বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

তারাবি পড়িয়ে হাদিয়া নেওয়ার বিধান

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২৩, ০২:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

তারাবি পড়িয়ে হাদিয়া নেওয়ার বিধান

তারাবির নামাজ পবিত্র রমজানের বিশেষ ইবাদত। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা। মসজিদে তারাবির জামাত পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া। এলাকার জামে মসজিদে তারাবির জামাত হওয়ায় কেউ কেফায়া ছেড়ে দিলেও মুক্ত হয়ে ‎যাবে। কিন্তু আলাদাভাবে তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা বাকি থাকবে প্রত্যেকের ওপর।

তারাবির নামাজে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও কোরআন খতমের রেওয়াজ রয়েছে। যেহেতু কোরআন খতমের বিষয়, তাই সাধারণত হাফেজরাই তারাবি নামাজের ইমামতি করেন। দেখা যায়, হাফেজদের শ্রমের মূল্য দেওয়ার জন্য বা তারাবির হাদিয়া দেওয়ার জন্য রোজা ১৫টার পর থেকে তোড়জোড় শুরু হয় প্রায় মসজিদে। অনেক মহল্লায় মুসল্লিদের টাকা ধার্য করে দেয় মসজিদ কমিটি।


বিজ্ঞাপন


জানার বিষয় হলো— এভাবে টাকা দেওয়া-নেওয়া জায়েজ আছে কি? বিনিময় দেওয়া ছাড়া যদি কোনো হাফেজ না পাওয়া যায় তাহলে কী হবে? এর উত্তর হলো—তারাবির নামাজে কোরআন খতমের বিনিময় দেওয়া ও নেওয়া কোনোটিই জায়েজ নেই। বিনিময় দেওয়া ছাড়া যদি কোনো হাফেজ না পাওয়া যায় তাহলে সুরা ফিল বা ‘আলাম তারা’ থেকে শেষ পর্যন্ত সুরাগুলো দিয়ে (তারাবি) নামাজ পড়ে নিবে।
(সুরা বাকারা: ১৪; মুসনাদে আহমদ: ২৪/ ২৯৫; রদ্দুল মুহতার: ৬/৫৫-৬৫; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৪/৪৪৮; খুলাসাতুল ফতোয়া: ৩/১১৪; ইমদাদুল আহকাম: ২/২৬৯; ইমদাদুল ফতোয়া: ১/৪৮৪)

ফুকাহায়ে কেরাম কেবল ওসব ইবাদতের ক্ষেত্রে পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েজ বলেছেন যেগুলো ‎জরুরিয়াতে দ্বীন তথা দ্বীনের আবশ্যকীয় ‎বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- ১। দ্বীন শেখানো, ইমামতি, মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব ইত্যাদি। খতম তারাবি জরুরিয়াতে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় যে, তা না হলে দ্বীনের ক্ষতি হয়ে যাবে। চাইলে সহজে সুরা তারাবিও পড়াতে পারেন ইমাম। সুতরাং টাকার প্রশ্ন আসলে হাফেজ নির্ধারণ করা জায়েজ নেই; হাফেজদের পক্ষ থেকে টাকা দাবি করাও জায়েজ নেই।

আরও পড়ুন
তারাবি না পড়লে রোজা মাকরুহ হবে?
তারাবি নামাজ: সুন্নাহভিত্তিক নিয়ম ও দোয়া

হাফেজদের দেওয়া বিনিময়কে জায়েজ করার জন্য কোনো হিলা গ্রহণের অনুমতিও ইসলামি শরিয়তে নেই। যেমন রমজানে হাফেজকে দুয়েক ওয়াক্ত নামাজের ইমামতির দায়িত্ব দেওয়া হবে—এই কারণে তার তারাবির হাদিয়া হালাল হয়ে যাবে। এটি সঠিক পদ্ধিতি নয়। এটি কেবল বাহানা। যা পরিহার করা জরুরি। কারণ এই হিলার অর্থ হলো—এ বিনিময়টা তাকে ফরজ নামাজের ইমামতির জন্য দেওয়া হচ্ছে, খতম তারাবির জন্য নয়। কিন্তু নিজের মনকে একটু প্রশ্ন করে দেখুন, যদি ওই হাফেজ সাহেব তার দায়িত্বে অর্পিত ফরজ নামাজের ইমামতি যথাযথ গুরুত্বের সাথেই আদায় করেন, কিন্তু খতম তারাবির ইমামতি না করেন তবে কি তাকে ওই বিনিময় দেওয়া হত? এ কথা সুস্পষ্ট যে, কখনও তা দেওয়া হত না। বোঝা গেল, বিনিময়টা মূলত খতম তারাবির, ফরজের ইমামতির নয়। এজন্যই আকাবিরদের অনেকে এই হিলা প্রত্যাখ্যান করেছেন। দলিলের ভিত্তিতে তাঁদের ফতোয়াই সহিহ। (দেখুন: ইমদাদুল ফতোয়া: ১/৩২২; ইমদাদুল আহকাম: ১/৬৬৪)


বিজ্ঞাপন


হজরত আবদুর রহমান ইবনে শিবল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পড় তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না এবং তার প্রতি বিরূপ হয়ো না। কোরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না। (মুসনাদে আহমদ: ৩/৪২৮)

হজরত ইমরান ইবনে হোসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পড় এবং আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করো। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কোরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে। (মুসনাদে আহমদ: ৪/৪৩৭)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাকিল থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমজান মাসে লোকদের নিয়ে তারাবি পড়লেন। এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ (রহ.) তার কাছে এক জোড়া কাপড় এবং পাঁচশ দিরহাম পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া ও দিরহামগুলো এই বলে ফেরত দিলেন যে, আমরা কোরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৫/২৩৭)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তারাবিসহ প্রত্যেক ফজিলতপূর্ণ আমলের ব্যাপারে সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। পবিত্র রমজানের পবিত্রতা রক্ষার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর