অংশগ্রহণ করে। যেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাটাগরি থেকে বাংলাদেশের প্রজেক্ট ‘হাইওয়ে উইন্ড টারবাইন দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। 


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, ভারত, থেকে ৪০০ জন শিক্ষার্থী তাদের উদ্ভাবিত ইনোভেশনগুলো এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। 

এবার বাংলাদেশের পক্ষে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল থাইল্যান্ডে গিয়ে অংশগ্রহণ করে।

প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন- আব্দুল্লা আল আরাফ, রাহাত উদ্দিন, রেজাউল খান ও টিম লিডার মো. কামরুজ্জামান। 

innovationপ্রতিনিধিদলের সদস্যরা আইডিইবি আইওটি অ্যান্ড রোবটিক্স রিসার্চ ল্যাবে উদ্ভাবিত হাইওয়ে উইন্ড টারবাইন প্রকল্প রিসার্চ পেপারসহ উপস্থাপন করেন। 


বিজ্ঞাপন


থাইল্যান্ড সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী ড. খুনাইং কালায় সোফোনপানিচ বাংলাদেশ টিমের প্রকল্প দেখেন ও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন।

তরুণদের উদ্ভাবিত উইন্ড টারবাইনে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু আইওটি সেন্সর। যার সাহায্যে ওই মহাসড়কের তাপমাত্রা, বাতাসের আদ্রতা ও কার্বনডাইঅক্সাইডের পরিমান জানা যাবে। যা মহাসড়কের আশেপাশের মানুষদের অ্যাপের মাধ্যমে সরবরাহ করবে। 

inno vationহাইওয়ের বাতাসের চাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছেন রাহাত উদ্দিন। যিনি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছেন।  এখন প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিতে ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেট্রোনিক্স ইঞ্জিনিইয়ারিংয়ে বিএসসি করছেন।

রাহাত ঢাকা মেইলকে বলেন, দেশে জীবাশ্ম জ্বালানি নিঃশেষ হওয়ার পথে। এই সময়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের তাগিদ উঠেছে। যা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস করার অন্যতম উপায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি, কারণ এখানে কিছু সমস্যা বিদ্যমান। প্রথমত আমাদের দেশে যে টারবাইনগুলো ব্যবহার হচ্ছে এগুলো আকারে অনেক বড়। রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অনেক বেশি। এই টারবাইনগুলোর জন্য অনেক বেশি পরিমানে বাতাসের চাপ প্রয়োজন। এতে করে দেশের ভেতর বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে পারিনি। এছাড়া এই টারবাইনগুলোর ব্লেড পাখির জন্য বিপদজনক। তাই এই সব কিছু বিবেচনা করে আমরা একটি টারবাইনের ডিজাইন করি, যা আমাদের হাইওয়ে এবং নৌপথে জাহাজ গুলোতে স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।

innovationপ্রকল্পের অন্যতম সদস্য আব্দুল্লা আল আরাফ। যিনি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে এখন সাউথ ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিইয়ারিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী।

তিনি জানান, এই প্রকল্পের মূল উদ্দ্যেশ হচ্ছে দেশে বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদ্ধতিকে আরো সহজ করা। যাতে করে দেশে সোলারের পাশাপাশি বায়ু বিদ্যুৎ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এই প্রকল্পের আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে- সেন্সরের মাধ্যমে বাতাসে কার্বনের পরিমান ও বায়ু দূষণের পরিমাণ সম্পর্কে মানুষকে জানানো।

innovationপ্রকৌশল শিক্ষার্থীদের দাবি তাদের উদ্ভাবিত টারবাইন দিয়ে ১০০০ ওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। যেই বিদ্যুৎ দিয়ে ১০টি এলইডি লাইট জ্বালানো যাবে। বড় আকারে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিদ্যুতের স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে। 

কম খরচে হাইওয়ে ও নৌযানে উইন্ড টারবাইন উদ্ভাবনে দলটির মেন্টর হিসেবে ছিলেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিইয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. খন্দকার আব্দুল্লা আল মামুন।

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর