ওমরা শব্দের অর্থ জিয়ারত করা, পরিদর্শন করা ও সাক্ষাৎ করা। পবিত্র কাবাঘরের জিয়ারতই মূলত ওমরা। ইসলামের ভাষায় হজের সময় ছাড়া অন্য যেকোনো সময় পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফসহ নির্দিষ্ট কিছু কাজ করাকে ওমরা বলে। সামর্থ্য থাকলে জীবনে একবার ওমরা করা সুন্নতে মোয়াক্কাদা। এটি পুরুষ ও মহিলা সবার জন্য প্রযোজ্য।
ওমরার জন্য নির্দিষ্ট সময় নেই। শুধু হজের মৌসুমে বা জিলহজ মাসের ৯-১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঁচ দিন ওমরা করা মাকরুহ। নিচে ওমরা পালনের পার্থিব ও অপার্থিব উপকার নিয়ে আলোচনা করা হলো—
বিজ্ঞাপন
গুনাহ মাফ হয়
রাসুলু্ল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘এক ওমরার পর আরেক ওমরা—উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারাস্বরূপ। আর জান্নাতই হলো কবুল হজের প্রতিদান।’ (বুখারি: ১৭৭৩) তাই সামর্থ্য থাকলে সুযোগ পেলেই ওমরা করা উচিত।
আরও পড়ুন: গুনাহ মাফ ছাড়াও ইস্তেগফারের ৬ বিস্ময়কর উপকার
রমজানে ওমরা হজের সমতুল্য
রমজান মাসে ওমরা পালন করলে হজের সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) এক আনসারি নারীকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে হজ করতে তোমার বাধা কিসের? ইবনে আব্বাস (রা.) নারীর নাম বলেছিলেন; কিন্তু আমি ভুলে গেছি। ওই নারী বলল, ‘আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল; কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও তার পুত্র (অর্থাৎ নারীর স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে চলে গেছেন। আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট, যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি। নবী (স.) বলেন, আচ্ছা, রমজান এলে তখন ওমরা করে নিয়ো। কেননা রমজানের একটি ওমরা একটি হজের সমতুল্য।’ (বুখারি: ১৭৮২)
রিজিক বাড়ে
অধিক ওমরা করার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা ওমরা পালনকারীর রিজিকে বরকত দেন। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, তোমরা ধারাবাহিক হজ ও ওমরা আদায় করতে থাকো। এ দুটি আমল দারিদ্র্য ও গুনাহ বিদূরিত করে দেয়। যেমন—ভাটার আগুনে লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা-জং দূরীভূত হয়ে থাকে। (তিরমিজি: ৮১০)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: যেসব গুনাহের কারণে রিজিক কমে যায়
হজ-ওমরাকারী আল্লাহর মেহমান
হজ ও ওমরা পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান বা প্রতিনিধি। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আল্লাহর পথে যুদ্ধে বিজয়ী, হজকারী ও ওমরাকারী আল্লাহর মেহমান বা প্রতিনিধি। আল্লাহ তাদের আহ্বান করেছেন, তারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আর তারা তাঁর কাছে চেয়েছেন এবং তিনি তাদের দিয়েছেন। (ইবনে মাজাহ: ২৮৯৩; ইবনে হিব্বান: ৩৪০০)
হজ-ওমরার সফরে মারা গেলে
হজ-ওমরা করার নিয়তে বের হয়ে মারা গেলে হজের সওয়াব পেতে থাকবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে; অতঃপর সে মারা গেছে, তার জন্য কেয়ামত পর্যন্ত হজের নেকি লেখা হতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি ওমরার উদ্দেশ্যে বের হয়ে মারা যাবে, তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত ওমরার নেকি লেখা হতে থাকবে।’ (সহিহুত-তারগিব ওয়াত-তারহিব: ১১১৪)
আরও পড়ুন: হজযাত্রায় মৃত্যু হলে কেয়ামত পর্যন্ত হজের সওয়াব
প্রতি কদমে নেকি
আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যখন তুমি বায়তুল্লাহর উদ্দেশে আপন ঘর থেকে বের হবে, তোমার উটনীর প্রত্যেকবার পায়ের ক্ষুর রাখা এবং ক্ষুর তোলার সঙ্গে সঙ্গে তোমার জন্য একটি করে নেকি লেখা হবে, তোমার একটি করে গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। (সহিহ তারগিব: ১১১২)
অন্যকে ওমরা করানোর ফজিলত
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, নবী (স.)-এর কাছে একজন লোক এসে তার নিজের জন্য একটি বাহন চাইল। কিন্তু তাকে তিনি দেওয়ার মতো কোনো বাহন না পেয়ে তাকে অন্য এক লোকের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। সেই ব্যক্তি তাকে একটি বাহন দিল। সে এ ঘটনাটি নবী (স.)-এর কাছে এসে বললে তিনি বলেন, সৎকাজের পথপ্রদর্শক উক্ত কাজ সম্পাদনকারীর সমতুল্য। (তিরমিজি: ২৬৭০)
এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, সামর্থ্যহীন কাউকে হজ-ওমরা করালে নিজেও হজ-ওমরার সমান সওয়াব লাভ করবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাই পবিত্র কাবাঘর জেয়ারতের তাওফিক দান করুন। আমিন।