শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সন্তান আল্লাহর দেওয়া উপহার, একইসঙ্গে আমানতও

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০২:৩১ পিএম

শেয়ার করুন:

সন্তান আল্লাহর দেওয়া উপহার, একইসঙ্গে আমানতও

সন্তান বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অন্যতম সেরা উপহার। তিনি যাকে খুশি তাকে এই উপহার দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি যাকে খুশি সন্তান দান করেন এবং যাকে খুশি পুত্রসন্তান দান করেন। যাকে খুশি কন্যা ও পুত্র উভয়টি দান করেন। যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশালী।’ (সুরা আশ-শুরা: ৪৯)

পবিত্র কোরআনে সন্তানকে মানবজীবনের সৌন্দর্য বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সম্পদ ও সন্তানাদি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য।’ (সুরা কাহাফ: ৪৩)


বিজ্ঞাপন


এই উপহার ও সৌন্দর্য পেয়ে আনন্দের আতিশয্যে খেয়ালখুশিমতো বড় করলে হবে না। তাদের শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে হবে। কারণ সন্তান শুধু উপহার নয়, একইসঙ্গে আল্লাহর আমানতও। পরকালে আল্লাহ তাআলা মা-বাবাকে সন্তানের বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জেনে রেখো, তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য এক পরীক্ষা। আর মহা পুরস্কার রয়েছে আল্লাহরই কাছে।’ (সুরা আনফাল: ২৮)

ইমাম ইবনে জারির তাবারি (রহ) বলেন, আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাদের লক্ষ করে বলছেন, ‘হে মুমিনগণ! জেনে রেখো, তোমাদেরকে যে ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি দান করেছি এসব তোমাদের জন্য পরীক্ষার বস্তু। এর মাধ্যমে তোমাদের আমি পরীক্ষা করব এটা দেখার জন্য যে, সন্তান-সন্ততি ও অর্থ-কড়ির ক্ষেত্রে তোমরা আল্লাহর হক কতটুকু আদায় করো এবং দীনের বিধিনিষেধ কী পরিমাণ মান্য করো।’ (তাফসিরে তাবারি: ১১/১২৬)

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে...। (বুখারি: ৬৬৫৩; সুনানে আবু দাউদ: ২৯২৮)

আরেক হাদিসের ঘোষণা- আল্লাহ তাআলা যদি বান্দাকে কারো দায়িত্বশীল বানান আর সে নিজ অধীনস্থদের কল্যাণের ব্যাপারে যত্নশীল না হয়, তাহলে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। (সহিহ বুখারি: ৭১৫০)


বিজ্ঞাপন


মোটকথা, সন্তান-সন্ততি মা-বাবার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত। তাদের ঈমান-আকিদা, বোধ-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, আমল-আখলাক, জীবন যাপন প্রভৃতির ব্যাপারে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া মা-বাবার কর্তব্য।

কারণ মা-বাবাই সন্তানকে সুপথে অথবা বিপথে পরিচালিত করে। এজন্য রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের ওপর (সুস্থ প্রকৃতি, সুবোধ ও সত্য গ্রহণের যোগ্যতা নিয়ে) জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি, অগ্নিপূজক ও খ্রিস্টানে পরিণত করে।’ (মেশকাত: ৯০; বুখারি: ১৩৫৮; মুসলিম: ২৬৫৮)

সুতরাং সন্তানের প্রতিপালনে মা-বাবার দায়িত্ব ও ভূমিকা ইসলামে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সন্তানের সুশিক্ষা ও যথাযথ প্রতিপালনের অভাবে অনেক পরিবারকে বিপন্ন হতে দেখা যায়। আল্লাহর নির্দেশ ভুলে খেয়ালখুশিমতো গড়ে তোলার কারণেই এমনটি হয়। কোরআনে এ ব্যাপারে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের সম্পদ ও সন্তান ফেতনাস্বরূপ। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে উত্তম প্রতিদান।’ (সুরা তাগাবুন: ১৫)

উত্তম শিক্ষা ও উপদেশ দান হলো সন্তানকে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম মাধ্যম। এটি সন্তানের জন্য মা-বাবার পক্ষ থেকে সর্বোত্তম উপহার। মহানবী (স.) বলেন, ‘সন্তানকে দেওয়া পিতার সর্বোত্তম উপহার হলো শিষ্টাচার।’ (তিরমিজি: ১৯৫২)

সুসন্তান শুধু পার্থিব জীবনের সম্পদ নয়, পরকালীন জীবনেও তার কারণে মা-বাবা বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ জান্নাতে নেককার বান্দার মর্যাদা সমুন্নত করবেন, তখন সে বলবে, হে আমার রব, কেন আমার জন্য এই উচ্চ মর্যাদা? তখন আল্লাহ বলবেন, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে।’ (মুসনাদ আহমদ: ১০৬১০)

রাসুল (স.) আরও বলেছেন, ‘যখন মানুষ মারা যায়, তিনটি বিষয় ছাড়া তার অন্য সব আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তা হলো সদকায়ে জারিয়াহ, এমন জ্ঞান মানুষ যার দ্বারা উপকৃত হয় এবং সুসন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম: ১৬৩১)

মা-বাবার আরেকটি দায়িত্ব হলো, সন্তানের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। হাদিসে এসেছে, আল্লাহ সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া কবুল করেন। পবিত্র কোরআনে চক্ষু শীতলকারী সন্তান লাভের দোয়া শেখানো হয়েছে; যারা উত্তম স্ত্রী ও সুসন্তান লাভের দোয়া করে, তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা বলে, হে আমাদের প্রভু! আমাদের চক্ষু শীতলকারী স্ত্রী ও সন্তান দান করুন। আমাদের আল্লাহভীরু মানুষের নেতা নির্বাচিত করুন। (সুরা ফোরকান: ৭৪)

বর্তমান যুগে অনেক মা-বাবা জানেন না সন্তানকে কী বিষয় শিক্ষা দেবেন। এ অবস্থায় নিজেদেরও প্রয়োজনীয় শিক্ষা অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে তাওহিদ, রেসালাত, ঈমান, কুফর সম্পর্কে জানা জরুরি। এরপর সন্তানকে আদব-আখলাক এবং দীনি শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে খাঁটি মুমিন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সন্তানদেরকে আলেমদের সান্নিধ্যে নিয়ে যাওয়াও প্রয়োজন। কেননা তাঁদের ব্যক্তিত্ব, উপদেশ ও দোয়া সন্তানের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তা হতে পারে তার জন্য অমূল্য সম্পদ। 

সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সন্তানদের রাসুলে আকরাম (স.)-এর দরবারে নিয়ে যেতেন। এই ধারা পরবর্তী উলামায়ে কেরামের মধ্যেও অব্যাহত ছিল। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সন্তানদের সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলার এবং আল্লাহর আমানতের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর