শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

মানকড় কে? কীভাবে এলো মানকড় আউট?

সালমান ইসলাম
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

মানকড় কে? কীভাবে এলো মানকড় আউট?

ভারতের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন ছিলেন ভিনু মানকড়। ১৯১৭ সালে জামনগরে জন্ম এই ক্রিকেটারের। আর জামনগরেই জন্মেছিলেন রণজিৎ সিং, দিলীপ সিংয়ের মতো ক্রিকেটার। তাদের আদর্শ মেনেই বড় হয়েছেন ভিনু মানকড়। ছোটবেলার নাম মিনু হলেও কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে সে নাম, বিশ্বজোড়া খ্যাতি পেয়েছেন ভিনু মানকড় নামেই। 

অবশ্য এই নামের পরিচিতি এই ক্রিকেটারের এসেছে ১৯৪৭ সালে মাঠের বিতর্কিত আউট দিয়ে, যা ‘মানকড় আউট’ নামে পরিচিত। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে ভারতের ভিনু মানকড় দুবার অস্ট্রেলিয়ার বিল ব্রাউনকে এভাবে আউট করেছিলেন। ফলে তার নামেই এই আউটের নামকরণ করা হয়। সেখান থেকে ক্রিকেট বিশ্বে তার পরিচয় আরও দীর্ঘ হয়।


বিজ্ঞাপন


তবে শুধু ‘মানকড় আউট’ই নয়, ক্রিকেটের নানা অর্জনের কারণেও এই অলরাউন্ডারের নাম রেকর্ড বইয়ে স্থান পেয়েছে। তিনিই প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার যিনি টেস্টে ১০০০ রান এবং ১০০ উইকেট ছুঁয়েছিলেন, সেখানে পৌঁছতে ম্যাচ খেলেছিলেন মাত্র ২৩টি। এছাড়া ক্যারিয়ারে ৪৪টি টেস্ট খেলে রান করেছেন দুই হাজার ১০৯, গড় ৩১.৪৭। অপরদিকে ৩২.৩২ গড়ে ১৬২ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।

জাতীয় দলে আসার আগে ১৯৩৭ সালে লর্ড টেনিসনের বিখ্যাত ক্রিকেট টিম টেনিসন একাদশ ট্যুর করে ভারতে। ২০ বছর বয়সী মানকড় ভারতীয় টিমের হয়ে বেসরকারি পাঁচটি টেস্ট খেলেন টেনিসনের টিমের বিপক্ষে। সেই পাঁচ টেস্টে ব্যাটিং গড় ছিল ৬২.৬৬, বোলিং গড় ১৪.৫৩। দুই বিভাগে ভারতীয় টিমে সেরা তিনি। আর তখনেই টেনিসন বলেছিলেন, ‘বিশ্বের যে কোনো একাদশে সুযোগ পাবে ছেলেটা।’

অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানকড়ের ক্রিকেট ক্যারিয়ার অনেকটাই ছোট করে দেয়। যুদ্ধ শেষে ১৯৪৭ সালে ইংল্যান্ড সফরে যায় ভারতীয় টিম। সেই সিরিজেই টেস্ট অভিষেক হয় মানকড়ের। তত দিনে তিনি পরিণত অলরাউন্ডার। সেই সিরিজে টেস্ট, প্রথম শ্রেণির ম্যাচ মিলে মোট ১২৯ উইকেট নেন মানকড়। করেন ১১২০ রান।


বিজ্ঞাপন


১৯৪৮ সালে ব্র্যাডম্যান তার যে ইনভিন্সিবল টিম নিয়ে ইংল্যান্ড ট্যুর করেন, তার ঠিক আগেই অস্ট্রেলিয়া গিয়ে পৌঁছায় ভারতীয় টিম। ১৯৪৭-৪৮ সালের সেই সিরিজে ভারতের পারফরম্যান্স তেমন কিছু নয়। উজ্জ্বল ছিলেন শুধু মানকড় আর বিজয় হাজারে। এই সিরিজেই বিল ব্রাউনকে নন স্ট্রাইকারে রান আউট করেছিলেন মানকড়। বোলিং করার সময়ে একাধিকবার সতর্ক করেছিলেন ব্রাউনকে। তবু ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে থাকছিলেন ব্রাউন। মানকড়ের ওই রান আউট ঘিরে বিতর্ক হয় অনেক। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ব্র্যাডম্যান পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন মানকড়ের। জানিয়ে ছিলেন, কয়েকবার সতর্ক করার পরই মানকড় রান আউট করেন ব্রাউনকে। কোনো অসুবিধা ছিল না তার। ফলে ক্রিকেট বিশ্ব আপন করে নেয়, ‘মানকাডিং’ ক্রিয়াপদটি।

অপরদিকে এই অলরাউন্ডারের ক্যারিয়ারের অন্যতম ইনিংস ১৯৫৬ সালে, চেন্নাইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওপেন করতে নেমে পঙ্কজ রায়ের সঙ্গে ৪১৩ রানের পার্টনারশিপ। মানকড় করেন ২৩১, পঙ্কজ ১৭৩। ওপেনিং জুটিতে সেটাই ছিল বিশ্বরেকর্ড। যা টিকে ছিল ৫২ বছর! অন্যদিকে ক্রিকেট ছাড়ার পরও ক্রিকেটকে অনেক কিছু দিয়ে গিয়েছেন তিনি। এছাড়া সুনীল গাভাস্কারকেও কোচিং করিয়েছেন বেশ কিছুদিন। মানকড় মানে আসলে শুধু মানকাডিং নয়। মানকড় আসলে ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। যাকে দেখে অনেক অলরাউন্ডার প্রেরণা পেয়েছেন।

যেভাবে আসে মানকড় আউট

১৩ ডিসেম্বর ১৯৪৭ সাল। ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরের দ্বিতীয় টেষ্টে, সিডনিতে ভিনু মানকড় স্বাগতিক ওপেনার বিল ব্রাউনকে বোলিং করার সময় রান আউট করে দেন। ব্যাটসম্যান নিজের ক্রিজের বাইরে থাকলে বোলার চাইলে রানআউট করতেই পারেন। এই ঘটনার পর থেকে এভাবে কেউ আউট হলে সেটাকে এই ভারতীয় ক্রিকেটারের নামে 'মানকড়' আউট বলা হয়।

এসটি 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর