প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে ইয়ারবাড এখন আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজ, ভ্রমণ কিংবা বিশ্রামের সময় প্রিয় গান শুনতে বা কথা বলতে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এটি কানে দিয়ে রাখি। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, এই ছোট ডিভাইসটি কতটা জীবাণু বহন করছে? কানের ভেতরের উষ্ণ পরিবেশে ইয়ারবাড দীর্ঘক্ষণ থাকায় এতে ঘাম, মৃত কোষ, ধুলাবালি এবং কানের ময়লা জমা হয়। নিয়মিত পরিষ্কার না করলে এই অদৃশ্য ময়লা কেবল ডিভাইসের ক্ষতি করে না, বরং আপনার কানের অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারে।
সংক্রমণের চারণভূমি ও ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার
বিজ্ঞাপন
কানের ভেতরের অংশ প্রাকৃতিকভাবেই কিছুটা আর্দ্র ও উষ্ণ থাকে, যা ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। যখন একটি অপরিষ্কার ইয়ারবাড কানে প্রবেশ করানো হয়, তখন এটি বাইরের ধুলাবালি ও জীবাণুকে কানের আরও গভীরে ঠেলে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় পরিষ্কার না করা ইয়ারবাডে 'ই. কোলাই' এবং 'স্ট্যাফাইলোকক্কাস'-এর মতো ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে। এর ফলে কানে অসহ্য যন্ত্রণা, চুলকানি, লালচে ভাব এবং পুঁজ হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে 'সুইমার ইয়ার' নামেও পরিচিত।

শ্রবণশক্তি হ্রাস ও কানের ময়লা জমে যাওয়া
কানের মোম বা ময়লা প্রাকৃতিকভাবেই বাইরে বেরিয়ে আসার কথা। কিন্তু ইয়ারবাড ব্যবহারের ফলে সেই ময়লা বের হতে না পেরে ভেতরে জমাট বেঁধে যায়। অপরিষ্কার ইয়ারবাড এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করে এবং ময়লাগুলোকে কানের পর্দার কাছাকাছি ঠেলে দেয়। এর ফলে কানে ভোঁ-ভোঁ শব্দ হওয়া (টিনিটাস), তীব্র ব্যথা এবং সাময়িক শ্রবণশক্তি হ্রাসের মতো সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া ইয়ারবাডে ময়লা জমে থাকায় শব্দের মান কমে যায়, ফলে ব্যবহারকারী ভলিউম বাড়িয়ে শোনেন—যা দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী শ্রবণশক্তি হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিজ্ঞাপন
ত্বকের জটিলতা ও অ্যালার্জির প্রকোপ
ইয়ারবাডে লেগে থাকা তেল, ঘাম এবং ব্যাকটেরিয়া কানের চারপাশের সংবেদনশীল ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যাদের ত্বক সংবেদনশীল বা যাদের একজিমা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অপরিষ্কার ইয়ারবাড ব্যবহারের ফলে ব্রণ, ফুসকুড়ি বা 'কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস'-এর মতো চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় কানের লতি ফুলে যাওয়া বা অনবরত চুলকানিও এই অযত্নেরই ফল।

ডিভাইসের কার্যকারিতা ও দীর্ঘস্থায়িত্ব
অপরিষ্কার ইয়ারবাড কেবল স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, আপনার পকেটের জন্যও ক্ষতিকর। কানের ময়লা যখন স্পিকারের সূক্ষ্ম জালিকায় (Mesh) আটকে যায়, তখন শব্দের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে ডিভাইসটি ঠিকঠাক থাকলেও শব্দ অত্যন্ত ক্ষীণ শোনায়। দীর্ঘদিন এভাবে ময়লা জমে থাকলে স্পিকারটি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যার ফলে অল্প দিনেই আপনাকে দামী ইয়ারবাডটি ফেলে দিয়ে নতুন একটি কিনতে হয়।
আরও পড়ুন: অ্যাপল ওয়াচের জন্মদাতার হাতেই নেই স্মার্টওয়াচ! কারণ জানলে অবাক হবেন
সুরক্ষায় করণীয়: পরিষ্কার রাখার নিয়ম
কানের স্বাস্থ্য এবং ডিভাইসের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন ব্যবহারের পর একটি শুকনো ও নরম কাপড় দিয়ে ইয়ারবাড মুছে ফেলা উচিত। সপ্তাহে অন্তত একবার ৭০ শতাংশ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল এবং কটন সোয়াব দিয়ে ইয়ারবাডের খাঁজগুলো পরিষ্কার করা জরুরি। সিলিকন টিপস থাকলে সেগুলো খুলে সাবান-জলে ধুয়ে ভালোমতো শুকিয়ে পুনরায় ব্যবহার করতে হবে। মাত্র কয়েক মিনিটের এই সচেতনতা আপনার মূল্যবান শ্রবণশক্তি রক্ষা করতে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা খরচ বাঁচাতে সাহায্য করবে।
এজেড

