ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো নামাজ। মুসলমানদের প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করা ফরজ। যে যেখানে থাকুক না কেন, সময়মতো নামাজ আদায় করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا ‘নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)
পূর্ণ মনোযোগ ও একাগ্রতার সঙ্গে নামাজ পড়তে উৎসাহিত করে ইসলাম। নামাজে দাঁড়িয়ে এ খেয়াল করতে হবে যে, আমি আল্লাহ তাআলার সম্মুখে দাঁড়িয়েছি এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলছি। কেননা নামাজ হলো আল্লাহ তাআলার সঙ্গে একান্তে কথোপকথন করা। সহিহ বুখারিতে এসেছে, সাহাবি আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মুমিন যখন নামাজে থাকে সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে নিভৃতে কথা বলে।’ (সহিহ বুখারি: ৪১৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: নামাজ জামাতে পড়ার তাগিদ কেন?
নামাজের সব রুকন ধীরস্থিরভাবে আদায় করা ওয়াজিব। (অর্থাৎ রুকু, সেজদা ও রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এবং দুই সেজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসে কমপক্ষে এক তাসবিহ পরিমাণ দেরি করা)। (বুখারি ১/১০৯: ৭৯৩, মুসলিম ১/১৭০: ৩৯৭, আবু দাউদ ১/১২৪, ১২৪: ৮৫৬, ৮৫৭, ৮৫৮)
নামাজে যারা পূর্ণভাবে রুকু-সেজদা আদায় করে না, তাদেরকে সবচেয়ে বড় চোর সাব্যস্ত করেছেন মহানবী (স.)। হজরত নোমান ইবনে মুররা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মদ্যপ, চোর ও ব্যভিচারী সম্পর্কে তোমাদের কী মত? যখন এই প্রশ্ন করা হয়, তখনো এদের সম্পর্কে কোনো হুকুম অবতীর্ণ হয়নি। তাঁরা উত্তর দিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অধিক জ্ঞাত। রাসুল (স.) বললেন, এগুলো ঘৃণ্য ও জঘন্য পাপ, এসবের সাজা রয়েছে। আর যে ব্যক্তি নিজের নামাজ চুরি করে, সে চুরি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় চুরি। তাঁরা (সাহাবিরা) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপন নামাজ চুরি করে কীভাবে? তিনি বলেন, যে নামাজের রুকু ও সেজদা পূর্ণভাবে আদায় করে না। (মুয়াত্তা মালেক: ৩৮৯)
বিজ্ঞাপন
যারা যত্নসহকারে একাগ্রতার সঙ্গে সময়মতো শুদ্ধভাবে নামাজ আদায় করেন, তাদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, যা আল্লাহ তাআলা (বান্দার জন্য) ফরজ করেছেন, যে ব্যক্তি এ সালাতের জন্য ভালোভাবে অজু করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকু ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়াদা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন, আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। (মেশকাত: ৫৭০)
অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি নামাজ কায়েম করল, সে দ্বীন কায়েম করল। আর যে নামাজ ধ্বংস করল, সে দ্বীন ধ্বংস করল। (বায়হাকি: ২৫৫০)
তাই নামাজ চুরির ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। নামাজ পড়তে হবে পূর্ণ মনোযোগ ও বিনয়ের সঙ্গে। আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, এমন লোকও আছে যারা নামাজ আদায় করা সত্ত্বেও নামাজের রুকন ও শর্তগুলো সঠিকভাবে আদায় না করায় এবং নামাজে পরিপূর্ণ একাগ্রতা ও খুশু-খুজু না থাকায় তারা নামাজের পরিপূর্ণ সাওয়াব পায় না। বরং তারা ১০ ভাগের এক ভাগ, ৯ ভাগের এক ভাগ, ৮ ভাগের এক ভাগ, ৭ ভাগের এক ভাগ, ৬ ভাগের এক ভাগ, ৫ ভাগের এক ভাগ, ৪ ভাগের এক ভাগ, ৩ ভাগের এক ভাগ বা অর্ধাংশ সওয়াবপ্রাপ্ত হয়। (আবু দাউদ: ৭৯৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী নামাজের হক যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।