ভারতের মাটিতে ভারতকে হারিয়ে গতকাল বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টানা দশ ম্যাচ জিতে ফাইনালে ওঠা রোহিত শর্মার দলকে হারিয়ে নিজেদের ষষ্ঠ শিরোপা জয় করে নিয়েছে অজিরা। ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শকের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বিশাল ভারতীয় সমর্থকগোষ্ঠীকে স্তব্ধ করে দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে চ্যাম্পিয়ন করার পথে কাল ১৩৭ রানের এক মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেছেন ট্রাভিস হেড। অথচ এই হেডের বিশ্বকাপ দলেই থাকার কথা ছিল না।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের সময় চোটে পড়েন হেড। হাত ভেঙ্গে ফেলায় দল থেকে ছিটকে যান অজি এই ব্যাটার। বিশ্বকাপ প্রায় শুরু হতে চললেও কবে নাগাদ পুরোপুরি সেরে ওঠবেন তিনি এ নিয়েও ছিল না কোনো নিশ্চয়তা।
বিজ্ঞাপন
ফলে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলে হেড থাকবেন না -এমনটাই ধরে নিয়েছিলেন অনেকেই। তবে অজি ওই ওপেনারকে দলে রাখার অন্যতম কৃতিত্ব অধিনায়ক প্যাট কামিন্স এবং কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ডের। এ দুজন মিলেই শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন যে, ১৫ জনের দলে রাখবেন হেডকে। এতে করে আসরের একেবারে শেষ দিকে হয়তো দলের কাজে আসবেন তিনি।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপ জিতে কত টাকা পেল অস্ট্রেলিয়া?
বিজ্ঞাপন
এরপরের গল্পটা সবার জানা। বিশ্বকাপের শুরু থেকেই বেঞ্চে বসেই কাটান হেড। অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে প্রথম খেলতে নামেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে। অথচ সেদিনও শতভাগ সুস্থ ছিলেন না তিনি। ৭৫ শতাংশ সুস্থ হাত নিয়ে সেদিন খেলেছেন তিনি। কিন্তু তারপরেও কিউইদের বিপক্ষে করেন ৫৯ বলে সেঞ্চুরি। অভিষেক ম্যাচেই শতক হাঁকিয়েই সেদিন হেড বুঝিয়ে দিয়েছিলেন দলে তার গুরুত্ব কতটা।
এরপর সেমিফাইনালেও ব্যাট হাতে দলের হয়ে উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন হেড, করেছেন ৪৮ বলে ৬৮ রান যা দলের জয়ের ভিত গড়ে দেয়। আর গতকালের ইতিহাস তো সবার জানা। ৪৭ রানেই তিন টপ অর্ডার ব্যাটার হারিয়ে যখন বিপাকে অজিরা, তখন মার্নাস লাবুশেনকে নিয়ে প্রায় দুইশ রানের এক জুটি গড়েন হেড। নিজে খেলেছেন ১৩৭ আরনের এক মহাকাব্যিক ইনিংস। এতেই কাল জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অজিরা, নিশ্চিত হয় ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়। অজি অধিনায়ক এবং কোচের সেদিনের নেয়া সিদ্ধান্তই দারুণ এই অর্জনের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
এখানেই বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সাথে পার্থক্য অজি অধিনায়ক কামিন্সের। বিশ্বকাপের আগে তামিম ইকবালকে দলে নেয়া নিয়ে কম নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। শেষ পর্যন্ত কোচ এবং অধিনায়কের সিদ্ধান্তেই তাকে বাদ দেয়া হয়েছে দল থেকে।
তামিমের বদলে বিশ্বকাপে লিটন দাস এবং তানজিদ তামিমের উপর ছিল ওপেনিং সামলানোর দায়িত্ব। এ দুজনই টুর্নামেন্টে চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ বিশ্বকাপের আগে টাইগার অধিনায়ক চাইলেই পারতেন তামিমকে দলে নিতে। তা না করে বরং বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তামিমের দায়িত্ববোধ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। দেশসেরা এই ওপেনার টিম ম্যান নন এমন অভিযোগও করেছিলেন তিনি।
তবে শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্টে খেলতে আসার আগে অস্ট্রেলীয় টিম ম্যানেজম্যান্ট ভেবেছে দলের ভালোর কথা, বিশ্বকাপ জয়ের কথা। এ লক্ষ্যে চোটগ্রস্ত ক্রিকেটারকেও দলে রেখেছে তারা।
এমন দৃষ্টান্ত এবারের বিশ্বকাপে শুধু এই একটিই নয়। নিউজিল্যান্ডের কেইন উইলিয়ামসন চোটগ্রস্ত ছিলেন, তবুও তিনি শুধু বিশ্বকাপ দলেই ছিলেন না, ছিলেন কিউইদের অধিনায়কও। খেলতে না পারলেও তিনি দলের সঙ্গে তা বাকিদের জন্য উপকারী হবে এমন ভাবনাও ছিল উইলিয়ামসনকে দলে রাখার অন্যতম কারণ।