সুস্থতা যেমন নেয়ামত, অসুস্থতাও মুমিনদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নেয়ামত। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, মুমিন বান্দা যখন অসুস্থ হয় এবং আল্লাহ তাআলা তা থেকে তাকে সুস্থও করে দেন এ অসুস্থতা তার পূর্ববর্তী গোনাহের কাফফারা এবং ভবিষ্যতের জন্য উপদেশ হয়। (আবু দাউদ: ৩০৮৯)
অন্য হাদিসে এসেছে- ‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফোটে, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।’ (বুখারি: ৫৬৪১)
এরপরও যেকোনো কঠিন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার শিক্ষা রয়েছে নবীজির হাদিসে। আবু হুরায়রা (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোগাক্রান্ত বা বিপদগ্রস্ত লোককে দেখে বলে, ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আ-ফানি মিম্মাবতালাকা বিহি, ওয়া ফাদদলানি আলা কাছিরিম মিম্মান খলাকা তাফদিলা’, সে ওই ব্যাধিতে কখনো আক্রান্ত হবে না।’ (তিরমিজি: ৩৪৩২; জামেউস সগির: ৮৬৬৭; সিলসিলাতুস সহিহা: ২৭৩৭)
আরও পড়ুন: অসুস্থ ভাই-বন্ধুর জন্য যে দোয়া করতে বলেছেন প্রিয়নবী (স.)
উল্লেখিত হাদিসে বর্ণিত দোয়াটি হলো—الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي عَافَانِي مِمَّا ابْتَلاَكَ بِهِ وَفَضَّلَنِي عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيلاً উচ্চারণ: ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আ-ফানি মিম্মাবতালাকা বিহি, ওয়া ফাদদলানি আলা কাছিরিম মিম্মান খলাকা তাফদিলা।’ অর্থ: ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, তিনি তোমাকে যে ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছেন, তা থেকে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং তার অসংখ্য সৃষ্টির ওপর আমাকে সম্মান দান করেছেন।’
হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে দেখে উল্লেখিত দোয়াটি পাঠ করলে আজীবন ওই রোগ থেকে আল্লাহ তাআলা বাঁচিয়ে রাখবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও কঠিন রোগ থেকে বাঁচার আরেকটি দোয়ার উল্লেখ রয়েছে হাদিসে। দোয়াটি হলো—اللَّهمَّ إنِّي أسألُكَ وأتوجَّهُ إليكَ بنبيِّكَ محمدٍ صَلَّى اللَّهُ عليْهِ وعلى آلهِ وسلَّمَ نبيِّ الرحمةِ ، يا محمدُ إنِّي أتوجَّهُ بكَ إلى ربِّي في حاجَتي هذه فتَقضى، وتُشفعُني فيه وتشفعُهُ فيَّ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ওয়া আতাওয়াজ্জাহু ইলাইকা বিনাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যির রহমাতি ইন্নি তাওয়াজ্জাহতু বিকা ইলা রব্বি ফি হাজাতি হাজিহি লিতুকদ্বা লি, আল্লাহুম্মা ফাশাফফি’হু ফিয়্যা।’
আরও পড়ুন: রোগমুক্তিতে কার্যকর কোরআনের ৬ আয়াত
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তোমার কাছে আমি প্রার্থনা করি এবং তোমার প্রতি মনোনিবেশ করি তোমার নবী, দয়ার নবী মুহাম্মদ (সা.) এর (দোয়ার) মাধ্যমে। আমি তোমার দিকে ঝুঁকে পড়লাম, আমার প্রয়োজনের জন্য আমার প্রভুর দিকে ধাবিত হলাম, যাতে আমার এ প্রয়োজন পূর্ণ করে দেওয়া হয়। হে আল্লাহ! আমার প্রসঙ্গে তুমি তাঁর সুপারিশ কবুল করো।’
উসমান ইবনে হুনাইফ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক অন্ধ ব্যক্তি নবী (স.) এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করুন, যেন আমাকে তিনি আরোগ্য দান করেন। তিনি বলেন, তুমি কামনা করলে আমি দোয়া করব, আর তুমি চাইলে ধৈর্য ধারণ করতে পারো, সেটা হবে তোমার জন্য উত্তম। সে বলল, তার কাছে দোয়া করুন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে উত্তমভাবে অজু করার হুকুম করলেন এবং এই দোয়া করতে বললেন। (তিরমিজি: ৩৫৭৮; ইবনু খুজাইমা: ২/২২৫; মুসতাদরাক হাকিম: ১/৭০৭; তাবরানি: ৯/১৭)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক পদ্ধতিতে হাদিসে বর্ণিত দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে কঠিন কঠিন রোগ থেকে সারাজীবন মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

