শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কেয়ামতের দিনের গরম কতটা ভয়াবহ হবে?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ জুন ২০২৩, ১২:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

কেয়ামতের দিনের গরম কতটা ভয়াবহ হবে?

কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা সবাইকে পুনরুত্থান করবেন। অতঃপর ফয়সালার জন্য খালি পায়ে, খালি শরীরে, খাৎনাবিহীন অবস্থায় ময়দার রুটির রংয়ের মতো লালচে সাদা (উদ্ভিদহীন, ঘরবাড়িহীন) একটি জমিনে একত্র করবেন। যা আমাদের কাছে হাশরের ময়দান নামে পরিচিত। সেদিন অবস্থা এমন ভয়াবহ হবে যে একজন অপরজনের দিকে তাকানোরও ফুরসত পাবে না। (বুখারি: ৬৫২৭; মেশকাত: ৫৫৩২)

সেদিন সূর্য মানুষের এত কাছাকাছি চলে আসবে যে কেউ কেউ তাদের ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন মানুষের ঘাম ঝরবে। এমনকি তাদের ঘাম জমিনে ৭০ হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে এবং তাদের মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে; এমনকি কান পর্যন্ত। (সহিহ বুখারি: ৬৫৩২)


বিজ্ঞাপন


অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, মিকদাদ (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, কেয়ামত দিবসে সূর্যকে মানুষের এত কাছে আনা হবে যে তা মাত্র এক অথবা দুই মাইল ব্যবধানে থাকবে। সুলাইম ইবনু আমির (রহ.) বলেন, আমি জানি না উক্ত মাইল দ্বারা জমিনের দূরত্ব জ্ঞাপক মাইল বোঝানো হয়েছে, না চোখের সুরমা লাগানোর শলাকা বোঝানো হয়েছে। তিনি বলেন, সূর্য তাদের গলিয়ে দেবে। তারা তখন নিজেদের আমল (গুনাহ) অনুপাতে ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে। আর তা কারো পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো মুখ পর্যন্ত ঘাম পৌঁছে লাগামের মতো বেষ্টন করবে। এই কথা বলার পর রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর হাত দ্বারা মুখের দিকে ইশারা করেন, অর্থাৎ লাগামের মতো বেষ্টন করাকে বোঝালেন। (তিরমিজি: ২৪২১)

অর্থাৎ সেদিন সূর্যকে মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসার কারণে তার তাপ কিছু মানুষকে গলিয়ে দেওয়ার অবস্থা করবে। যারা নেককার বান্দা হবে, তাদের সেদিন কোনো কষ্ট হবে না। সাত শ্রেণির মানুষকে আরশের ছায়ায় স্থান দেওয়া হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘সাত শ্রেণির মানুষকে সেদিন আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কারস্বরূপ আরশের ছায়ায় স্থান দেওয়া হবে। যেদিন আরশের ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। সাত শ্রেণি হলেন ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক ও কর্তা। ২. ওই যুবক; যে তার যৌবনকাল প্রভুর ইবাদতে অতিবাহিত করে। ৩. ওই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে। ৪. ওই দুই ব্যক্তি যারা পরস্পরে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপন করে এবং এর ভিত্তিতেই তারা একত্র হয় ও পৃথক হয়। ৫. ওই ব্যক্তি যাকে অভিজাত বংশীয় সুন্দরী কোনো নারী আহ্বান করে আর জবাবে সে বলে- আমি আল্লাহকে ভয় করি। ৬. ওই ব্যক্তি যে গোপনে দান করে, এমনকি তার বাম হাতও জানে না তার ডান হাত কী দান করছে। ৭. ওই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর দুই চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।’ (বুখারি: ৬৬০; মুসলিম: ২৪২৭)

অন্যদিকে, বদকাররা তাদের পাপ অনুযায়ী সেদিন সূর্যের তাপে কষ্ট পেতে থাকবে। ফলে তাদের কারো কারো ঘাম গোড়ালি পর্যন্ত থাকবে, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত, কারো মুখ পর্যন্ত। (তিরমিজি: ২৪২১)

মানুষ প্রচণ্ড গরমের মধ্যে তৃষ্ণায় ছটফট করতে থাকবে। আল্লাহ সব নবীকে শীতল পানির হাউজ দান করবেন। সবচেয়ে বড় হাউজ হবে আমাদের নবীজির। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমার হাউজে কাউসারের পরিধি হবে ইয়েমেনের আদন বন্দর থেকে আম্মানের বালকা শহর পর্যন্ত। পনির রঙ হবে বরফের চেয়েও সাদা, স্বাদ হবে মধুর চেয়েও মিষ্টি। পানপাত্র হবে আকাশের নক্ষত্রের মতো অসংখ্য। যে ব্যক্তি একবার হাউজে কাউসারের পানি পান করবে সে কখনও আর তৃষ্ণার্ত হবে না।’ (তিরমিজি: ২৪৪৪; ইবনে মাজা: ৪৩০৩)


বিজ্ঞাপন


যারা নবীজির আদর্শ মেনে চলেনি, নিজেদের মনমতো চলেছে, দ্বীনের ভেতর নতুন নতুন জিনিস সংযোজন করেছে, তারা এই হাউজ থেকে পানি পান করতে পারবে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (স.) বলেন, ‘কেয়ামতের ময়দানে আমার উম্মতের এক দল লোক আমার হাউজের কাছে আসতে থাকবে, তবে তারা বাধাপ্রাপ্ত হবে। আমি বলব, হে রব! এরা আমার উম্মত! তখন বলা হবে, আপনি জানেন না, আপনার পরবর্তীতে এরা কী বেদআত আবিষ্কার করেছিল!’ (সহিহ মুসলিম: ২৪৭)

বুখারি শরিফের অন্য একটি দীর্ঘ হাদিস থেকে জানা যায়, মানুষ এই কঠিন পরিস্থিতিতে অসহ্য হয়ে নবীদের কাছে ছুটবে, যেন তাঁরা মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে সবাইকে এই কঠিন মুহূর্ত থেকে উদ্ধার করে এবং যাতে তাড়াতাড়ি বিচারকার্য শুরু হয়। কিন্তু কোনো নবীই মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার সাহস করবেন না। শেষ পর্যন্ত তারা মহানবী (স.)-এর কাছে এসে বলবে, হে মুহাম্মদ (স.), আপনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবী। আল্লাহ তাআলা আপনার আগের-পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কিসের মধ্যে আছি? 

তখন তিনি আরশের নিচে এসে তাঁর রবের সামনে সেজদায় পড়ে যাবেন। তারপর আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রশংসা ও গুণগানের এমন সুন্দর নিয়ম তাঁর সামনে খুলে দেবেন, যা এর পূর্বে অন্য কারো জন্য খোলেননি। এরপর বলা হবে, হে মুহাম্মদ (স.), তোমার মাথা ওঠাও। তুমি যা চাও, তোমাকে দেওয়া হবে। তুমি সুপারিশ করো, তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে। এরপর নবীজি (স.) মাথা উঠিয়ে বলবেন, হে আমার রব, আমার উম্মত। হে আমার রব, আমার উম্মত। হে আমার রব, আমার উম্মত। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ (স.), আপনার উম্মতের মধ্যে যাদের কোনো হিসাব-নিকাশ হবে না, তাদের জান্নাতের দরজাসমূহের ডান পাশের দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। এ দরজা ছাড়া অন্যদের সঙ্গে অন্য দরজায়ও তাদের প্রবেশের অধিকার থাকবে। তারপর তিনি বলবেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সে সত্তার শপথ! জান্নাতের এক দরজার দুই পাশের মধ্যবর্তী স্থানের প্রশস্ততা যেমন মক্কা ও হামিরের মধ্যবর্তী দূরত্ব, অথবা মক্কা ও বসরার মাঝে দূরত্বের সমতুল্য। (বুখারি: ৪৭২১ অবলম্বনে)

এভাবেই সেদিন নবীজি (স.)-এর সুপারিশে মানুষ কেয়ামতের বিচার-পূর্ববর্তী ভয়াবহ অবস্থা থেকে নিস্তার পাবে। তাই আমাদের উপলব্ধি করা উচিত, দুনিয়ায় কোটি কোটি মাইল দূরের সূর্যের তাপে যদি আমাদের এই বেহাল হয়, তাহলে কাল কেয়ামতের দিন কতটা ভয়াবহ হবে!

অতএব, আমাদের মহান আল্লাহর কাছে সকল গুনাহের জন্য তাওবা-ইস্তেগফার করা উচিত। নবীজির আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করা উচিত। এর বিনিময়ে আমাদের ইহকাল-পরকাল শান্তিময় হবে, চিন্তামুক্ত হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

কেয়ামতের দিন সূর্য, কেয়ামতের দিন ভয়াবহ গরম, হাশরের মাঠে সূর্য কত কাছে, কেয়ামতের দিন মানুষর ঘাম, কেয়ামতের দিন হাউজে কাউসারের পানি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর