অনেক সময় ছোট শিশুরা ভীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে থাকে। এর প্রভাবে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে অথবা সবসময় কান্নাকাটি করতে থাকে। তখন তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং সব ধরনের ক্ষতি থেকে নিজে এবং সন্তানদের বাঁচাতে আল্লাহর কাছে নবীজি (স.)-এর শেখানো দোয়ার মাধ্যমে আশ্রয় চাওয়া উচিত।
আমর ইবনে শুআইব (রহ.) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর বাবা ও দাদার সূত্র থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁদের ভীতিকর পরিস্থিতিতে নিচের বাক্যগুলোর মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করার শিক্ষা দিতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) এ বাক্যগুলো তাঁর সাবালক সন্তানদের শেখাতেন এবং নাবালকদের জন্য লিখে তা তাদের গলায় ঝুলিয়ে দিতেন। দোয়াটি হলো— أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ উচ্চারণ: ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন গাজাবিহি, ওয়া শাররি ইবাদিহি, ওয়া মিন হামাজাতিশ শায়াতিনি ওয়া আঁইয়াহদুরুন।’ অর্থ: ‘আল্লাহর পূর্ণ কলেমাসমূহের দ্বারা তাঁর গজব ও তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট ও শয়তানের কুমন্ত্রণা ও আমার কাছে তার (শয়তানের) উপস্থিতি থেকে আশ্রয় চাইছি।’ (আবু দাউদ: ৩৮৯৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: শয়তান থেকে সারাদিন নিরাপদ থাকার উপায়
সন্তানকে বিভিন্ন অনিষ্ট ও ক্ষতি থেকে বাঁচাতে মা-বাবার করণীয় হলো— নবীজি (স.) থেকে বর্ণিত দোয়া নিয়মিত পাঠ করা। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (স.) নিম্নোক্ত দোয়ার মাধ্যমে হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেন, দোয়াটির মাধ্যমে তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.) ইসমাইল ও ইসহাকের জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
দোয়াটি হলো— أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ উচ্চারণ: ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়তানিন, ওয়া হাম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কলেমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় কামনা করছি। (বুখারি: ৩৩৭১)
বিজ্ঞাপন
কেউ বদনজরের শিকার হলে নিচের দোয়াটি পড়ে ফুঁ দিতে হবে। যেটি ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) নবীজিকে অসুস্থতার সময় পড়ে ফুঁ দিয়েছিলেন। দোয়াটি হলো— بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ ‘বিসমিল্লাহি আরকিকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ু’যিকা, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন ও ওয়া হাসিদিন আল্লাহু ইয়াশফিকা, বিসমিল্লাহি আরকিকা।’ অর্থ: ‘আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি; যেসব জিনিস আপনাকে কষ্ট দেয়, সেসব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি। (মুসলিম: ৫৫১২)
এছাড়াও সুরা ফালাক ও নাস তিনবার পড়ে ফুঁ দেওয়ার মাধ্যমেও বদনজরসহ মানুষ ও জিনের যাবতীয় অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা যায়। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) জ্বিন এবং মানুষের কু-দৃষ্টি হতে আশ্রয় চাইতেন। তারপর সুরা ফালাক ও নাস নাজিল হলে তিনি এ সুরা দুটি গ্রহণ করেন এবং বাকিগুলো পরিত্যাগ করেন।’ (তিরমিজি: ২০৫৮)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সন্তানদের সবসময় সুস্থ রাখুন। সবরকম অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন। সার্বিক সুরক্ষা দান করুন। আমিন।

