সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কেয়ামত কত দূরে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২৩, ০১:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

কেয়ামত কত দূরে

কেয়ামত বা কিয়ামত বা কিয়ামাহ অর্থ মহাপ্রলয়, পুনরুত্থান। ইয়াওমুল কিয়ামাহ—অর্থ কিয়ামতের দিবস। এই দিনকে ইয়াওমুল জাজা বা প্রতিদান দিবস, ইয়াওমুল হিসাব বা হিসাবের দিবস ও ইয়াওমুল কাজা বা বিচার দিবসও বলা হয়। এছাড়াও ইয়াওমুদ-দিন বা শেষ বিচারের দিন, ইয়াওমুল হাশর বা সমাবেশের দিন, ইয়াওমুল জাময়ে বা একত্রিত করার দিন, ইয়াওমুল বায়াছ বা পুনরুত্থান দিবস নামেও আখ্যায়িত করা হয়।

শরিয়তের পরিভাষায় ‘কেয়ামত বলা হয় ওই দিনকে, যেদিন সৃষ্টিকুল ধ্বংস হবে এবং যেদিন লোকেরা তার রবের সামনে দাঁড়াবে। (রুহুল মাআনি: ৫/১২২)


বিজ্ঞাপন


কেয়ামতের দিন আল্লাহ ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছু ধবংস হবে। বিধান তাঁরই এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সুরা কাসাস: ৮৮) ‘অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত হবে।’ (সুরা মুমিনুন: ১৬) 

আরও পড়ুন:কেয়ামতের যেসব আলামত পৃথিবীতে বিদ্যমান

পুনরুত্থানের পর হিসাব কিতাব হবে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট, অতঃপর তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্ব।’ (সুরা গাসিয়া: ২৫-২৬) হিসাব কিতাব শেষে জান্নাত ও জাহান্নামের ফায়সালা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘অতএব যারা হতভাগ্য তারা দোজখে যাবে, সেখানে তারা আর্তনাদ ও চিৎকার করতে থাকবে।’ (সুরা হুদ: ১০৬) ‘আর যারা সৌভাগ্যবান তারা বেহেশতে যাবে, সেখানেই চিরদিন থাকবে।(সুরা হুদ: ১০৮)

কেয়ামত কখন হবে?
জিব্রাঈল (আ.) একদা ছদ্মবেশে মহানবী (স.)-এর কাছে হাজির হয়ে আরজ করেন, কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? মহানবী (স.) বলেন, ‘জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত নয়।’ অর্থাৎ কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে, তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘কেয়ামতের জ্ঞান কেবল তাঁরই জানা। তাঁর জ্ঞানের বাইরে কোনো ফল আবরণমুক্ত হয় না এবং কোনো নারী সন্তান প্রসব ও গর্ভধারণ করে না।’ (সুরা হা-মিম-সাজদা: ৪৭)
অপর আয়াতে বলা হয়েছে, তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কিয়ামত কখন হবে? আপনি বলে দিন, এর খবর তো আপনার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে তিনি তা পরিষ্কারভাবে দেখাবেন (সুরা আরাফ: ১৮৭)
‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে।’ (সুরা লুকমান: ৩৪)


বিজ্ঞাপন


কেয়ামতের তারিখ গোপন রাখার কারণ
‘কেয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি তা গোপন রাখতে চাই; যাতে প্রত্যেকেই তার কর্মানুযায়ী ফল লাভ করে।’ (সুরা ত্বহা: ১৫)

কেয়ামত খুব কাছে
‘কেয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে।’ (সুরা ক্বামার: ১)
‘মানুষের হিসাব-কিতাবের সময় নিকটবর্তী; অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’ (সুরা আম্বিয়া: ১)
ইবনু ওমর (রা.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, তোমাদের পূর্বের যেসব উম্মত অতীত হয়ে গেছে তাদের অনুপাতে তোমাদের অবস্থান হলো ‘আসরের সালাত এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়টুকুর সমান।’ (সহিহ বুখারি: ৩৪৫৯)
সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহ.) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি রাসলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছেন, আগেকার উম্মতের স্থায়িত্বের তুলনায় তোমাদের স্থায়িত্ব হলো ‘আসর হতে নিয়ে সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের ন্যায়।’ (সহিহ বুখারি: ৫৫৭)

আরও পড়ুন: কেয়ামতের আলামত: ইলমশূন্য বক্তা বেড়ে যাবে

নবীজি (স.) একদিন আসরের নামাজের পর কেয়ামত সম্পর্কিত লম্বা খুতবা মাগরিব ছুঁই ছুঁই সময় হয়ে গেল। রাবি বলেন, আমরা সূর্যের দিকে তাকাতে লাগলাম যে, তা এখনো অবশিষ্ট আছে কি না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘জেনে রাখ! তোমাদের এই দুনিয়ার যতটুকু অতীত হয়ে গেছে, সেই হিসাবে এতটুকুও আর অবশিষ্ট নেই যতটুকু আজকে এই দিনের অতিবাহিত হয়েছে তার তুলনায় যতটুকু অবশিষ্ট আছে। (সুনানে তিরমিজি: ২১৯১)

কেয়ামতের আগে সাবধান হও
‘কেয়ামত অবশ্যই আসবে, এতে সন্দেহ নেই; কিন্ত অধিকাংশ লোক বিশ্বাস স্থাপন করে না। (সুরা গাফির: ৫৯)
‘কাফেররা বলে আমাদের উপর কেয়ামত আসবে না। বলুন কেন আসবে না? আমার পালনকর্তার শপথ-অবশ্যই আসবে।’ (সুরা সাবা: ৩)
‘হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার। (সুরা হজ: ১)

কেয়ামত কত দূরে
কেয়ামতের বড় বড় আলামত এখনো পরিদৃষ্ট না হলেও ছোট ছোট আলামতগুলো এমনভাবে সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে, যা রোধ করার ক্ষমতা কারো নেই। তার অর্থ এই যে, কেয়ামত বেশি দূরে নয়। কেয়ামতের আগে সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন লোকেরা আল্লাহর সম্পদকে (যুদ্ধলব্ধ মাল) নিজের সম্পত্তি মনে করবে, আমানতকে নিজ সম্পদ বলে গণ্য করবে, জাকাত দেওয়াকে অত্যন্ত ভারি বোধ করবে, ধর্মীয় জ্ঞান ছাড়া অন্য জ্ঞান শিখবে, পুরুষরা নারীদের তাঁবেদারি করবে, সন্তান নিজ মায়ের নাফরমানি করবে, বন্ধুবান্ধবকে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বলে ধারণা করবে, আর নিজ পিতাকে দূরবর্তী লোক বলে বুঝবে, মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে দুনিয়াবি কথাবার্তা হবে, পাপী লোক সমাজের সর্দার হবে, নিকৃষ্ট প্রকৃতির লোক সমাজের প্রাধান্য ও কার্যভারপ্রাপ্ত হবে, জালিমকে তার জুলুমের ভয়ে মানুষ সম্মান করবে, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র প্রচুর পরিমাণে বিস্তার লাভ করবে, মদপান বেড়ে যাবে, পরবর্তী লোকেরা পূর্বপুরুষদের মন্দ বলবে, তখন তোমরা এমন বিপদের অপেক্ষা করতে থাকবে যে লালবর্ণের প্রচণ্ড বায়ু বা ভূমিকম্প হবে। জমিন দেবে যাবে। লিঙ্গের রূপান্তর হবে। আসমান থেকে পাথর বর্ষণ হবে। আরো অনেক আপদ-বিপদ তাড়াতাড়ি এমনভাবে উপর্যুপরি আসতে থাকবে, যেভাবে মণিমুক্তার মালা ছিঁড়ে গেলে দানাগুলো ধারাবাহিক খসে পড়তে থাকে।’ (তিরমিজি: ২২১০; বুখারি : ৮১)

আরও পড়ুন: ফিতনার সময় বিশেষভাবে যা করতে বলেছেন নবীজি (স.)

কেয়ামতের আগে আমানতের খেয়ানত হবে বেশি। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘যখন আমানতদারিতা উঠে যাবে, তখন তোমরা কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার অপেক্ষা করো। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, আমানতদারি কিভাবে উঠে যাবে? রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, আমানতদারি উঠে যাওয়ার একটি উদাহরণ হচ্ছে, যে ব্যক্তি যে দায়িত্ব পালনের যোগ্য নয়, তাকে সে দায়িত্ব দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ৬৪৯৬)

‘সন্তানদের মধ্যে মা-বাবার অবাধ্যতা ব্যাপকভাবে দেখা দেবে। সন্তান তার মায়ের সঙ্গে এমন অবমাননাকর ও অসম্মানজনক আচরণ করবে, যা একজন মনিব তার দাসীর সঙ্গে করে থাকে।’ (বুখারি: ৫০)

মুসলমানরা বিধর্মীদের মাধ্যমে অতিরিক্ত জুলুম নির্যাতনের শিকার হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, খাদ্য গ্রহণকারীরা যেভাবে খাবারের পাত্রের চতুর্দিকে একত্র হয়, অচিরেই বিজাতিরা তোমাদের বিরুদ্ধে সেভাবেই একত্র হবে। এক ব্যক্তি বললেন, সেদিন আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কি এরূপ হবে? তিনি বললেন, তোমরা বরং সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে; কিন্তু তোমরা হবে প্লাবনের স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মতো। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের আতঙ্ক দূর করে দিবেন, তিনি তোমাদের অন্তরে ভীরুতা ভরে দিবেন। এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ‘আল-ওয়াহান’ কী? তিনি বললেন, দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা। (আবু দাউদ: ৪২৯৭) 

মুসলমানরা পরস্পরের মধ্যে লড়াইয়ে লিপ্ত হবে। নিজেদের মধ্যে এমন বিবাদে জড়ানোকে নবীজি (স.) ফেতনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। আহনাফ ইবনে কায়স (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (সিফফিনের যুদ্ধে) এক ব্যক্তিকে (আলী রা.)-কে সাহায্য করতে যাচ্ছিলাম। আবু বাকরাহ্ (রা.)-এর সঙ্গে আমার দেখা হলে তিনি বললেন, ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ?’ আমি বললাম, ‘আমি এ ব্যক্তিকে সাহায্য করতে যাচ্ছি। ’ তিনি বললেন, ‘ফিরে যাও। কারণ আমি আল্লাহর রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি- দুজন মুসলমান তাদের তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হলে হত্যাকারী এবং নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে।’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! এ হত্যাকারী (তো অপরাধী), কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী অপরাধ? তিনি বললেন, (নিশ্চয়ই) সেও তার সাথিকে হত্যা করার জন্য উদগ্রীব ছিল।’ (বুখারি: ৩১)

কেয়ামতের আগে প্রযুক্তিগত দিক থেকে মানুষ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বড় বড় দালানকোঠা তৈরির প্রতিযোগিতা হবে, পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণ করা হবে। যা বর্তমানে আমরা খুব স্বাভাবিক বিষয় হিসেবেই দেখছি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, যখন মক্কা শরিফের টিলার উদর বিদীর্ণ করা হবে আর নির্মিত ভবনগুলো মক্কা শহরের পাহাড়গুলোর চেয়ে উঁচু হবে তখন মনে কর ফেতনার সময় সন্নিকটে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৭/৪৬১) 

এমন কঠিন পরিস্থিতিতে কারো কারো জন্য দীনের ওপর অটল-অবিচল থাকা কঠিন হয়ে উঠবে। হাদিসের ভাষায়, ‘..যখন দীনের ওপর অবিচল থাকা হাতের মধ্যে জ্বলন্ত অঙ্গার রাখার মতো কঠিন হবে।’ (তিরমিজি: ২২৬০) 

আকস্মিক মৃত্যু কেয়ামতের আলামতগুলোর একটি। বর্তমানে হঠাৎ মৃত্যু স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘কেয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে হঠাৎ মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৭/৩২৫)

উল্লেখিত আলামগুলো বর্তমান যুগের সাথে ভালোভাবে মিলিয়ে দেখলে বুঝায় যায়, কেয়ামত আসলেই সন্নিকটে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন। পাকাপোক্ত ঈমান ও নেক আমলের সঙ্গে কঠিন সময় অতিবাহিত করার এবং ঈমান নিয়ে মৃত্যুর তাওফিক দান করুন। আমিন।

আলামাতে কিয়ামত, ইমাম মাহদী, কিয়ামত ও দাজ্জাল, কিয়ামত কখন, কিয়ামত কবে, কিয়ামত সন্নিকটে, কিয়ামতের আলামত, কিয়ামতের নিদর্শন, কিয়ামতের নিদর্শনাবলী, কিয়ামতের বিভিষিকা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দাজ্জাল, বিশ্বযুদ্ধ মহাপ্রলয়, মহাযুদ্ধ ও কিয়ামত, মালহামা, কেয়ামত কাছে, দাজ্জাল এসে গেছে, ইমাম মাহদি এসে গেছেন

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর