শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রোজাদারের সওয়াব ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসে যা আছে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৪:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

রোজাদারের সওয়াব ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসে যা আছে

রমজানের রোজা ইসলামের অন্যতম রোকন এবং ফরজ ইবাদত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী হতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)

রমজানের রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম: ২৭৬০)


বিজ্ঞাপন


‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের একটি রোজা ভঙ্গ করবে, সে আজীবন সেই রোজার (ক্ষতিপূরণ) আদায় করতে পারবে না।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৯৮৭৮)

রোজাদারকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম। রমজানের বিধান যথাযথ আদায়ের কারণে রোজাদারের অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে ও সওয়াবলাভের আশায় রমজানের রোজা পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াবলাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত (নামাজ) আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৮৭)

এছাড়াও হাদিসে এসেছে, রোজাদারদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়, তাদের দোয়া কবুল করা হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, 'অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের প্রতিদিন ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ৭৪৫০; মুসনাদে বাজ্জার: ৯৬২)

আরও পড়ুন: রমজানে যেসব গুনাহ ভুলেও করবেন না

অন্য হাদিসে আছে, ‘ইফতারের মুহূর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে‘ (আহমদ: ৫/২৫৬)

‘সিয়াম ঢাল স্বরূপ। এ দ্বারা বান্দা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পারো’ (আহমদ: ১৫২৯৯)। অন্য হাদিসে এসেছে,‘সিয়াম ঢালস্বরূপ এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার এক মজবুত দুর্গ।’ (আহমদ : ৯২২৫)

‘রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিশকের চেয়েও সুগন্ধিময়...’ (বুখারি: ১৯০৪, মুসলিম: ২৭৬২)। আবু উমামা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যার কারণে আমি জান্নাতে যেতে পারি। তিনি বললেন, ‘তুমি সিয়াম পালন করো। কেননা এর চেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কোনো ইবাদত নেই।’ (নাসায়ি: ২২২১)

শয়তানের হয়রানি থেকেও মুক্ত থাকেন একজন রোজাদার। কারণ, রোজা শুরু হওয়ার সময় শয়তানকে শেকলবন্দি করা হয়। একইসঙ্গে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয় এবং খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের সকল দরজা।

আরও পড়ুন: রমজানে শয়তান শেকলবন্দি, তবুও পাপাচার হয় কেন

মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাসের প্রথম রজনীতে শয়তানদের মজবুতভাবে বেঁধে রাখা হয় এবং অবাধ্য জিনদেরও বন্দি করে রাখা হয়। দোজখের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোনো দরজা পুরো রমজান মাসে খোলা হয় না এবং জান্নাতের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। সঙ্গে সঙ্গে একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকেন—হে সওয়াবপ্রত্যাশী! অগ্রসর হও। হে পাপিষ্ঠ! পাপ থেকে হাত গুটিয়ে নাও। আল্লাহ তাআলা এই পবিত্র মাসের সম্মানার্থে অনেক পাপিষ্ঠকে ক্ষমা করে দেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। আর এটি রমজানে প্রতি রাতেই হয়ে থাকে।’(বায়হাকি, শুআবুল ইমান: ৩৫৯৭-৯৮)

‘মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, কিন্তু সিয়ামের বিষয়টি ভিন্ন। কেননা সিয়াম শুধুমাত্র আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম: ১১৫১)

অর্থাৎ সংখ্যা দিয়ে গুণ করে রোজার প্রতিদান দেওয়া হবে না। বরং রোজার কোনো হিসাব নেই, শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন সিয়ামের পুণ্যের ভাণ্ডার কত সুবিশাল হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে ৭০ বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন।’ (বুখারি: ২৮৪০; মুসলিম: ১১৫৩)

রোজাদার যখন আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, তখন তাঁর আনন্দের সীমা থাকবে না। তাকে আনন্দের একটি মুহূর্ত দুনিয়াতেই দেওয়া হয়েছে। এসম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটো বিশেষ আনন্দ-মুহূর্ত রয়েছে : একটি ইফতারের সময়, আর দ্বিতীয়টি হলো তার রবের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। (বুখারি: ৭৪৯২; মুসলিম: ১১৫১)

আরও পড়ুন: ১৪ কারণে রমজান বিশেষ ফজিলতপূর্ণ

‘জান্নাতে রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি: ১৮৯৬; মুসলিম: ১১৫২)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রমজান মাস লাভকারী ব্যক্তি, যিনি উত্তমরূপে সিয়াম ও কিয়াম পালন করে, তার প্রথম পুরস্কার— রমজান শেষে গুনাহ থেকে ওই দিনের মতো পবিত্র হয়— যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৮৯৬৬)

রোজা ও কোরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, রোজা বলবে- হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় তাকে (এ রোজা পালনকারীকে) পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো। অনুরূপভাবে কোরআন বলবে, হে আমার রব, আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো। তিনি (স.) বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে। (আহমদ: ২/১৭৪)

এভাবে বহু নেকি, নেয়ামত ও ফজিলত অর্জন করেন একজন রোজাদার আর অভিষিক্ত হন অনন্য মর্যাদায়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ মর্যাদার অংশীদার করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর