পৃথিবী আমাদের দৃষ্টিতে শান্ত মনে হলেও এর ভূ-অভ্যন্তরে বিশাল শক্তি লুকিয়ে আছে। এই শক্তিই মাঝে মাঝে পৃথিবীর পৃষ্ঠে বের হয়ে আগ্ন্যুৎপাত আকারে বিস্ফোরিত হয়। আগ্নেয়গিরি থেকে ল্যাভা, ছাই, গ্যাস এবং অন্যান্য পদার্থ বের হয়ে ভূ-ভৌগোলিক ও বাস্তুসংস্থানের পরিবর্তন ঘটায়। আজকের প্রতিবেদনে আমরা জানব কেন অগ্ন্যুৎপাত ঘটে, এর বৈজ্ঞানিক কারণ, আগ্নেয়গিরির প্রকারভেদ এবং এর প্রভাব।
আগ্নেয়গিরি কী?
বিজ্ঞাপন
আগ্নেয়গিরি হল Lithosphere-এর ফাটল বা ভূ-পৃষ্ঠের ওপরে তৈরি পাহাড় বা পর্বত, যার মাধ্যমে মোল্টেন রক বা ম্যাগমা পৃথিবীর পৃষ্ঠে আসে। এটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হলেও কখনো কখনো বিস্ফোরণাত্মক ঘটনা ঘটায়, যা পরিবেশ ও মানবজীবনে প্রভাব ফেলে।

অগ্ন্যুৎপাত কেন হয়?
ভূ-অভ্যন্তরে যখন তাপমাত্রা এবং চাপের প্রভাবে রক গলে মোল্টেন ম্যাগমা তৈরি হয়, তখন তা হালকা হয়ে ওপরের Lithosphere-এর ফাটল বা ভাঙনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর পৃষ্ঠে ওঠে। ম্যাগমার সঙ্গে থাকা গ্যাস এবং চাপের কারণে এটি বিস্ফোরিত হয় এবং ল্যাভা, ছাই ও গ্যাস আকারে বের হয়—এটাই অগ্ন্যুৎপাত।
বিজ্ঞাপন
আগ্নেয়গিরির ধরন: সক্রিয়, নিস্তেজ ও মৃত অগ্নেয়গিরি
সক্রিয় অগ্নেয়গিরি: সম্প্রতি বা নিয়মিত অগ্ন্যুৎপাত করে। উদাহরণ: মাউন্ট ফুজি।
আরও পড়ুন: সাগরে ভূমিকম্প হলে কী হয়?
নিস্তেজ (Dormant) অগ্নেয়গিরি: বর্তমানে শান্ত, ভবিষ্যতে আবার সক্রিয় হতে পারে। উদাহরণ: মাউন্ট রেইনিয়ার।
মৃত (Extinct) অগ্নেয়গিরি: বহু বছর ধরে অগ্ন্যুৎপাত করেনি এবং ভবিষ্যতেও সম্ভব নয়। উদাহরণ: সেন্ট হেলেন্সের প্রাচীন শৃঙ্গ।
অগ্ন্যুৎপাতের ধরণ
ল্যাভা ফ্লো: গলিত পাথর ভূমির উপর ছড়ায়।
পিরোক্লাস্টিক ফ্লো: ছাই, গ্যাস ও পাথরের টুকরা নিয়ে নেমে আসে।
স্ট্রোম্বোলিয়ান বিস্ফোরণ: ছোটখাটো বিস্ফোরণ, চূড়ার কাছে সীমাবদ্ধ।

প্লিনিয়ান বিস্ফোরণ: খুব ধ্বংসাত্মক, প্রচুর ধোঁয়া, ছাই ও গ্যাস ছড়ায়।
অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাব
ধ্বংসাত্মক প্রভাব: বসতবাড়ি ধ্বংস, ফসল নষ্ট, মানুষের প্রাণহানি।
সৃষ্টিশীল প্রভাব: নতুন ভূমি সৃষ্টি, উর্বর মাটি, গরম জল ও জ্বালানির উৎস।
আগ্নেয়গিরি ও অগ্ন্যুৎপাত হল পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ শক্তির প্রকাশ। সক্রিয়, নিস্তেজ এবং মৃত অগ্নেয়গিরি অনুযায়ী এর প্রভাব ও ঝুঁকি ভিন্ন। আধুনিক ভূবিজ্ঞানীরা সিসমোলজি ও জ্যোথরীতিবিদ্যার মাধ্যমে অগ্ন্যুৎপাতের পূর্বাভাস দেওয়ার চেষ্টা করছেন, যা বিপদের সময় সতর্কতা ও পরিকল্পনায় সহায়ক।
এজেড

