আল্লাহ তাআলা সকল উম্মতের ওপর এই উম্মতকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানবজাতির জন্য’ (সুরা আলে ইমরান: ১১০)। শ্রেষ্ঠ উম্মতের মধ্যেও কিছু গুণের অধিকারী মানুষকে শ্রেষ্ঠ বলেছেন মহানবী (স.)। হাদিসের আলোকে এখানে সেসব লোকের পরিচয় তুলে ধরা হলো।
যারা কোরআন শেখে ও শেখায়
পবিত্র কোরআনের খেদমতে যারা আত্মনিয়োগ করবেন, তাঁরা শ্রেষ্ঠ। উসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সে-ই, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।’ (বুখারি: ৫০২৭)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: কোরআন না বুঝে ও বুঝে পড়ার পার্থক্য
আলেম
আলেমদেরও শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন নবীজি (স.)। আবু উমামাহ আল-বাহিলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দুজন লোকের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে আলোচনা করা হলো। তাঁদের একজন আবেদ (সাধক, অধিক ইবাদতকারী) এবং অন্যজন আলেম। মহানবী (স.) বলেছেন, তোমাদের সাধারণ ব্যক্তির ওপর আমার যতখানি মর্যাদা, ঠিক তেমনি একজন আলেমের মর্যাদা একজন আবেদের ওপর। তারপর রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতারা এবং আসমান-জমিনের অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের পিঁপড়া ও পানির মাছ পর্যন্ত সেই ব্যক্তির জন্য দোয়া করে, যে মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষা দেয়। (তিরমিজি: ২৬৮৫)
আরও পড়ুন: আলেমের মর্যাদা ও বিদ্বেষপোষণের পরিণতি
সত্যবাদী
আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলা হলো, কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বলেন, প্রত্যেক বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী সত্যভাষী ব্যক্তি। (ইবনে মাজাহ: ৪২১৬)
বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী
একই হাদিসের শেষাংশে রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, সত্যভাষীকে তো আমরা চিনি, কিন্তু বিশুদ্ধ অন্তরের ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, সে হলো পূতপবিত্র নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ, যার কোনো গুনাহ নেই, নেই কোনো দুশমনি, হিংসা-বিদ্বেষ, আত্ম-অহমিকা ও কপটতা। (ইবনে মাজাহ: ৪২১৬)
আরও পড়ুন: জান্নাতি মানুষের ১১ গুণ
পাওনা পরিশোধ করার ক্ষেত্রে উদার
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (স.)-এর কাছে কোনো এক ব্যক্তির একটি বিশেষ বয়সের উট পাওনা ছিল। সেই পাওনার জন্য এলে তিনি সাহাবিদের বললেন, তার পাওনা দিয়ে দাও। তাঁরা সেই উটের সমবয়সী উট অনেক খোঁজাখুঁজি করলেন, কিন্তু পেলেন না। অবশ্য তা থেকে বেশি বয়সের উট পেলেন। তখন নবী (স.) বললেন, তা-ই দিয়ে দাও। তখন লোকটি বলল, আপনি আমার প্রাপ্য পুরোপুরি আদায় করেছেন; আল্লাহ আপনাকেও পুরোপুরি প্রতিদান দিন। নবী (স.) বললেন, যে পরিশোধ করার বেলায় উদার, সে-ই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি। (বুখারি: ২৩০৫)
যে তার পরিবারের কাছে উত্তম
নবী (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি।’ (ইবনে মাজাহ: ১৯৭৭; তিরমিজি: ৩৮৯৫)
মৃত ব্যক্তির সমালোচনা বর্জনকারী
এই হাদিসের শেষাংশে রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, আর তোমাদের কোনো সঙ্গী মৃত্যুবরণ করলে তার সমালোচনা পরিত্যাগ করো। (তিরমিজি: ৩৮৯৫)
এই উম্মতের মধ্যে কারা শ্রেষ্ঠ সেটি স্বয়ং দোজাহানের সর্দার মহানবী (স.)-এর বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা গেলো। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবীজির ঘোষিত সেসব গুণের অধিকারী মানুষের কাতারে আমাদের সবাইকে শামিল করুন। আমিন।

