রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শবে কদর সম্পর্কে সুরা কদরে যা বর্ণিত হয়েছে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

শবে কদর সম্পর্কে সুরা কদরে যা বর্ণিত হয়েছে

শবে কদর শব্দটি ফারসি। আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’। লাইলাতুন বা শব-এর অর্থ রাত। কদর-এর অনেক অর্থ, যেমন- পরিমাপ, পরিমাণ, নির্ধারণ, ভাগ্য নিরূপণ, সম্মান, গৌরব, মর্যাদা ও মহিমা। সুতরাং ‘লাইলাতুল কদর’ বা ‘শবে কদর’ অর্থ সম্মানিত, মর্যাদাপূর্ণ, মহিমান্বিত ও ভাগ্যনির্ধারণী রজনী।

এ রাতকে ‘লাইলাতুল কদর’ বলার কারণ হচ্ছে—এ রাতের পূর্বে আমল না করার কারণে যাদের কোনো সম্মান মর্যাদা, মূল্যায়ন ছিল না তারাও তওবা-ইস্তেগফার ও ইবাদতের মাধ্যমে এ রাতে সম্মানিত ও মহিমান্বিত হয়ে যান। (তাফসিরে মারেফুল কোরআন) রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত জাগবে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (সহিহ বুখারি: ৩৫) 


বিজ্ঞাপন


সুরা কদর
সুরাতুল কদর পবিত্র কোরআনের ৯৭ তম সুরা। এর আয়াত সংখ্যা ৫ টি এবং এর রুকুর সংখ্যা ১টি। শবে কদর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এই সুরায়। সুরাটির শানে নুজুল সম্পর্কে হজরত ইবনে আবি হাতেম -এর রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) একবার বনি-ইসরাঈলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন।

সে এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জিহাদে মশগুল থাকে এবং কখনও (জিহাদের জন্য) অস্ত্র সংবরণ করেনি। মুসলমানগণ একথা শুনে বিস্মিত হলে এ সুরা অবতীর্ণ হয়। এতে এই উম্মতের জন্যে শুধু এক রাতের ইবাদতই সেই মুজাহিদের এক হাজার মাসের এবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য করা হয়। 

ইবনে জরির অপর একটি ঘটনা এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, বনি-ইসরাঈলের জনৈক ইবাদতকারী পুরো রাত ইবাদতে মশগুল থাকত ও সকাল থেকে জিহাদের জন্য বের হয়ে যেত এবং সারাদিন জিহাদে রত থাকত। সে এক হাজার মাস এভাবে কাটিয়ে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তাআলা সুরা-কদর নাজিল করে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। এ থেকে আরও প্রতীয়মান হয় যে, শবে-কদর উম্মতে মুহাম্মদিরই বৈশিষ্ট্য। (ইবনে আবি হাতেম এবং ইবনে জরির, মাযহারি)

সুরা কদরে যা বলা হয়েছে-
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ অর্থ: ‘পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।’


বিজ্ঞাপন


○إِنَّآ أَنزَلْنَٰهُ فِى لَيْلَةِ ٱلْقَدْرِ  উচ্চারণ: ‘ইন্না আনঝালনা-হু ফী লাইলাতিল কাদর।’ অর্থ: ‘নিঃসন্দেহ আমি এটি অবতরণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে।’

○وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا لَيْلَةُ ٱلْقَدْرِ উচ্চারণ: ‘ওয়ামাআদরা-কা-মা-লাইলাতুল কাদর।’ অর্থ: আপনি কি জানেন শবে কদর কী?’

○لَيْلَةُ ٱلْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ উচ্চারণ: ‘লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর।’ অর্থ: ‘শবে-কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ (একটি রাত)।’

○تَنَزَّلُ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ উচ্চারণ: ‘তানাঝঝালুল মালাইকাতুওয়াররুহু ফীহা-বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমর।’ অর্থ: ‘এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।’

○سَلَٰمٌ هِىَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ ٱلْفَجْرِ উচ্চারণ: ‘সালা-মুন হিয়া হাত্তা-মাতলা‘ইল ফাজর।’ অর্থ: ‘(এ রাতে বিরাজ করে) শান্তি আর শান্তি- ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।’

উল্লেখ্য, যারা কদরের রাতটি অবহেলায় কাটিয়ে দেয় তারা হতভাগা ছাড়া অন্যকিছু নয়। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘এ মাসে (রমজানে) এমন একটি রাত আছে, যা হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে সত্যিই বঞ্চিত হলো।’ (সুনানে নাসায়ি: ২১০৮) আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শবে কদরের মর্যাদা উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। কদরের রাতে সুন্নাহর অনুসরণে ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর