শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আছর নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

আছর নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সমান গুরুত্বপূর্ণ হলেও আছর নামাজের আলাদা গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে কোরআন ও হাদিসে। আছর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আছর নামে একটি সুরা রয়েছে। পবিত্র কোরআনে আছরের নামাজকে সালাত আল-ওসতা বা মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। কারণ আছর নামাজ ফজর-জোহর এবং মাগরিব-এশার মধ্যবর্তী নামাজ। 

আছর নামাজের গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সকল নামাজের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের (আছর) ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সঙ্গে দাঁড়াও।’ (সুরা বাকারা: ২৩৮) 


বিজ্ঞাপন


মুফাসসিরগণ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, আছরের নামাজকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কারণ হলো— সাধারণত এ সময় মানুষ কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে। ফলে নামাজ আদায়ে গাফিলতি হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে।

আরও পড়ুন: নামাজ না পড়া শিরক, না কুফরি?

আছর নামাজের ফজিলত
আছরের নামাজে রয়েছে অফুরন্ত কল্যাণ ও ফজিলত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ফেরেশতারা পালা বদল করে তোমাদের মাঝে আগমন করেন; একদল দিনে, একদল রাতে। আছর ও ফজরের নামাজে উভয় দল একত্র হয়। অতঃপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী দলটি উঠে যায়। তখন তাদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় রেখে এলে? অবশ্য তিনি নিজেই তাদের ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত। উত্তরে তারা বলে, আমরা তাদের নামাজে রেখে এসেছি এবং আমরা যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম তখনো তারা নামাজ আদায়রত অবস্থায় ছিল। (বুখারি: ৫৫৫)

রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে আছরের নামাজের এক সেজদা পায়, তাহলে সে যেন নামাজ পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্য উদিত হওয়ার আগে ফজরের নামাজের এক সেজদা পায়, তাহলে সে যেন নামাজ পূর্ণ করে নেয়। (বুখারি: ৫৫৬)

আছর নামাজের সময়
জোহরের সময় শেষ হলেই আছরের সময় শুরু হয়। অধিকাংশ ইমামের মতে কোনো বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ হওয়ার পর আছরের নামাজের সময় শুরু হয়। সুতরাং ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পরপর আছর নামাজ পড়া উত্তম। সূর্য হলদে হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সূর্য যখন হলদে রং হয় এবং শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে এসে যায় তখন মুনাফেকরা আছরের নামাজ পড়ে।’ (মুসলিম, মেশকাত, পৃ-৬০) সুতরাং সূর্যের আভা হলদে রং হয়ে আসার আগেই আছর পড়া উচিত। 

আরও পড়ুন: আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ পড়ার ফজিলত

আছর নামাজ না পড়ার শাস্তি
আছরের নামাজ না পড়ার শাস্তিও কঠিন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত- আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তির আছরের নামাজ ছুটে যায়, তা হলে যেন তার পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদ সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেল। (বুখারি: ৫৫২)। আবু মালিহ (রা.) বলেন, এক যুদ্ধে আমরা বুরাইদাহ (রা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। দিনটি ছিল মেঘলা। তাই বুরাইদাহ (রা.) বললেন, শিগগির আছরের নামাজ আদায় করে নাও। কারণ নবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আছরের নামাজ ছেড়ে দেয় তার আমল নষ্ট হয়ে যায়।’ (বুখারি: ৫৫৩)

আছরের চার রাকাত ‍সুন্নতের ফজিলত
আছরের সালাতের আগে ৪ রাকাত সুন্নত রয়েছে। এটি গায়রে মুয়াক্কাদা, তাই আদায় করা উত্তম। রাসুল (স.) নিজেও এই নামাজ আদায় করেছেন। আলি ইবনে আবু তালিব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) আছরের ফরজ নামাজের আগে চার রাকাত সুন্নত পড়তেন। (তিরমিজি: ৪২৯; সুনানে ইবনে মাজাহ: ১১৬১)

আরও পড়ুন: নফল ইবাদত কোনটার পর কোনটার বেশি সওয়াব?

অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ সেই ব্যক্তিদের ওপর রহম করুন, যারা আছরের সালাতের আগে চার রাকাত সুন্নত আদায় করে।’ (আবু দাউদ: ১২৭১; তিরমিজি: ৪৩০)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আছর নামাজের ব্যাপারে বেশি সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলা আমাদের নেক আমলগুলো কবুল করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর