শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

হাদিসের বর্ণনায় আল্লাহর সবচেয়ে শক্তিশালী সৃষ্টি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

হাদিসের বর্ণনায় আল্লাহর সবচেয়ে শক্তিশালী সৃষ্টি

আল্লাহ তাআলার প্রত্যেক সৃষ্টিই ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। পশু-পাখি, পোকা-মাকড়, গাছ-পালা, আগুন, মাটি, পানি, লোহা ইত্যাদি সবকিছুতেই আলাদা শক্তি রয়েছে। এসবের মধ্যে শক্তি দিয়েছেন মহান স্রষ্টা। যেমন লোহা আল্লাহর একটি শক্তিশালী সৃষ্টি। এর শক্তি সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আরো নাজিল করেছি লোহা, তাতে প্রচণ্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ আছে।’ (সুরা হাদিদ: ২৫)

এই আয়াতে মহান আল্লাহ লোহা সম্পর্কে বলছেন, ‘আমি নাজিল (অবতীর্ণ) করেছি’ অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরে থেকে নাজিল করেছি। সুতরাং এর উৎস মহাজাগতিক। বিজ্ঞানের কল্যাণে এই তথ্যটি আজ মানুষের কাছে পরিষ্কার। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে লোহা পৃথিবীতে সৃষ্ট কোনো পদার্থ নয়, লোহা এসেছে পৃথিবীর বাইরে থেকে। লোহা তৈরির জন্য প্রয়োজন কোটি ডিগ্রি তাপমাত্রা, যার জন্য প্রয়োজন সূর্যের চেয়েও বড় কোনো গলিত নক্ষত্রের বিস্ফোরণ।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: নবীজির দৃষ্টিতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ

২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে কেলভি ইন্সটিটিউট অব পার্টিক্যাল এস্ট্রোফিজিকস অ্যান্ড কসমোলজি (কেআইপিএসি) এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জির যৌথ গবেষণায় উঠে আসে, প্রায় ১০ বিলিয়ন বছর আগে ক্লাস্টার গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে ভয়ানক সংঘর্ষের ফলে লোহা সব গ্যালাক্সির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। জাপান-আমেরিকার যৌথ স্যাটেলাইট ‘সুজাকু’তে বসানো ৮৪ সেট এক্স-রে টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত ইমেজ বিশ্লেষণে লোহের উৎসের সন্ধান পান তারা। (গবেষণা বিষয়ক জার্নাল, আরডিওয়ার্ল্ড অনলাইন ডটকম)

এ তো গেল লোহার শক্তির কথা। এর চেয়েও কি শক্তিশালী সৃষ্টি আছে? দেখে নিই-এ সম্পর্কিত হাদিসের বর্ণনা। 

একদিন রাসুলুল্লাহ (স.) সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ করে বললেন, আল্লাহ তাআলা যখন দুনিয়া সৃষ্টি করেন, তখন তা দুলতে থাকে। তাই তিনি পর্বতমালা সৃষ্টি করে তাকে দুনিয়ার ওপর স্থাপন করেন। ফলে দুনিয়া শান্ত হয়। পর্বতমালার শক্ত কাঠামোতে ফেরেশতারা বিস্মিত হয়ে বলেন, হে প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে পর্বতমালা হতেও কঠিন কোনো কিছু আছে কি? আল্লাহ তাআলা বলেন, হ্যাঁ, লোহা।


বিজ্ঞাপন


ফেরেশতারা মহান আল্লাহর কাছে আরজ করলেন, হে রব! আপনার সৃষ্টির মধ্যে লোহার চেয়েও শক্তিশালী কোনো কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আগুন। আমরা ওপরের আলোচনায়ই জেনে এসেছি যে লোহা তৈরির জন্য কোটি ডিগ্রি তাপমাত্রার প্রয়োজন। আর তা হতে পারে আগুনের মাধ্যমে। দুনিয়ায়ও আমরা আগুনের মাধ্যমে লোহাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে পারি। যত বড় বড় দালানকোঠা, গাড়ি কিংবা মেশিন—সব কিছুতেই লোহার প্রয়োজন হয়। 

আরও পড়ুন: কঠিন ফিতনার দিনে ঈমান রক্ষার আমল

এরপর ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করলেন, হে প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আগুন থেকেও শক্তিমান ও কঠিন অন্য কিছু আছে কি? উত্তরে আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, পানি। আমরা জানি, পানিকে আল্লাহ তাআলা এতটা শক্তিশালী করেছেন যে সেই আগুন শক্তিশালী সৃষ্টিকে মহান আল্লাহর হুকুমে নিভিয়ে দেয়। এরপর ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করলেন, হে প্রভু! আপনার সৃষ্টির মধ্যে এমন কিছু কি আছে, যা পানির চেয়েও বেশি শক্তিশালী? উত্তরে মহান আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ, বাতাস। আমরা জানি, বাতাসকে মহান আল্লাহ এতটাই শক্তিশালী বানিয়েছেন যে সে সাগরের পানিতে ঢেউয়ের সৃষ্টি করে। কখনো মহান আল্লাহর হুকুমে সুনামির মাধ্যমে সাগরের পানিকে তুলে নিয়ে কোনো জনপদকে গ্রাস করে নিতে পারে। অবশেষে ফেরেশতারা বললেন, হে প্রতিপালক! বাতাস থেকেও বেশি কঠিন ও শক্তিশালী আপনার সৃষ্টির মধ্যে কিছু আছে কি? আল্লাহ তাআলা বললেন, হ্যাঁ, সেই আদমসন্তান, যে ডান হাতে দান-খয়রাত করলে তার বাঁ হাতের কাছে অজানা থাকে। (তিরমিজি: ৩৩৬৯, আবু ঈসা বলেন, হাদিসটি গারিব।)

এই হাদিসে মহান আল্লাহ সেই আদমসন্তানকে তাঁর সৃষ্ট শক্তিশালী সৃষ্টি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যে গোপনে আল্লাহর রাস্তায় দান করে। এর জন্য প্রয়োজন হয় ঈমানের শক্তির, যে শক্তি মহান আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মাঝে সেতু স্থাপন করে। এর চেয়ে বড় কোনো শক্তি মহান আল্লাহ তাঁর আর কোনো সৃষ্টিকে দেননি।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর