শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সাগরে ভূমিকম্প হলে কী হয়?

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১০ এএম

শেয়ার করুন:

সাগরে ভূমিকম্প হলে কী হয়?
সাগরে ভূমিকম্প হলে কী হয়?

সাগরে ভূমিকম্প পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বেশিরভাগ সমুদ্র–উৎপন্ন ভূমিকম্প ঘটে টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া, সংঘর্ষ বা একে–অপরের নিচে সরে যাওয়ার (subduction) কারণে। এসব প্লেট দীর্ঘদিন ধরে যে চাপ জমিয়ে রাখে, তা হঠাৎ মুক্ত হলে সমুদ্রতলের নিচে তীব্র কম্পন সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে সমুদ্রতলের নিচে থাকা আগ্নেয়গিরির লাভা ওঠানামা বা বিস্ফোরণও মাঝারি থেকে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের জন্ম দেয়। এছাড়া মধ্য-মহাসাগরীয় রিজ অঞ্চলে নতুন ভূত্বক তৈরি হওয়ার সময়ও ছোটখাটো ভূমিকম্প স্বাভাবিক ঘটনা।

সাগরে ভূমিকম্প কেন হয়?


বিজ্ঞাপন


সাগরের নিচে ভূমিকম্প হওয়ার প্রধান কারণ হলো টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া। পৃথিবীর ভূত্বক বিশাল প্লেট দিয়ে তৈরি, যেগুলো পরস্পর সংঘর্ষ, সরে যাওয়া বা একে অপরের নিচে ঢুকে যাওয়ার (subduction) সময় তলদেশে চাপ সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিনের জমে থাকা চাপ হঠাৎ মুক্ত হলে সমুদ্রতলে শক্তিশালী কম্পন ঘটে। অনেকসময় পানির নিচে থাকা আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ, যেমন লাভার ওঠানামা বা বিস্ফোরণ, ভূমিকম্প সৃষ্টি করে। আবার মধ্য-মহাসাগরীয় রিজে নতুন ভূত্বক তৈরি হওয়ার সময়ও নিয়মিত ছোটখাটো কম্পন দেখা দেয়।

Capture33

সুনামি সৃষ্টির ঝুঁকি

সাগরে ভূমিকম্পের সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিণতি হলো সুনামি। যখন সমুদ্রতলের বড় অংশ হঠাৎ উপরে ওঠে বা নিচে নেমে যায়, তখন ওপরের পানি অস্বাভাবিকভাবে সরে গিয়ে বিশাল তরঙ্গ তৈরি করে। এই তরঙ্গগুলো অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছুটে গিয়ে উপকূলে আঘাত করলে ভয়াবহ সুনামি দেখা দেয়। সাধারণত ৭ মাত্রার বেশি, অগভীর গভীরতার এবং সাবডাকশন জোনে সংঘটিত ভূমিকম্পে সুনামির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ইতিহাসের বড় বড় সুনামির পেছনে এমন ভূমিকম্পই দায়ী।


বিজ্ঞাপন


সমুদ্রতলের ভৌগোলিক পরিবর্তন

ভূমিকম্প সমুদ্রতলে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাতে পারে। তলদেশে নতুন ফাটল তৈরি হয়, কোথাও উঁচু পাহাড় বা কোথাও গভীর খাদ সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় পানির নিচে ভূমিধস (submarine landslide) নেমে আসে, যা আবার দ্বিতীয় দফায় তরঙ্গ তৈরি করে সুনামির শক্তি বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব পরিবর্তনে সাবমেরিন কেবল, সাগরতলের পাইপলাইন বা যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

dhakatoday1763754515earthqaake-and-saint-martin-20251121155121

সামুদ্রিক প্রাণীর ওপর প্রভাব

সমুদ্রে ভূমিকম্প হলে সৃষ্ট সিসমিক তরঙ্গ অনেক সামুদ্রিক প্রাণীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে তিমি, ডলফিনসহ সোনার-নির্ভর প্রাণীরা দিকভ্রান্ত হয়ে যায়। প্রবালপ্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, মাছের ঝাঁক নিরাপদ এলাকায় চলে যায়। যদিও বড় সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু বিরল, তবুও বাস্তুতন্ত্রে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দেয়।

আরও পড়ুন:মুদ্রে কীভাবে ভূমিকম্প হয়

জোয়ার-ভাটার সাময়িক পরিবর্তন

সমুদ্রতলের পরিবর্তন ও পানির চাপ অস্বাভাবিকভাবে বদলে গেলে জোয়ার-ভাটার ধরণ সাময়িকভাবে পাল্টে যায়। কোথাও জোয়ার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উঁচু হয়, আবার কোথাও ভাটা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি নিচে নেমে যেতে পারে। এতে স্থানীয় মৎস্যজীবন ও উপকূলীয় অর্থনীতিতে সাময়িক প্রভাব পড়ে।

উপকূলীয় অঞ্চলে অনুভূতি ও ক্ষতি

যদিও ভূমিকম্প ঘটে সাগরের অনেক গভীরে, কিন্তু এর সিসমিক তরঙ্গ উপকূলে এসে তীব্রভাবে অনুভূত হতে পারে। এতে ভবন কাঁপা, হালকা ক্ষতি কিংবা আতঙ্ক তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। সুনামির ঝুঁকি থাকলে উপকূলীয় এলাকা সবসময় সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখে পড়ে।

ভূমিকম্প শনাক্তকরণ ও সতর্কতা ব্যবস্থা

সাগরে ভূমিকম্প শনাক্ত করতে ব্যবহার করা হয় আধুনিক সিসমিক সেন্সর, ডীপ-সি প্রেসার সিস্টেম (DART buoy) এবং সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র। এগুলো পানির চাপ, কম্পন, এবং তরঙ্গের গতি পরিমাপ করে দ্রুত সতর্কবার্তা পাঠায়। উন্নত সতর্কতা ব্যবস্থা সুনামির বিপর্যয় থেকে প্রাণহানি কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আরও পড়ুন: ফোনে ভূমিকম্পের সতর্কতা সংকেত পাওয়ার উপায়

সাগরে ভূমিকম্প পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবর্তনের অংশ হলেও এর প্রভাব ভয়ংকর হতে পারে। বিশেষ করে সুনামি সৃষ্টি হলে তা দূরবর্তী উপকূলীয় দেশ পর্যন্ত ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে। তাই সমুদ্র-উৎপন্ন ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ, দ্রুত সতর্কবার্তা এবং জনসচেতনতা— সবই বিপর্যয় কমাতে অত্যন্ত জরুরি।

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর