শাওয়াল চন্দ্রমাসের দশম মাস। ইসলামে এই মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটি হজের তিন মাসের একটি, তথা শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ। আবার হারাম বা সম্মানিত চার মাসের একটি হলো শাওয়াল। এই মাসে কিছু আমলের অনেক ফজিলত রয়েছে। যেমন শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত বর্ণনায় হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন— من صام رمضان ثم اتبعه ستا من شوال كان كصيام الدهر ‘যারা রমজানের ফরজ রোজা রাখবে, অতঃপর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবে, তারা সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব অর্জন করবে। (মুসলিম ১ম খণ্ড, পৃ-৩৬৯)
শাওয়ালে বিয়ে করার ফজিলত নিয়ে কৌতূহল রয়েছে অনেকের। বস্তুত নির্দিষ্ট দিন বা মাসে বিয়ের বিশেষ ফজিলতের কথা কোরআন সুন্নাহয় দেখা যায় না। তাই বছরের যেকোনো মাসে, যেকোনো দিন বিয়ের দিন-ক্ষণ নির্ধারণ করা জায়েজ। তাই অধিকাংশ আলেমের মতে নির্দিষ্ট কোনো মাস বা দিনকে সুন্নত বা মোস্তাহাব বলা সঙ্গত নয় বরং বিয়ের মতো কল্যাণময় কাজ বিলম্ব না করে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি করাই উচিত। যে মাসে সুযোগ আসে, সে মাসেই।
বিজ্ঞাপন
বর্তমান বিভিন্ন মুসলিম পবিরারে পঞ্জিকায় শুভ-অশুভ দিন দেখেও বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এ রীতি সম্পূর্ণ অজ্ঞতাপূর্ণ বিশ্বাস ও কুসংস্কার-যা ভিন্ন বিশ্বাস থেকে অনুপ্রবেশ করেছে বলে মনে করেন আলেমরা।
যদিও প্রিয়নবী (স.)-এর সঙ্গে উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.)-এর বিয়ে হয়েছিল শাওয়াল মাসে। আর তিনি নবীজির ঘরে আগমনও করেছিলেন এই মাসে। এ প্রসঙ্গে আয়েশা (রা.) বলেন—‘রাসুল (স.) আমাকে শাওয়াল মাসেই বিয়ে করেছেন, শাওয়াল মাসেই বিয়ে-রজনী উদযাপন করেছেন। অথচ তার অনুগ্রহ লাভে আমার চাইতে সৌভাগ্যবতী স্ত্রী আর কে আছে? আয়েশা (রা.) তার বংশের মেয়েদের শাওয়াল মাসে বাসর ঘরে পাঠানো উত্তম মনে করতেন।’ (মুসলিম,ইফা,৩৩৫২)
মা আয়েশা (রা.)-এর উপরোক্ত কথার উদ্দেশ্য হলো—জাহেলি যুগের মানুষের এই ধারণা ছিল যে, শাওয়াল মাসে বিবাহ-শাদির অনুষ্ঠান অশুভ ও অকল্যাণকর। তিনি এ কথার মাধ্যমে এ ভিত্তিহীন ধারণাকে খণ্ডন করেছেন। (শারহে মুসলিম: ৯/২০৯)
আরও পড়ুন
জন্মতারিখে বিয়ে করা কি মাকরুহ?
পাত্রী দেখার ইসলামি পদ্ধতি কেমন?
বিজ্ঞাপন
বাস্তবতা হলো- যদি শাওয়াল মাসে বিয়ে করা মোস্তাহাব হতো তাহলে সবগুলো বিয়ে শাওয়াল মাসে করার চেষ্টা করতেন নবী (স.)। উম্মতকেও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। আর সাহাবিগণও এ মাসেই বিয়ে করার চেষ্টা করতেন, যেহেতু সাহাবিরা ছিলেন সুন্নত পালনে সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু হাদিসে এমন কিছু সাব্যস্ত হয়নি।
এ বিষয়ে ইমাম শওকানি বলেন, ‘এটি একটি শরয়ী বিধান যার পক্ষে দলিল প্রয়োজন। নবী (স.) ঘটনাচক্রে বিভিন্ন সময়ে তাঁর স্ত্রীদেরকে বিয়ে করেছেন। তিনি বিশেষ কোনো সময় অনুসন্ধান করেননি। শাওয়াল মাসে রাসুল (স.)-এর সাথে আয়েশা (রা.) এর বিয়ে সংঘটিত হওয়া কারণেই যদি এই মাসে বিয়ে করাকে মোস্তাহাব বলতে হয়, তাহলে নবী (স.) অন্য যত সময় বিয়ে এবং বাসর করেছেন সেগুলোকেও মোস্তাহাব বলতে হবে। কিন্তু এ কথা গ্রহণযোগ্য নয়।’ (নায়লুল আওতার-শাওকানি, ৬/২২৫)
সুতরাং কেবল শাওয়াল মাসে বিয়ে করা সুন্নত কিংবা মোস্তাহাব বলার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পথ ও বিশ্বাসে পরিচালিত করুন। আমিন।