ফুটবল এমন একটি মঞ্চ, যেখানে গোটা দুনিয়ার মানুষের শিল্প ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটে। আর সেই মঞ্চে যে দলগুলো অংশ নেয়, তার প্রায় প্রতিটি দলেরই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ডাকনাম। যা সেই দলগুলোর শেকড়ের ও তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের জানান দেয়। সাধারণত এই ডাকনামগুলোর পেছনে থাকে বিশেষ কোনও গল্প। যা ভক্ত-সমর্থকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
জেনে নেওয়া যাক, ফুটবল বিশ্বের কিছু নামকরা ক্লাবের ডাকনামের অর্থ ও এর পেছনের গল্প।
বিজ্ঞাপন
আর্সেনাল (দ্য গানার্স)
১৮৮৬ সালে টেমসের দক্ষিণে অবস্থিত উলউইচের কিছু কারখানার কর্মীদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল পেশাদার ফুটবল ক্লাব আর্সেনাল। সেই সময় দলে কিছু সৈন্যও ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ক্লাবটির নাম দেওয়া হয় দ্য গানার্স।
গানার্স শব্দের আভিধানিক অর্থ গোলন্দাজ। আর্সেনালের লোগোতে একটি কামানের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। যা প্রমান করে, ক্লাবটির সঙ্গে সামরিক কিছু বিষয় জড়িত রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন- লিওনেল স্ক্যালোনি: আর্জেন্টিনার স্বপ্ন জয়ের কারিগর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (রেড ডেভিলস)
রেড ডেভিলস নামের ইতিহাসটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি খেলার সঙ্গে জড়িত। সালফোর্ড রাগবি টিম নামে এক রাগবি দল সর্বপ্রথম এই উপাধি অর্জন করেছিল। ১৯৩৪ সালে ফ্রান্সে খেলতে যাওয়া এই দলের বিধ্বংসী ও আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখে এক ফরাসি সাংবাদিক তাদের রেড ডেভিল বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। সেই সময় ইউনাইটেডের ডাকনাম ছিল ‘দ্য হিডেনস’।
পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে স্যার ম্যাট বাসবির ‘রেড ডেভিলস’ নামটি পছন্দ হয়ে যায় ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে নামটি বেশ ভালোভাবেই মিলে যায় বলে তিনি নিজেই ‘রেড ডেভিলস’ নামটি ঠিক করেন। এরপর ১৯৭০ সালে ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানইউ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘রেড ডেভিলস’কে নিজেদের ডাকনাম হিসেবে আখ্যায়িত করে।
বার্সেলোনা (কিউলস/ব্লু গ্রানা)
বার্সেলোনাকে অনেকেই কিউলস নামে চিনে থাকে। যার আভিধানিক অর্থ পশ্চাৎদেশ। অদ্ভুত এই নামের পেছনে তৎকালীন সময়ে বার্সেলোনার ছোট আকারের স্টেডিয়াম দায়ী। সেগুলো দর্শকদের ধারণক্ষমতার বাইরে থাকত। তাছাড়াও পেছনের সারিতে যেসব দর্শক বসতো, তাদের পশ্চাৎদেশ স্টেডিয়ামের বাইরের লোকজন দেখতে পেত। এরই প্রেক্ষিতে কাতালুনিয়ার অন্তর্গত এই ক্লাবটিকে মানুষজন কিউলস বলে ডাকা শুরু করে।
তাছাড়াও ব্লু গ্রানা নামে আরও একটি জনপ্রিয় নাম আছে বার্সেলোনার। মূলত ক্লাবটির নীল-লাল জার্সি ফুটিয়ে তুলতে এই নামটি ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন- মোহাম্মদ সালাহ: মিশরীয় ফুটবলের রাজা
রিয়াল মাদ্রিদ (দ্য হোয়াইট/মেরেঙ্গুয়েজ)
ক্লাবটির এই দুইটি ডাকনামই তাদের ঐতিহাসিক সাদা জার্সিকে প্রতিনিধিত্ব করে।
মেরেঙ্গুয়েজ স্প্যানিশ একটি জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। ডিম ও চিনি দিয়ে তৈরি এই মিষ্টান্নটিও দেখতেও সাদা।
জুভেন্টাস (তুরিনের ওল্ড লেডি)
ঐতিহাসিক সাদা-কালো জার্সির জন্য জুভেন্টাসকে বিয়ানকোনেরি নামে ডাকা হয়। তাছাড়াও ইতালিয়ান জায়ান্টদের বলা হয় তুরিনের ওল্ড লেডি। কিন্তু কেন?
ডাকনাম ওল্ড হলেও ইতালিয়ান ভাষায় জুভেন্টাস শব্দের অর্থ তরুণ। তবে ক্লাবটির এমন ডাকনামের ইতিহাস রচিত হয়েছিল ১৯৩০ সালে। তৎকালীন সময়ে তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের দলে না ভিড়িয়ে বয়স্ক ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের বেশি দলে টানত জুভেন্টাস। এরপর থেকেই তাদের নামের সাথে ওল্ড শব্দটি যুক্ত হয়।
অন্যদিকে রুপক অর্থে লেডি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত সমর্থকদের ক্লাবের প্রতি ভালবাসা বোঝানোর জন্য এর ব্যবহার।
এফএইচ