প্রাণী মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কেউ পালিয়েও মৃত্যুর ফেরেশতা থেকে আড়াল হতে পারবে না। যে কোনো সময় মৃত্যু চলে আসতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন মাটিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।’ (সুরা লোকমান: ৩৪)
আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘...অতঃপর যখন সেই সময়টি এসে যায়, তখন তারা সেখান থেকে এক মুহূর্ত আগপিছ করতে পারে না।’ (সুরা নাহল: ৬১)
দুনিয়ার পাগলেরা সুদৃঢ় ও সুউচ্চ প্রাসাদসমূহ নির্মাণের প্রতিযোগিতা করে। যুগের পর যুগ সময় নষ্ট করে প্রাসাদ নির্মাণ প্রজেক্টের পেছনে। অথচ তাকে চলে যেতে হবে সব ছেড়ে মাটির গর্তে। যেখানে তার নিচে, উপরে, ডানে বামে থাকবে শুধুই মাটি। যা থেকে সে সারা জীবন গা বাঁচিয়ে চলেছে। আল্লাহ বলেন, ‘যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই। এমনকি যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গেও অবস্থান করো।’ (সুরা নিসা: ৭৮)
আরও পড়ুন: মৃত্যু আসার আগে ১১টি কাজ দ্রুত শেষ করুন
শয়তানের ধোঁকায় মানুষ রঙ্গিন দুনিয়ার প্রতি লালায়িত হয় এবং মৃত্যুর কথা ভুলে যায়। আল্লাহ বলছেন, ‘বেশি থেকে বেশি (দুনিয়া) কামানোর লোভ তোমাদের গাফেল করে রাখে।’ (সুরা তাকাসুর: ১)
অথচ বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করলে দুনিয়ার মোহ কেটে যায় এবং আখেরাতের চিন্তা জাগ্রত হয়। ফলে তা বান্দার মধ্যে বেশি বেশি নেক আমলের প্রেরণা সৃষ্টি করে এবং ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় অবৈধ ভোগবিলাস থেকে বিরত রাখে। তাই তো মহানবী (স.) বলেছেন, ‘সব ভোগ-উপভোগ বিনাশকারী মৃত্যুকে তোমরা বেশি বেশি স্মরণ করো।’ (তিরমিজি: ২৪০৯)
বিজ্ঞাপন
মৃত্যুর কথা যাদের স্মরণ হয় না, তাদেরকে নেককার লোকের সংস্পর্শে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন আলেমরা। নেককার লোকের সংস্পর্শ শুধু মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয় না, হৃদয়ে ঈমানি চেতনা জাগ্রত করে এবং নেক আমলের হিম্মত ও প্রেরণা বৃদ্ধি করে। কারণ, নেককার ব্যক্তিদের ইবাদত-মগ্নতা, পুণ্যের কাজে উদ্যম ও প্রতিযোগিতা যখন কেউ প্রত্যক্ষ করে, তখন তার মধ্যেও পুণ্যের পথে চলার সাহস ও প্রেরণা জাগে। একইভাবে মানুষ যখন তাদের আল্লাহমুখিতা ও দুনিয়াবিমুখতা প্রত্যক্ষ করে, তখন তাদের মনেও এই বৈশিষ্ট্য অর্জনের আগ্রহ জাগে।
আরও পড়ুন: আলেমের মর্যাদা ও বিদ্বেষপোষণের পরিণতি
মৃত্যুকে স্মরণ করার আরেকটি উপযুক্ত মাধ্যম হলো কবর জিয়ারত। কবর মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় তার পরিণামের কথা। মৃত্যুর পর আপনজনই তো কবর খনন করে। মৃতকে অন্ধকার ঘরে শায়িত করে। মাটির নিচে রেখে ফিরে আসে। তাই মৃত্যুর স্মরণের জন্য কবর জিয়ারত করতে উৎসাহিত করেছেন নবীজি (স.)। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা কবর জিয়ারত করো। কারণ তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (মুসলিম: ৯৭৬)
মৃত্যুকে যারা বেশি স্মরণ করে এবং আল্লাহকে ভয় করে তাদের সবচেয়ে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান বলা হয়েছে কোরআন ও হাদিসে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল। (সুরা ফাতির: ২৮)
এক হাদিসে নবীজি বলেন, ‘..যারা মৃত্যুকে বেশি স্মরণ করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তারাই সর্বাধিক বুদ্ধিমান।’ (ইবনে মাজাহ: ৪২৫৯)
যারা পরকালের বিষয়ে গাফেল কিংবা অসচেতন তারা কোরআন ও নবীজির ভাষ্য অনুযায়ী নিতান্তই বোকা। তাদের সতর্ক করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা কীভাবে আল্লাহকে অস্বীকার করো? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদের জীবন দান করেছেন। আবার তোমাদের মৃত্যু দেবেন ও পুনরায় জীবন দেবেন এবং চূড়ান্ত পরিণতিতে তোমরা তাঁর দিকেই ফিরে যাবে।’ (সুরা বাকারা: ২৮)
আরও পড়ুন: আল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের উপায়
সুতরাং বুদ্ধিমান মুমিনরা সুখে-দুখে সবসময় মৃত্যুর কথা স্মরণ করবেন—এটি স্বাভাবিক। আর যারা মৃত্যুকে অধিক পারিমাণে স্মরণ করে, স্বভাবতই তাদের মৃত্যুও সুন্দর হয়। কারণ মৃত্যুর ভয়ে তারা বিশুদ্ধ ঈমান ও নেক আমলের প্রতি সচেষ্ট ছিলেন। ফলে তাদের মৃত্যুটা হয় তোহফাস্বরূপ। শুধু জান্নাতে প্রবেশ করাটাই যেন বাকি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করার তাওফিক দান করুন। অন্তহীন জীবনের প্রস্তুতি হিসেবে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

