আদাব শব্দটি মূলত দক্ষিণ এশীয় অভিবাদন। বিশেষ করে হিন্দু সংস্কৃতিতে এর রেওয়াজ রয়েছে। শব্দটি ইন্দো-ফারসি সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। অর্থ- সম্মান, শ্রদ্ধা। আরবিতেও এই শব্দের ব্যবহার আছে। তখন এর অর্থ হবে- বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা, সভ্যতা, কৃষ্টি, সুশিক্ষা, নৈতিকতা, মানবিকতা, শোভনীয়তা ও শিষ্টাচার।
ইসলামে শিষ্টাচার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুসলিম জাতি তখনই আলাদা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হবে যখন ইসলামি শিষ্টাচারকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও পার্থিব জীবনের সকল দিক ও বিভাগে ফুটিয়ে তুলতে পারবে। ভাইয়ের সঙ্গে কিংবা পরিচিত অমুসলিমের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মুসলিমের সম্ভাষণ ও আচরণ কীরূপ হবে সেই নির্দেশনা রয়েছে ইসলামে। শিষ্টাচারের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই উত্তম চরিত্র, ভালো ব্যবহার ও পরিমিত ব্যয় বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা নবুয়তের পঁচিশ ভাগের এক ভাগ।’ (আবু দাউদ: ৪৭৭৬; মেশকাত: ৫০৬০; সহিহুল জামে: ১৯৯২-৯৩)
বিজ্ঞাপন
ইসলামে সর্বোত্তম ও একমাত্র অভিবাদন হলো ‘সালাম’। এর অর্থ শান্তি। এটি সবচেয়ে সম্মানজনক, অভিনন্দনজ্ঞাপক, পরিপূর্ণ ইসলামি অভিবাদন। সাক্ষাতে সালাম বিনিময় মুসলমানের ওপর মুসলমানের হক। (মুসলিম: ৪০২৩)
আরও পড়ুন: আত্মীয় স্বজনের হক আদায়ে যা বলেছে ইসলাম
সালামের মাধ্যমে মূলত আল্লাহর পক্ষ হতে মুসলিম ভাইয়ের ওপর শান্তি বর্ষণের দোয়া করা হয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়। কিন্তু অমুসলিম তো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর সঠিক বিশ্বাস রাখে না। তাই তার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা যাবে না। সুতরাং সালাম শুধু এক মুসলমান অপর মুসলমানকেই দিতে পারবে। অমুসলিম কোনো ভাইকে দিতে পারবে না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- لا تبدءوا اليهود ولا النصارى بالسلام ‘তোমরা ইহুদি ও খৃষ্টানদের প্রথমে সালাম দেবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ২১৬৭)
যদি কোনো অমুসলিম আগে সালাম দেয়, তাহলে তার জবাবে ‘ওয়া আলাইকুম’ বলবে। এ প্রসঙ্গে হাদিসটি হলো— ﺇﺫﺍ ﺳﻠﻢ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏﻓﻘﻮﻟﻮﺍ ﻭﻋﻠﻴﻜﻢ ‘আহলে কিতাবগণ তোমাদের সালাম দিলে, তার উত্তরে তোমরা শুধু ‘ওয়া আলাইকুম’ বলবে।’ (বুখারি: ৬২৫৮ মুসলিম: ২১৬৭)
বিজ্ঞাপন
তবে শিষ্টাচারমূলক সম্ভাষণ করা যাবে। অর্থাৎ সৌজন্য প্রদর্শনস্বরূপ ‘আদাব, গুড মর্নিং, গুড ইভিনিং অথবা এই জাতীয় যেকোনো শব্দ বলা যাবে। হাতের ইশারায় কুশল বিনিময়ও করা যাবে। (কিতাবুল ফতোয়া)। তবে কোনভাবেই ‘নমস্কার’ বা ‘নমস্তে’ বলা যাবে না। (ফতোয়ায়ে রহিমিয়া: ৬/১২৬ কিফায়াতুল মুফতি: ৯/১০৬)
আরও পড়ুন: যে কারণে অমুসলিমরা নবীজির কাছে ঋণী
কেননা, নমস্কার’ বা ‘নমস্তে’ শব্দটি হিন্দুদের বিশেষ সম্ভাষণবাচক শব্দ। নমস্কার করার অর্থ আমি আপনার প্রতি মাথা ঝুঁকালাম। আপনি কবুল করুন। অনুরূপভাবে নমস্তে বলার অর্থ আমি আপনার প্রতি মাথা ঝুঁকালাম। এমনভাবে কারো প্রতি সম্মানার্থে মাথা কিংবা পিঠ ঝুঁকানো যাবে না। (জাদুল মাআদ: ২/৩৮৮; মাজমুআ ফতোয়ায়ে উসাইমিন: ৩/৩৩; আল-মওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ: ২৫/১৬৮)
সুতরাং এ জাতীয় শব্দের মাধ্যমে কোনো হিন্দুকে সম্ভাষণ করা যাবে না। (আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল: ১/৫৪)
অমুসলিমকে সালাম দেওয়া ছাড়া উপায় না থাকলে বা প্রয়োজনে দিতে হলে তখন ‘আসসালামু আলা মানিত্তাবাআল হুদা’ বলবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বাক্যটি অমুসলিম শাসক ও নেতাদের কাছে চিঠি লেখার সময় ব্যবহার করতেন। (বুখারি: ৭, মেশকাত: ৩৯২৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সালামের নিয়ম-কানুনসহ শরিয়তের যাবতীয় বিধি-বিধান যথাযথ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

