মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪, ঢাকা

১৪ কারণে রমজান বিশেষ ফজিলতপূর্ণ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২২, ১২:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

১৪ কারণে রমজান বিশেষ ফজিলতপূর্ণ

মাহে রমজান মুমিন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এ মাস আখেরাতের পাথেয় গোছানোর মাস; প্রস্তুতিগ্রহণ ও তাকওয়া অর্জনের মাস। ক্ষমালাভের অগাধ সুযোগ রয়েছে এ মাসে। তাই আমাদের পূর্বসূরিরা ইবাদত বন্দেগির জন্য, মহান রবের সান্নিধ্য অর্জনের জন্য পবিত্র রমজানকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতেন। রমজানের প্রতীক্ষায় দিন গণনা করতেন। অন্য মাসগুলোর তুলনায় এ মাসের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা রয়েছে। যেমন—

১) রমজানের রোজা ফরজ ও ইসলামের চতুর্থ রোকন নির্ধারণ


বিজ্ঞাপন


পবিত্র রমজানে রোজা রাখাকে ফরজ নির্ধারণ করে আল্লাহ তাআলা বলেন—

‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছে তোমাদের আগের লোকদের ওপর, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)

সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত। ১) এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (স.) তাঁর বান্দা ও রাসুল ২) নামাজ কায়েম করা ৩) জাকাত আদায় করা ৪) রমজান মাসের রোজা পালন করা ৫) হজ পালন করা।

২) কোরআন নাজিলের মাস


বিজ্ঞাপন


রমজানের মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস, এতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)

৩) রমজানে জান্নাত, জাহান্নাম ও শয়তানের অবস্থা

রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—

‘যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘শয়তানদের শিকল পরানো হয়।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৪৭)

৪) রমজান মাসে শবে কদর

শবেকদর রমজানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘লাইলাতুল কদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত’ (সুরা আল-কদর: ৩-৫)। ‘যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে সমূহ কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো।’ (নাসায়ি: ২১০৫)

৫) দোয়া কবুলের মাস

পবিত্র রমজান হলো দোয়া কবুলের মাস। হাদিসে এসেছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত ও দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়। (মাজমুউ মুআল্লাফাতিল আলবানি: হাদিস নং- ১০০২)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, 'অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের প্রতি দিবস ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ৭৪৫০; মুসনাদে বাজ্জার: ৯৬২)

৬) ক্ষমা লাভের মাস

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় রমজানের রোজা পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত (নামাজ) আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৮৭)

যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপগুলো ক্ষমা করানো থেকে বঞ্চিত হলো, মহানবী (স.) তাকে ধিক্কার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক, যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি।’ (জামেউল উসুল: ১৪১০)

৭) জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভের মাস

‘যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে, তখন শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শেকল দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এর একটি দরজাও বন্ধ হয় না এবং একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, হে সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি! অগ্রসর হও, হে অসৎকর্মপরায়ণ! থেমে যাও। আল্লাহ (রমজানের) প্রতিটি রাতে অনেক লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন।’(সহিহ বুখারি: ১৮৯৮, ১৮৯৯,৩২৭৭; মুসলিম: ১০৭৯)

৮) আমলের প্রতিদান বহুগুণ বৃদ্ধি

পবিত্র রমজানে আমলের নেকি বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়। স্বাভাবিকভাবে কোরআন তেলাওয়াতে প্রতিটি হরফে ১০টি নেকি পাওয়া যায়। কিন্তু রমজানের ফজিলতের কারণে তা ৭০ গুণ বৃদ্ধি হয়ে প্রতি হরফে পাওয়া যায় ৭০০ নেকি। সাধারণত নামাজে তেলাওয়াত করলে প্রতি হরফে পাওয়া যায় ১০০ নেকি। রমজানে নামাজে তেলাওয়াত করলে তা ৭০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে সাত হাজার নেকি প্রতি হরফে পাওয়া যায়। এমনিভাবে সকল ইবাদত-বন্দেগিসহ সব সৎ কাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়।

৯) তাকওয়া অর্জনের মাস

তাকওয়ার জীবন পরিশুদ্ধ জীবন ও সফলতার জীবন। তাকওয়ার গুণ অর্জন ছাড়া দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার আর কোনো বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআন ও নবীজির অনেক হাদিসে তাকওয়ার নীতি অবলম্বনের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে। সুরা আলে ইমরানের ১০২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করো এবং আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোনো অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করো না।’

আর তাকওয়া অর্জনের মাস হচ্ছে পবিত্র রমজান। আল্লাহ তাআলা সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান দেওয়া হয়েছিল পূর্ববর্তীদের, যাতে তোমরা মুত্তাকি (তাকওয়াসম্পন্ন) হতে পারো।’

১০) ধৈর্য ও সবরের মাস

এ মাসে ঈমানদার ব্যক্তিরা খাওয়া-দাওয়া, বিয়ে-শাদি ও অন্য সব আচার-আচরণে ধৈর্য ও সবরের এত বেশি অনুশীলন করেন, তা অন্য কোনো মাসে বা অন্য কোনো পর্বে করেন না। এমনিভাবে রোজা পালন করে যে ধৈর্যের প্রমাণ দেওয়া হয়, তা অন্য কোনো ইবাদতে পাওয়া যায় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, ‘ধৈর্যশীলদের তো বিনা হিসাবে পুরস্কার দেওয়া হবে।’ (সুরা জুমার: ১০)

১১) ওমরা পালনের মাস

রমজানে একটি ওমরা আদায় করলে অন্য মাসে ৭০টি ওমরা করার সাওয়াব হয়। তাই এ মাসে ওমরা আদায় করাটাও অনেক বড় সওয়াবের কাজ। এ প্রসঙ্গে এক বর্ণনায় এসেছে, মহানবী (স.) বলেছেন, ‘রমজান মাসে ওমরা আদায় আমার সঙ্গে হজ আদায়ের সমতুল্য।’ (মাজমাউল কাবির: ৭২২, জামেউল আহাদিস: ১৪৩৭৯)

১২) মক্কা বিজয়সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার মাস

ইসলামের ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয় ঘটনার সাক্ষী পবিত্র মাস রমজান। মক্কা বিজয়, বদর যুদ্ধে মুসলমানদের জয়লাভসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে পবিত্র রমজান মাসে। প্রথম সারির আসমানি গ্রন্থগুলোও পবিত্র রমজানে নাজিল হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে রাসুল (স.) বলেন, ‘ইবরাহিম (আ.)-এর ওপর সহিফাগুলো রমজানের প্রথম রাতে অবতীর্ণ হয়। রমজানের ষষ্ঠ দিনে তাওরাত অবতীর্ণ হয়। ১৩ রমজানে ইনজিল অবতীর্ণ হয়েছে। জাবুর রমজানের ১৮তম দিনে অবতীর্ণ হয়। কোরআন অবতীর্ণ হয় রমজানের ২৪তম দিনে।’(মুসনাদে আহমদ: ১৬৯৮৪)

আরও দেখুন: রমজান মাসের ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ

১৩) রোজার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ দেবেন

রোজার সওয়াব সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- (তরজমা) ‘নিশ্চয়ই রোজা আমার জন্য, আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দিব।’ (মুসলিম: ১১৫১/১৬৫)

১৪) জান্নাতে বিশেষ দরজা

জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি বিশেষ দরজা রয়েছে, যা দিয়ে একমাত্র রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (মুসলিম: ১১৫২)। 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাইয়িদুশ শুহুর তথা সকল মাসের সেরা মাস পবিত্র রমজানে তাকওয়া অর্জন করার তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি নেকি অর্জন করার তাওফিক দান করুন। লাইলাতুল কদর নসিব করুন। সর্বোপরি জান্নাতলাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর